মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বাড়ছে শিঘ্রই

::
প্রকাশ: ২ years ago
প্রতীকী ছবি

পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছরই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর চলতি বছরের বাজেটে এই ভাতা ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়। গত বছরের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হয়। এই ভাতা আরও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) ফেনীতে জেলা ও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডারদের সঙ্গে মত বিনিময়ে অংশ নেন তিনি। এসময় তিনি এই কথা জানান।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করেছি, তা প্রক্রিয়াধীন। আশা রাখছি অল্প সময়ের মধ্যে ভাতা বাড়ানো হবে।

এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালীরা মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গা-জমি দখল করেছেন। এ বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, খুব শিগগির মুক্তিযোদ্ধাদের সব সম্পদ দখলমুক্ত করা হবে।

মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, সারাদেশে বীর নিবাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবর নির্মাণ নিয়ে অনিয়ম চলছে। এ প্রসঙ্গে শাজাহান খান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কবর নির্মাণ ও বীর নিবাস নিয়ে অনিয়ম সহ্য করা হবে না। আমরা খুব শিগগির এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।

শাজাহান খান আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন তা আর কোনো সরকারের আমলে পাননি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ভাতা-সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াবে।

জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা হোসেন, সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোতালেবসহ উপজেলা কমান্ডাররা।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান, পুলিশ সুপার জাকির হাসান, জেলা ও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডাররা।

দেশে ২ লাখ ৫ হাজার ১৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবার বর্তমানে ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন। আর, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৩২-এ উন্নীত করা হয়েছে। তাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পাশাপাশি দুটি উৎসব ভাতা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস ভাতা এবং সবার জন্য বৈশাখী ভাতাও চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ভাতা বহুগুণ বাড়িয়ে মাসিক ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আগে তিন মাস অন্তর জেলা, উপজেলা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দেয়া হতো। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তিত ৩০০ টাকার দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বর্তমানে সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছে।

পিএমও ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুদ্ধাহত, খেতাবপ্রাপ্ত ও শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ৬ হাজার ১৭৪ জন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পঙ্গুত্বের ধরন ভেদে ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী ভাতা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ৫ হাজার ৮১৬ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩০ হাজার, মৃত যুদ্ধাহত পরিবারকে মাসিক ২৫ হাজার, সাত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার, বীর উত্তম খেতাবধারীরা মাসিক ২৫ হাজার, বীর বিক্রম খেতাবধারীরা মাসিক ২০ হাজার ও বীর প্রতীক খেতাবধারীরা মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন।

সম্মানী ভাতার পাশাপাশি শহীদ, যুদ্ধাহত ও সাত বীরশ্রেষ্ঠ এবং তারামন বিবিসহ বীর প্রতীক হিসেবে মোট ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রেশনসামগ্রীও পান। সামরিক-অসামরিক নির্বিশেষে সব যুদ্ধাহত, শহীদ ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কল্যাণ ট্রাস্টের আইন পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোট ১১ হাজার ৯৯৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে।