মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ধার সেলিমের পেটে অস্ত্রোপচারের দাগ

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৫ মাস আগে
মিল্টন সমাদ্দারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ থেকে উদ্ধার করা হয় সেলিম মিয়াকে।

নিজের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দিয়ে কিডনি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ আগে থেকে রয়েছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের সত্যতা মিলতে শুরু করেছে। তার ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ থেকে ফেরত আনা প্রতিবন্ধী সেলিম মিয়ার (৪০) পেটে অস্ত্রপোচারের দাগ পাওয়া গেছে।

পরিবার বলছে, তার কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।

সেলিম মিয়া ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের বৃপাচাশি গ্রামের হাসিম উদ্দিনের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে আনা হয়।

শনিবার ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় সেলিমের ছোট বোন ফারজানা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে সেলিম সবার বড়। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। বছরখানেক আগে সেলিমের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

এই সমস্যার কারণে তাকে মাঝেমধ্যে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। শিকল খুলে সেলিম বিভিন্ন জায়গায় চলে গেলেও আবার বাড়ি ফিরে আসতেন। প্রায় ছয় মাস আগে এক সন্ধ্যায় সেলিম মিয়া নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেলিমের স্ত্রী ফাতেমা। তার দাবি, নিখোঁজের পর স্বামীকে অনেক খুঁজেও পাননি তারা।

মিল্টন সমাদ্দারের খবর টেলিভিশনে দেখে সেখানে সন্ধান চালায়। পরে সেলিমের ছোট ভাই মাহিন গিয়ে মিল্টনের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এ তার খোঁজ পায়। তাকে গত বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

সেলিম আগে মানসিকভাবে অসুস্থ থাকলেও শারীরিক কোনো সমস্যায় ছিলেন না। তবে তাকে উদ্ধারের পর পেটে অপারেশনের দাগ দেখতে পাওয়া গেছে। পরিবারের দাবি, মিল্টন সমাদ্দার সেলিমের অঙ্গ বিক্রি করে দিয়েছেন।

ছোট ভাই মাহিন বলেন, ‘আগে ভাই শুধু পাগলামি করত। এখন নিস্তেজ হয়ে গেছে। কিছু খাইতে চায় না। মাঝেমধ্যে বমি করে এবং সারাক্ষণ ছটফট করে। আগে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখলেও এখন তা লাগে না।’

মা রাবিয়া আক্তার (৭০) ছেলের এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেড়া ভালাই আছিন, খালি মাথায় একটু সমস্যা থাহনে বাড়িতেই ঘরে আটকাইয়া রাহা অইতো। ছেড়াডার সর্বনাশ কইর‌্যালছে। পেড-পিট (পেট-পিঠ) কাইট্যা কিছু তইছে না। ঢাহার এক মিল্টুইন্যা বুলে কিডনি খুইল্যা নিছে। অহন বাঁচাইয়াম কিবায়।’

বাড়িতে গিয়ে সেলিমকে একটি চেয়ারে বসা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। তাকে দেখার জন্য গ্রামের লোকজন ভিড় করেছেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। কিছু জানতে চাইলেও কোনো উত্তর দিচ্ছেন না সেলিম। পরনের শার্ট খুলে দেখা যায়, সেলিমের পেটের ডান পাশে সার্জারির দাগ রয়েছে।

স্ত্রী ফাতেমা বলেন, আমার স্বামীর শরীরে কোনো দাগ ছিল না। এখন এটা কিসের দাগ, তা বুঝতে পারছি না। খবরে দেখলাম, মিল্টন সমাদ্দার মানুষের অঙ্গ বিক্রি করে দিতেন। আমরা তাকে (সেলিমের) ডাক্তার দেখিয়ে জানার চেষ্টা করব আসলে শরীরে কোনো অপারেশন করা হয়েছে কি না। এরপর ব্যবস্থা নেব।

১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এরপর তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবদ করা হয়। সেখানে মিল্টন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে দাবি করেছে ডিবি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ওঠা অধিকাংশ অভিযোগই স্বীকার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি ভুয়া ডেথ সার্টিফিকেট (মৃত্যু সনদ) তৈরি করে ডাক্তারের সই জাল করে নিজেই সব কিছু লিখে দিতেন। এ ছাড়া তার আশ্রমে কোনো চিকিৎসক ছিল না। অপারেশন থিয়েটারে তিনি নিজেই ব্লেড-ছুরি দিয়ে কাটাকাটি করতেন। আর আশ্রমে আসা অধিকাংশ মানুষজনই প্যারালাইজড কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় অস্বাভাবিক আচরণ করতেন। তখন মিল্টন তাদের পিটিয়ে নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন।