মাসজিদুল আকসার গুরুত্ব ও ফজিলত

:: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

গোটা পৃথিবীর মুসলমানদের হৃদয়ের স্পন্দন পবিত্র আল আকসা। পবিত্র কোরআনে আল আকসার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিককে আমি বরকতময় করেছি যেন তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই।

’ (সুরা বনি ইসরায়েল : ১)। মাসজিদুল আকসার কথা পবিত্র কোরআনের আয়াতে উল্লেখ থাকাই এর গুরুত্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
মাসজিদুল আকসা পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম মসজিদ। পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর আল আকসা নির্মিত হয়।

আবুজর গিফারী (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম জমিনে কোন মসজিদ প্রথম তৈরি হয়েছিল? তিনি বললেন, ‘মসজিদে হারাম’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, ‘মসজিদে আকসা’ আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করি এ দুটোর মধ্যে ব্যবধান কত? তিনি বললেন ৪০ বছর। ’ বুখারি মুসলিম।
মাসজিদুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ ১৭ মাস এদিকে ফিরে নামাজ পড়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় থাকাকালীন পবিত্র কাবা তার সামনে থাকাবস্থায় তিনি বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেন। মদিনায় হিজরতের পর সুদীর্ঘ ১৬ মাস সেদিকে ফিরেই নামাজ আদায় করেন। অতঃপর কাবার দিকে মুসলমানদের কিবলা পরিবর্তিত হয়। ’ মুসনাদে আহমদ।

মাসজিদুল আকসা পৃথিবীর তৃতীয় মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ। সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মসজিদ হলো মাসজিদুল হারাম, তারপর মাসজিদুল নববী (সা.), তারপর মাসজিদুল আকসা। কাজের স্থান-কালের ভিন্নতায় কাজের মর্যাদা ও মান বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তেমনি মাসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় করলেও সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে এক রাকাত নামাজ পড়লে ৫০০ রাকাত নামাজের সমান সওয়াব দেওয়া হয়। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বাইতুল মাকদিসে এক নামাজ ৫০০ নামাজের সমান। ’ মাজমাউয যাওয়াইদ। অন্য হাদিসে এসেছে, মাসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় করলে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সুলায়মান ইবন দাউদ (আ.) যখন বায়তুল মাকদিস তৈরির কাজ করেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয়ে প্রার্থনা করেন : এমন সুবিচার যা আল্লাহর হুকুমের অনুরূপ, এমন রাজত্ব যা তাঁর পরে আর কাউকে দেওয়া হবে না, আর যে ব্যক্তি বায়তুল মাকদিসে কেবলমাত্র সালাত আদায় করার জন্য আসবে, সে তার গুনাহ থেকে সদ্যোজাত সন্তানের মতো নিষ্পাপ অবস্থায় বেরিয়ে আসবে। এরপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথম দুটো তাদের দুজনকে দেওয়া হয়েছে, আর আমি আশা করি তৃতীয়টি আমাকে দান করা হবে। ইবনে মাজাহ। বিশেষ সওয়াব পাওয়ার আশায় সাধারণত বিশেষ কোনো মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য মুসাফির হওয়ার বিধান নেই ইসলামে। কিন্তু তিনটি মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য মুসাফির হওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদুল আকসার উদ্দেশে সফরকে বিশেষ পুণ্যময় কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো মসজিদে বিশেষ সওয়াবের উদ্দেশ্যে পরিভ্রমণ কর না। আর সে তিনটি মসজিদ হলো মসজিদুল হারাম, আমার এ মসজিদ (মসজিদে নববী) ও মসজিদুল আকসা।’ সহিহ বুখারি।

লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক ও কলামিস্ট।