বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে মালয়েশিয়া। পাশাপাশি কর্মী পাঠাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান চুক্তিও সংশোধন করা হবে।
ঢাকা সফররত মালয়েশিয়ার নবনিযুক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইলের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ একথা জানিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে শনিবার ঢাকা এসেছেন সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। তার দুদিনের ঢাকা সফরের চলমান শ্রমবাজার সংকট সমাধানসহ মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধতায় বড় সুযোগ হিসেবেই দেখছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা।
সফরের দ্বিতীয় দিনে মালয় মন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধতার পাশাপাশি কর্মী পাঠাতে চলমান সংকট নিরসনে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দুদেশের মধ্যে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় এখন নতুন সরকার। তাই দেশটির আগের সরকারের সঙ্গে আমাদের যা কিছু কথা হয়েছে, তাতে এখন বিরাট একটা পরিবর্তন আসবে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ পরিবর্তন করার কথা এসেছে জানিয়ে ইমরান আহমদ বলেন, ‘প্রয়োজন হলে আরও কিছু পরিবর্তন আসবে। অথবা যাতে আরও বেশি সহজ হয়ে যায়।’
‘তবে উনি (মালয় মন্ত্রী) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও দিতে চাইছেন না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, উনি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। ফলে আমরা ভালো কিছুই পাবো।’
চলতি মাসেই দুই দেশ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বসবে জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এসব বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
‘সিকিউরিটি গার্ড’ নিতে আগ্রহী মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তায় বাংলাদেশ থেকে ‘সিকিউরিটি গার্ড’ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দুই দেশের মন্ত্রীর বৈঠকে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তায় বাংলাদেশ থেকে পেশাদার ও প্রশিক্ষিত আনসারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের নিয়োগের বিষয় তুলে ধরা হয়। এসময় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ‘সিকিউরিটি গার্ড’ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, শ্রমিক সম্পর্কিত বিষয় এবং দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা, জ্ঞান ও তথ্য বিনিময় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া দুই মন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মালয়েশিয়া প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে বংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়- তা উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ হতে মিয়ানমারে থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মালয়েশিয়া সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়। জবাবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের দেশেও রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে এবং আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে তাদের দেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়া জোরালো ভূমিকা পালন করবে।’
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে মালয়েশিয়ায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার অনুরোধ করা হলে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হন। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসমাইল বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ দুই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও তথ্য বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। এতে আমরা একমত।’
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজির আহমেদ, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার, মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার ও পুলিশের বিশেষ শাখা- এসবির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম।