মালদ্বীপে অপহরণের ৫ দিন পর প্রবাসী বাংলাদেশিকে উদ্ধার

:: মোহাম্মদ মাহামুদুল, মালদ্বীপ প্রতিনিধি ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে
প্রতীকী ছবি

মালদ্বীপে অপহরণের পাঁচ দিন পর এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি মালদ্বীপে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে গাড়ি চালানো এবং ভাঙারি ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। অপহরণকারীরা অপহৃতের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বাংলাদেশে তার পরিবারের কাছে ৮ লাখ টাকা দাবি করে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

অপহৃত জলিল মিয়া (৩৫) টাঙ্গাইলের কালিয়াম পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জানিয়েছেন, মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেছে মালদ্বীপ পুলিশ।

জলিল মিয়াকে অপহরণের বিষয়ে মালদ্বীপের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। অপহরণ চক্রের মূল হোতা আরিফসহ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে, মালদ্বীপ পুলিশ নিশ্চিত করেছে, অপহরণের সঙ্গে জড়িতরা প্রবাসী বাংলাদেশি।

জলিল মিয়ার স্ত্রী বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে অবস্থানরত আত্মীয় রাকিবকে ফোন দিয়ে জানান যে, তার স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। রাকিব তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মালদ্বীপ পুলিশকে অবহিত করে রিপোর্ট দায়ের করেন। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই জলিলকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। জলিল মিয়াকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ থেকে তার পরিবার বিকাশে অপহরকারীদের কাছে ৫০ হাজার টাকা পাঠায়। অপহরণকারীরা জলির মিয়ার পরিচিত মালদ্বীপ প্রবাসী রুবেলের কাছ থেকেও ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

রাকিব বলেছেন, গত ৩ অক্টোবর জলিলকে মালদ্বীপের তিলাফুশী আইল্যান্ড থেকে এনে রাজধানী মালেতে আটকে রেখে তার ফোন থেকে কল করে টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। কিন্তু, আমি জলিল মিয়া কোথায় আছে, জানতে চাইলে অপরপ্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়। তারপর আমি বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মালদ্বীপ পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ৫ দিন পর তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। জলিল মিয়াকে তার কোম্পানির সহযোগিতায় দেশে পাঠানো হয়েছে। অপহরণের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরা জড়িত।

অপহরণকারীরা ৬ লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিয়েছে বলে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন রুবেল। তিনি জানিয়েছেন, তাকে জলিল মিয়ার ফোন নাম্বার থেকে কল করে জানানো হয়, জলিল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তার চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে। ৬ লাখ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠান তিনি।

এ বিষয়ে মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো. সোহেল পারভেজ বলেছেন, জলিল মিয়াকে অপহরণের বিষয়টি জানার পরপরই আমরা মালদ্বীপ পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে যুক্ত না হওয়ার জন্য মালদ্বীপে বসবাসরত সব প্রবাসীকে সতর্ক করছি। এতে মালদ্বীপের কঠোর আইনের মুখোমুখি হওয়াসহ প্রবাসে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়।

জলিল মিয়ার বড় মেয়ে জুলি আক্তার বলেন, আমার আব্বু ২০১৬ সালে মালদ্বীপে গিয়েছিলেন। তিনি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আব্বুর সাথে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মো. আরিফ মিয়ার পরিচয় হয়। আরিফের বাবার নাম আবদুল জলিল। পরিচয়ের পর বন্ধুত্ব হয়। তার পর ২ লাখ টাকা দার নেন আরিফ। ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ হয়। এর পর আব্বুকে এক রাতে কল দিয়ে রাজধানী মালেতে আসতে বলে আরিফ। মালেতে পৌঁছানোমাত্রই আব্বুকে কৌশলে একটি রুমে নিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে। সেখানে লোক ছিল ছয়জন। আরিফ ছাড়া অন্যদের কাউকে আব্বু কোনোদিন দেখেননি। সারা রাত হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আব্বুকে আটকে রাখা হয়। এরপর থেকে আব্বুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না আমাদের। দুই দিন পর আব্বুর নাম্বার থেকে কল করে ৮ লাখ টাকা দিতে বলে। না দিলে আব্বুকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। আমরা টাকা দিতে সম্মত হলে তারা দুটি বিকাশ নাম্বার পাঠায়—০১৬৩০৪০১২৫৬ এবং ০১৬১৯২৭৮৬৩৪। এ দুই নাম্বারে ৫০ হাজার টাকা পাঠাই। বাকিটা আব্বুর আরেক বন্ধুর কাছ থেকে নেবে বলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর পর আমরা সখীপুর থানায় গিয়ে জিডি করতে চাইলে ডিউটি অফিসার এনামুল জানান, তিনি এই কেস নিতে পারবেন না। কারণ, এটা দেশের বাইরে। তারপর আমরা যে নাম্বারে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলাম, ওই নাম্বারের বিরুদ্ধে জিডি করি।

জলিল মিয়ার ছোট মেয়ে যুথি আক্তার জুঁই বলেন, আমি এবং আমার পরিবার এখনো বিপদমুক্ত নই। আব্বু চলে আসার পরও অপরাধীরা বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল করে হুমকি দিচ্ছে। আমি আমার আব্বুর সাথে যা হয়েছে, তার ন্যায়বিচার চাই। এ ধরনের অমানবিক কাজ যেন আর কোনো প্রবাসীর সাথে না হয়। আরিফ নামের ছেলেটিকে আইনের আওতায় আনা হোক।