স্পোর্টস ডেস্ক:
২০২৩ সালের মার্চ মাসের যে কোন দিন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ফুটবল বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য আর্জেন্টিনার সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আগামী বছর রাজধানী ঢাকায় দূতাবাস খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো আন্দ্রেস ক্যাফিয়েরো আমাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ঢাকায় মিশন খুলতে তিনি মার্চে ঢাকা সফরে আসবেন। তখন পাল্টা চিঠিতে আমি তাকে জানিয়েছি, তুমি আসবা ভালো কথা, তবে অবশ্যই মেসিকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবা।
মোমেন বলেন, ঢাকায় মিশন খুললে দুই দেশের সম্পর্ক, মানুষে মানুষে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূত ব্রাজিলে যিনি (সাদিয়া ফয়জুন্নেসা), উনার কাছ থেকে আজ একটা মেইল পেয়েছি। আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্চে বাংলাদেশে আসবেন। তখন দূতাবাস খোলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এটা ভালো সংবাদ। আমি এটা জানার পর আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, আপনি দেখবেন, সঙ্গে করে মেসি এবং তার দলকে নিয়ে আসা যায় কিনা। আমরা তাদের আতিথেয়তা দেব। দেখা যাক, আসে কিনা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালে বাংলাদেশের মানুষদের উচ্ছ্বাস আর্জেন্টিনা সরকারের নজরে এসেছে। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টুইট করে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্জেন্টাইন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে একটা চিঠি দেন। তার প্রতি উত্তরে বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি টুইট করেছেন। খুব শিগগিরই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে চান এবং দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করতে চান। তিনিও (আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি) বলেছেন, তারা দূতাবাস খোলার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আগ্রহী।
এদিকে, ২০২৩ সালে রাজধানী ঢাকায় দূতাবাস খোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। তিনি একই সঙ্গে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও চিলিতেও কূটনৈতিক দূতের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আলবার্তো ফার্নান্দেজ অভিমত প্রকাশ করেছেন, ২০২৩ সালেই ঢাকায় আর্জেন্টাইন দূতাবাস স্থাপনের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণ ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
ফিফা বিশ্বকাপ-২০২২ এর শিরোপা জয়ের পরপরই দুই দেশের সরকারপ্রধানের শুভেচ্ছাবার্তা বিনিময় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফসল। এটি দক্ষিণ আমেরিকায় বাংলাদেশের একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য। আর্জেন্টাইন ফুটবল দলের বিশ্বকাপ জয়ে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণোচ্ছ্বল উদযাপনে আর্জেন্টিনার জনগণ ও রাষ্ট্রপতি অভিভূত হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি আলবার্তো বলেছেন, খেলাধুলা মানুষের মধ্যে বন্ধন ও সম্প্রীতি বৃদ্ধির একটি অর্থবহ ও শক্তিশালী মাধ্যম।
ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালু হলে দক্ষিণ আমেরিকায় বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সয়াবিন উৎপাদক দেশ আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন তেল আমদানি সহজতর হবে। সেই সঙ্গে আর্জেন্টিনার বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশ বেগবান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ঢাকাতে আর্জেন্টিনার দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়াস অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন তারা।
এর আগে ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি ও জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।