বহু বিতর্কের মাঝে সংসদ ভোটের আগেই, ভারতে চালু হয়ে যাচ্ছে ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন’ (সিএএ)। তথ্য মতে, মার্চে শুরু থেকেই সিএএ কার্যকর হয়ে যাবে গোটা ভারতে।
সিএএ বাস্তবায়নের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় একটি পোর্টাল বানিয়েছে। কারণ, গোটা প্রক্রিয়াই হবে অনলাইনের মাধ্যমে। যারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন তাদের ওই পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। অর্থাৎ কোনও শরণার্থী ভারতে প্রবেশের পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানালে তা ওই সরকারি পোর্টালের মাধ্যমে করতে হবে। কোথা থেকে এসেছে, কবে ভারতে প্রবেশ করেছে, কোথায় থাকছে, তা জানাতে হবে এই পোর্টালে। জানা যাচ্ছে, ইতেমধ্যে তার ‘ড্রাই রান’ও (ট্রায়াল) শুরু হয়ে গেছে।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভারতে সংসদ ভোটের (লোকসভা নির্বাচন) তফসিল ঘোষণা হতে চলেছে। আর সেই সাঙ্গে দেশজুড়ে চালু হয়ে যাবে নির্বাচন আচরণবিধি। ফলে তার আগেই সিএএ নিয়ে বিধি প্রণয়নের (রুল ফ্রেম) বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিতে চায় ভারত সরকার। যে কারণেই এত তৎপরতা।
২০১৯ সালে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে সিএএ -এর বিল পাস করিয়েছিল কেন্দ্রের মোদি সরকার। ওই আইনানুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম নাগরিক (হিন্দু শিখ খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ) সংশ্লিষ্ট দেশের ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত সরকার। এ নিয়ে দেশটির সংসদের দু’কক্ষে(লোকসভা ও রাজ্যসভা) পাস হওয়ার পরে ভারতের রাষ্ট্রপতিও অনুমোদন দিয়েছিলেন সিএএ বিলে।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত সিএএ কার্যকর বিষয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। সূত্রের খবর, মার্চেই চালু হয়ে যাবে। অপর এক তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এ পর্যন্ত যে সমস্ত উদ্বাস্তুরা ভারতে থাকার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসার জন্য আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে পাকিস্তান থেকে আসা নাগরিকের সংখ্যাই বেশি। তার পরেই আছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশ প্রায় নেই বললেই চলে।
বস্তুত ভারতের সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাস হওয়ার পর থেকে বিরোধী দলগুলো এর সমালোচনা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-এনআরসি বিরোধিতায় প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন। কিন্তু, অবশেষে বিরোধীরা সিএএ আটকাতে পারলো না।
তবে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংশোধন আইনের আওতায় যে নিয়মনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে দেশটির বর্তমান নাগরিকদের, নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কোনও অধিকার দেওয়া হয়নি। সে যে ধর্মেরই হোক না কেন।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহও জানিয়েছেন যে, সংসদ ভোটের আগেই নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বাস্তবায়িত হবে। তার মাধ্যমে শরণার্থীদের দ্রুত নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ সংসদ নির্বাচন দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাবে। তারপর বর্তমান সরকারের ভূমিকা অনেকটা কেয়ারটেকারের মতো হয়ে যাবে। সম্ভবত সেই কারণে মার্চের গোড়াতেই সংশোধন আইনের অধীনে বিধি নিয়ম ঘোষণা করে দেওয়া হবে।