মার্কিন নির্বাচনের ওপর ঝুলছে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ভাগ্য?

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ২ মাস আগে

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। এছাড়া দলের নেতাদের মধ্যে অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন।

কেউ কেউ ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। টানা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে—দলটি কি আবার রাজনীতিতে ফিরতে পারবে?

কিভাবে ফিরবে, কোন কৌশলে ফিরে আসতে পারে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও পরিষ্কার নয়।

তবে অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনা এখন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার ধারণা, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কিছু সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে অথবা হতাশার বার্তা নিয়ে আসতে পারে। আগামী নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যেখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ডেমোক্রেটিক পার্টির কমালা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্যও বিশেষ বার্তা বহন করতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের বৈরিতা বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে, যা আওয়ামী লীগ ভালোভাবে নেয়নি। ফলে, তারা ডেমোক্রেটদের প্রতি হতাশ। অন্যদিকে, রিপাবলিকানদের বিজয়ী হলে আওয়ামী লীগের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্রেট শিবির জয় পেলে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন হবে না এবং ভারত সরকারের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান সম্পর্ক অপরিবর্তিত থাকবে। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হলে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন অবস্থানের হেরফের হতে পারে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নতুন বাতাবরণ তৈরি হতে পারে। সুযোগ তৈরি হতে পারে আওয়ামী লীগের জন্যও। যদিও কূটনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন, নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হলেও যুক্তরাষ্ট্রর নীতি পরিবর্তন খুব একটা হয় না।

এসব দিক চিন্তা করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদেরও ওই দেশের নির্বাচন নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর কায়সারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার টেলিফোন আলাপে এমন একটি ইঙ্গিত মিলেছিল। যদিও ওই টেলিফোন আলাপ প্রকাশ হওয়ার পর তানভীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই ফোনালাপে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ই নভেম্বরের আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থানের খুব একটা হেরফের হচ্ছে না। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় দলীয় নির্দেশনা আসতে পারে। পরিবর্তন আসতে পারে দলের নেতৃত্বেও।

এদিকে, শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। তার কূটনৈতিক পাসপোর্টে নির্ধারিত ৪৫ দিনের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে, যা ভারত সরকারের জন্যও একটি চাপের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে খবর ছড়িয়েছে যে তিনি ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট পেয়েছেন, যা তাকে তৃতীয় কোনো দেশে ভ্রমণের সুযোগ দেবে। তবে ভারত বা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশে গণহত্যার দায়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে, যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শিগগিরই শুরু হতে পারে। এই মামলায় পরোয়ানা জারি হলে বাংলাদেশ তাকে ফেরত চাইতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পর পরিস্থিতির আরও স্পষ্টতা আসবে এবং দলীয় অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।