বিশ্ব পর্যটনে নতুন করে বদলের আভাস দেখা যাচ্ছে। এখন আর চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীরাও আগের মতো ভিসা ছাড়া ইউরোপে ঘুরতে যেতে পারবেন না। প্রয়োজন হবে একটি আলাদা অনুমোদনের।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য নয়, এমন দেশগুলোর জন্য ইউরোপের দেশগুলোতে ঘুরতে যাবার বিষয়ে ২০২৪ সাল থেকেই একটি ‘ট্রাভেল অথোরাইজেশন সিস্টেম’ চালু করা হচ্ছে।
এটিকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘ইটিআইএস’। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই নতুন সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করছে সন্ত্রাসবাদের ভয় ও এবং সীমান্ত সুরক্ষার বাড়তি চাহিদা। পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশনে অন্তুর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ইইউ যেকোনো বিপদ বা হুমকিকে আগে থেকেই চিহ্নিত করতে পারবে, এ আশা থেকেই এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে কোনো দেশের পর্যটকেরই এ বিষয়ে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই, কেন না বিগত রেকর্ডগুলো স্বচ্ছ থাকলে এটি খুবই সহজ প্রক্রিয়া।
ইটিআইএএস চালুর প্রক্রিয়া
ইটিআইএস তথা ‘ইউরোপিয়ান ট্রাভেল ইনফর্মেশন অ্যান্ড অথোরাইজেশন’ কোনো ভিসা নয়, বরং ইউরোপিয়ান ভিসা নেই– এমন পর্যটকদের জন্য একটি স্বীকৃতিপত্র। অনলাইন থেকেই ‘ইটিআইএএস ডট কম’ ওয়েবসাইট থেকে মাত্র ১০ মিনিটের মাঝে এই আবেদন করা যাবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে অন্তত ৩ মাস মেয়াদ আছে এমন একটি পাসপোর্ট, ই-মেইল অ্যাড্রেস, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য। ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়স্করা এই প্রক্রিয়ার আওতাধীন।
আবেদনপত্রের জন্য ৭ ইউরো (প্রায় ৮ মার্কিন ডলার) বাদে এ জন্য আর কোনো মূল্য পরিশোধ করতে হবে না। আগ্রহী পর্যটককে নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, জেন্ডার, পাসপোর্ট নাম্বার, জাতীয়তা, পাসপোর্ট ইস্যুকরণের তারিখ ও মেয়াদ, ঠিকানা ইত্যাদি ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাওয়া হবে।
এ ছাড়া, স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু প্রশ্নও করা হবে। তাৎক্ষণিকভাবেই এই আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ৯৬ ঘণ্টা লাগতে পারে।
এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সব ধরনের তথ্য বিষয়ে ‘ট্র্যাক রেকর্ড’ রাখা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের একই উদ্দেশ্যে নির্মিত ট্রাভেল অথোরাইজেশনের ইলেকট্রনিক পদ্ধতি ‘ইএসটিএ’র মতো করেই তৈরি করা হয়েছে। ইটিআইএএস পদ্ধতি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে এবং শেষমেষ ২০২৪ সাল থেকে এটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।
তবুও সুবিধা ভোগ করবে আমেরিকানরা
প্রতি বছর বিশালসংখ্যক আমেরিকান অধিবাসীরা ইউরোপে কাজ বা নিছক বেড়ানোর উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে। বিশ্ব পর্যটন খাতে কোভিড-১৯ মহামারির বিরূপ প্রভাবে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১৩ মিলিয়ন থেকে কমে ৩ মিলিয়ন হয়েছে।
নতুন এই প্রক্রিয়া শুরু হবার পরও বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কিছু বিষয় পরিবর্তন করা হচ্ছে না। আমেরিকানরা এখনো আগের মতোই ৯০ দিন পর্যন্ত ইউরোপের দেশগুলোতে সময় কাটাতে পারবেন এবং ৯০ দিনের পর থেকে থাকার জন্য বিশেষ ভিসার প্রয়োজন হবে। উল্লেখ্য, বিশ্ব মানচিত্রে ১৮৪টি দেশে ভিসাবিহীন যাতায়াত ও অবস্থানের সুযোগ রয়েছে আমেরিকার অধিবাসীদের।
ইটিআইএএস এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীরা শেনজেন অঞ্চলের যেকোনো দেশে ঘুরতে যেতে পারবেন। শেনজেন অঞ্চলে বর্তমানে ২৭টি সদস্যরাষ্ট্র রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এবং বাকি ৪টি ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন বা ইএফটিএ এর অন্তর্ভুক্ত।
পরবর্তীতে আরও ৩টি ইইউ সদস্য দেশ– বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস ও রোমানিয়া শেনজেন অঞ্চলে যুক্ত হতে যাচ্ছে। ফলে, আমেরিকানরা এই দেশগুলোতেও ভিসা ছাড়াই শুধু ইটিআইএএস এর মাধ্যমে ভ্রমণে যেতে পারবে। শুধু আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব ভিসা নীতি রয়েছে।
পর্যটন খাতের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বৃদ্ধিতে নিঃসন্দেহে একটি অন্যতম সংযোজন হতে যাচ্ছে ইটিআইএএস। এর ফলে ভ্রমণ পূর্ববর্তী নজরদারির ফলে পর্যটকরা কোনোরকম সুরক্ষা, অবৈধ অভিবাসন বা জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকি বয়ে নিয়ে আসছেন কি না– এ বিষয়ে সচেতন থাকা যাবে।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তানটাইমস, কনসিলিয়াম, এফার