মাছ উৎপাদন শতগুণ বাড়াবে ‘সাউ রাস’

::
প্রকাশ: ২ years ago

ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর: 
দেশে তৈরি প্লাস্টিক শিট দিয়ে তৈরি ড্রাম আকৃতির বেশ বড় একেকটি ট্যাংকে পানি ধরে ১০ হাজার লিটার। বলা হচ্ছে, প্রতি হাজার লিটার পানিতে ৮০ থেকে ১০০ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়। তার মানে হলো- এমন একেকটি ট্যাংক থেকে ৮০০ থেকে ১ হাজার কেজি মাছ উৎপাদন সম্ভব। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে দেশের আবাদি জমিসহ ছোট-বড় জলাশয়গুলো যখন প্রতিনিয়ত ভরাট হচ্ছে, এ বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রাণিজ আমিষের চাহিদাও আনুপাতিক হারে বাড়ছে, বিপরীতে জোগান সীমিত।

এ অবস্থায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে দেশের, দেশের মানুষের পরনির্ভরশীলতা বাড়বে। রিসার্কুলেটিং অ্যাকোয়াকালচার সিস্টেম (রাস) মূলত মাছ চাষের একটি অগ্রসরমান আন্তর্জাতিক প্রযুক্তির ধারণা। ভিনদেশি এ ধারণায় মাছ চাষে প্রারম্ভিক খরচ ব্যয়বহুল। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার ও মেরিন সায়েন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. শাহাবুদ্দিন এ প্রযুক্তিটি কীভাবে মানুষের দোরগোড়ায় আনা যায় তা দীর্ঘদিন ধরে ভাবছিলেন।

ভাবনারই বহির্প্রকাশ ‘এসএইউ রাস বা সাউ রাস’ প্রযুক্তি। এতে দেশেই উৎপাদিত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি এ প্রযুক্তিটির ইতোমধ্যে সফল বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কারিগরি সহযোগিতায় একটি প্রকল্পের অধীনে উদ্ভাবিত এ দেশীয় প্রযুক্তি শেকৃবিতে স্থাপিত হয়েছে। প্রকল্পটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর ড. মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘রাস প্রযুক্তিটি প্রধানত মাছ উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক লাভজনক হবে।

তারা এক শতক জায়গায় নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে যেখানে সর্বোচ্চ ২০ কেজি মাছ উৎপাদন করে, এর মাধ্যমে সেখানে সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ কেজি পর্যন্ত মাছ উৎপাদন করতে পারবে অর্থাৎ ১০০ গুণেরও বেশি। ১০ হাজার লিটার একটি ট্যাংকের জন্য সব মিলিয়ে ১৫ বর্গফুট জায়গা লাগবে। ’ পুকুর এবং রাস-এর উৎপাদনগত এ ফারাকের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুকুরে এত বেশি উৎপাদনে যাওয়ার জন্য আমরা যে খাবার দেব তা এক সময় নাইট্রোজেন বর্জ্যে পরিণত হয়ে পানিকে দূষিত করবে, মাছ বাঁচবে না। কিন্তু এখানে আমরা ট্যাংকের ভারী বর্জ্যগুলো প্রথমে ভর্টেক্স ফিল্টারে নিয়ে আসি। পরবর্তীতে এ ময়লা মাইক্রোম্যাশ নেটের সাহায্যে ভারী বর্জ্য স্প্রে করে অ্যাকোয়াপনিক্স বেডে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।

এখানকার উৎপাদিত মাছের গুণগতমান পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকে বলে এসব মাছ বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য। ’ শেকৃবিতে স্থাপিত মাছ চাষের এ প্রযুক্তিটি পরিদর্শনে চাষি, উদ্যোক্তা, গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।