মন্ত্রীদের বেডরুমে ঢুকে যেতেন মতিউর, বদলি ঠেকাতে ফোন দিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধানও

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৫ মাস আগে

ছেলের ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা মতিউর রহমানকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থামছেই না। প্রতিদিন নিত্য-নতুন তথ্য বের হয়ে আসছে এই রাজস্ব কর্মকর্তার। এরইমধ্যে জানা গেল, বিশাল ক্ষমতাধর মতিউর উঠে এসেছেন বিএনপির পরিবার থেকে।

এছাড়া গ্রামে তাকে মতিউর নামে চেনেন অল্প কজন, তার ডাক নাম মূলত পিন্টু।

মতিউর কতটা প্রভাবশালী ছিলেন, তা বোঝা যায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান শেখ বদিউর রহমানের কথাতে। সম্প্রতি বিভিন্ন টক-শোতে অংশ নিয়ে তিনি জানান, তৎকালীন আওয়ামী লীগের সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়া এবং বিএনপির অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বেডরুমে প্রবেশের অনুমতি ছিল তার। শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালে তার বদলি ঠেকাতে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ পর্যন্ত বদিউর রহমানকে ফোন করে তদবির করেছিলেন।

বিশাল ক্ষমতাধর মতিউর উঠে এসেছেন বিএনপির পরিবার থেকে।

২০০৭ সালে এনবিআরের চেয়ারম্যান হওয়ার পর চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে সরিয়ে রাজশাহীতে বদলি করার আদেশ দেন বদিউর রহমান। তবে তৎক্ষণাৎ এই আদেশ বদলাতে বারণ করেন তৎকালীন চার বোর্ড মেম্বার। পরে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায় থেকে ফোন আসতে শুরু করে বদিউর রহমানের কাছে। এমনকি সেসময়ে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষ মঈন ইউ আহমেদ পর্যন্ত তার বদলি ঠেকাতে তদবির করেন এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে।

ছাগলকাণ্ডে এসব বিষয় প্রকাশ্যে আসা মতিউরের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। সেখানে খুব একটা যাতাযাত না থাকলেও যথেষ্ট প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে তার। তবে সেখানে মতিউর না, পিন্টু নামে পরিচিত তিনি। এছাড়া সবাই জানে, একজন সরকারি চাকরিজীবী তিনি। তাই মতিউরের এতো সম্পদ আর ক্ষমতা কথা প্রকাশ্যে আসার পর কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না গ্রামবাসীরা। এছাড়া তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে হতবাক অনেকেই।

চাকরিতে যোগ করার আগে মতিউরের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তার বাবা হাকিম হাওলাদার ছিলেন একজন সাধারণ স্কুল শিক্ষক। তবে ২০০৩ সালে অবসরের পর তিনি কাজিরচর ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। সেসময় হাকিম হাওলাদার কাজিরচর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি তৎকালীন চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমানে মুলাদী উপজেলা ১৪ দলের সমন্বয়ক ইউসুফ আলীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আবার ওয়ান-ইলেভেনের সময় চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষ হলেও নানা উপায়ে আরো প্রায় চার বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন হাকিম। জানা গেছে, বাবাকে চেয়ারম্যান বানাতে সেসময় প্রচুর টাকা খরচ করেছিলেন মতিউর।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বিএনপির শাসনামলে এক মন্ত্রীর পরিবারের ঘনিষ্টজন ছিলেন মতিউর। আর রাজস্ব ক্যাডারে যাওয়ার আগে ১১তম বিসিএসে ট্রেড ক্যাডারে চাকরি হয়েছিল তার। ট্রেড ক্যাডার বিলুপ্ত হলে পছন্দ অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডারে যাওয়ার সুযোগ পান ট্রেড ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আর রাজস্ব কর্মকর্তা হিসাবে মতিউরের যোগদানের পর এই পরিবারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

ঢাকার ধনাঢ্য পাড়ায় বাড়ি-ফ্ল্যাট থাকায় গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত না ছিল না তার। তারপরেও বাবার পুরোনো ঘরের জায়গায় দৃষ্টিনন্দন আলিশান বাড়িসহ আশপাশে দৃষ্টিনন্দন নানান স্থাপনা তৈরি করেছেন তিনি। মূলত ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি নানান দপ্তরকে কাজে লাগিয়ে নিজ বাড়ির আশপাশের এলাকার চিত্র পাল্টেছেন।

মতিউর বাবার বাড়ির সামনে খালের ওপরে করেছেন পাকা সেতু। বাড়িতে ঢুকতে একপাশে তিনতলা মাদরাসা, আরেক পাশে দোতলা মসজিদ। আবার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সহযোগীতায় নিজ গ্রামের বাড়ি ঘিরে বিভিন্ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। বাড়ির সামনে দি‌য়ে খালের দুই পাড় সিমেন্টের ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা, দুই পাশেই রয়েছে পাকা সড়ক। খা‌লের দুই পাড়ের প্রতিটি বাড়ির সামনে সান বাঁধানো ঘাট করে দেওয়া হয়েছে।

বাড়ির দক্ষিণ দিকে রহমানিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তার পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে তিনতলা একটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। গড়ে তোলা হয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, ক্লিনিকের মতো প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে হাওলাদার ফাউন্ডেশন।