মডেল তাসনিয়ার জীবনের করুণ পরিণতির নেপথ্যে

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১০ মাস আগে
তাসনিয়া রহমান। ফাইল ছবি

গত শুক্রবার সকালে ধানমণ্ডির বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় মডেল তাসনিয়া তানজিম ওরফে তাসনিয়া রহমানের মৃতদেহ। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় আত্মহত্যা করেছেন তাসনিয়া।

বেপরোয় ও বিলাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত তাসনিয়া রহমান আত্মহত্যার পথ কেন বেছে নিলেন তা নিয়ে শোবিজ অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নানা বিতর্কে জরিয়ে গিয়েছিলেন তাসনিয়া।

গত বছর যখন তার বিরুদ্ধে একের পর এক প্রতারনা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেয়ার বিষয়টি পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাতে প্রকাশ্যে আসতে থাকে তখন তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ফেসবুক লাইভে ও কয়েকটি অনলাইন মাধ্যমে কথা বলেন তাসনিয়া।

এসব লাইভে তাসনিয়া প্রকাশ করেন তার সাথে কার কার সম্পর্ক ছিলো এবং কাদের কাছ থেকে তিনি আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন।

তদন্তে উঠে আসে ২০২০ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী গুলশান থানায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমজাদ হোসেনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন তাসনিয়া। পরবর্তীতে পিবিআই এর তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হয় এই মামলা এবং প্রকাশ পায় তারা বেশ কয়েকবছর ধরে প্রেম করছিলেন।

মাত্র চার মাস পর একই বছরের ৭ই সেপ্টেম্বর ইফতেখারুল আলম নামের এক ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে পর্নো ছবি ছড়ানোর অভিযোগে সাইবার মামলা করেছিলেন তাসনিয়া। কিন্ত সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে ইফতেখারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল তাসনিয়ার। করেছেন বিদেশ ভ্রমণও। বিভিন্ন সময়ে তার থেকে অন্তত বিশ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এবং পরবর্তীতে মিথ্যা মামলা করেন ইফতেখারের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে তখন গণমাধ্যমকে তাসনিয়া জানান, একেকটা কাজে আমরা কয়টাকাই পাই। আমরা মেয়েরা চলতেছি কিভাবে। বয়ফ্রেন্ডরা টাকা না দিলে গিফটতো দেয়। ১০ জনের মত নিজের বয়ফ্রেন্ড থাকা ও তাদের থেকে টাকাও নেয়ার কথা স্বীকার করেন। ইফতেখারের সাথে ট্র্যাভেল ও তার বউয়ের কারনে সম্পর্ক ভেঁঙ্গ যাওয়ার কথা অকপটে জানিয়ে তিনি বলেন, এই পাগলটা এখনো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় তাসনিয়া পেশাদার ব্যাকমেইলিং এ জড়িত। মূলত ধন্যাঢ্য পুরুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। আরেক তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এর তদন্তেও উঠে আসে একই চিত্র।

এছাড়াও শোবিজ অঙ্গনের আরেক মডেল ইশরাত পায়েলের স্বামীর সাথেও সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তাসনিয়া। এ বিষয়ে ইশরাত পায়েলের সাথে বাকবিতন্ডার একটি কলরেকর্ড ফাঁস করেন তিনি। ইশরাত পায়েলের কিছু আপত্তিকর ছবিও ফেইসবুকে আপলোড করেন তাসনিয়া। সেইসাথে পায়েল দেশে ফিরলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।

এসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর তাসনিয়া রহমান নির্মাতা জসীম আহমদকে তা ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করে তাদের মধ্যকার ২০২০ সালের একটি পুরনো মামলাকে সামনে নিয়ে এসে অনলাইনে মানহানীকর বক্তব্য দিতে থাকেন। এসময় জসীম আহমেদের আইনজীবিরা সংবাদ সম্মেলন করে সাইবার আইনে মামলার আবেদনের কথা জানান। আইনজীবি ব্যারিষ্টার শাহেদুল আজম বলেন, তাসনিয়া সিরিয়ালি ধন্যাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করেন।

একের পর এক বিতর্কে জড়ানোর পর বেশকিছুদিন ধরেই তাসনিয়া রহমান তার ফেইসবুক ও ইন্সটাগ্রাম আইডি ডিএক্টিভেট করে আড়ালে চলে যান।

সম্প্রতি আশিম খন্দকার নামের ইউ ল্যাবের এক ছাত্রের সাথে লিভিং রিলেশনে ছিলেন তিনি। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে তাসনিয়ার নানা অপরাধ প্রকাশ্য আসতেই আশিম তাকে ছেড়ে গেলে লাইভে এসে আত্মহত্যার ঘোষনা দেন।

লাইভে আশিম সম্পর্কে তাসনিয়া জানান, (আশিমের সাথে আমার একটা বাসা নেয়া ছিলো। এখানে আশিম দায়িত্ববোধ থেকে সরে গেছে। আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে গেছিলাম কিন্তু আশিম পুরো দায়িত্ব থেকে সরে গেছে। হ্যা আমি একটা অন্যায় করছি ওরে আমি থাপ্পর দিছি। আমাদেরতো স্বামী স্ত্রী হিসেবে চুক্তি আছে, আমি এটা তার ভাই আর মাকেও বুঝিয়েছি। তারা কোন সাহায্য করেনি। )

সবার মিলিয়ে উচ্চাকাঙ্খী বেপরোয়া জীবনে নেমে আসা অর্থসংকট ও সর্বশেষ প্রেমিকের সাথে বিচ্ছেদের হতাশায় আত্মহত্যা করেন তাসনিয়া। এমনটাই ভাবছেন শোবিজ অঙ্গনের মানুষেরা।