ভিয়েনা কনভেনশন উল্লেখ করে কি বোঝাতে চাইলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত!

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) লিখেছেন, ‘আপনি কি জানতেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গেও বৈঠকের সুযোগ আছে’।

টুইটে তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের সঙ্গে নিজের ও জার্মান ডেস্ক অফিসারের ছবিও প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে তার এই টুইট ঘিরে কূটনৈতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। এই টুইটে কি তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আর প্রতিমন্ত্রীকে প্রতিত্তোর দিলেন?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম একাধিকবার বিদেশি কূটনীতিকদের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও তাদের এই বক্তব্য ছিল, ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্য করে কোনো না কোনো কারণে। জার্মান রাষ্ট্রদূত খুব স্বাভাবিক ভাবে টুইটটি করলেও এর মাঝে কোনো প্রশ্ন খুঁজতে পারেন কেউ কেউ।

কয়েক মাস আগেও বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক এবং পরবর্তীতে বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকের বিষয় জানানোর ঘটনায় বেশ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন আখিম ট্রোস্টার। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘ ১ ঘণ্টা বৈঠক করেছেন তিনি। জার্মান রাষ্ট্রদূত আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের পোষ্টে ভিয়েনা কনভেনশনের কথা উল্লেখ করে সেই বৈঠক সর্ম্পকে কোনো বার্তা দিতে চাইলেন কীনা, ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

কারণ জানা গেছে, বিএনপির সাথে গত ১১ ডিসেম্বর এই বৈঠকে জার্মান রাষ্ট্রদূত স্বপ্রণোদিত হয়েই এসেছিলেন।

সেদিন বেলা ৩টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়ে ৪টায় শেষ হয়। বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জার্মান ফরেন মিনিস্ট্রি থেকে এক ভদ্রলোক এসেছেন তাকে নিয়ে জার্মান অ্যাম্বাসেডর আমাদের এখানে এসেছেন আলাপ করতে। আমাদের আলোচনা হয়েছে।

যদিও বৈঠকের আলোচনা সর্ম্পকে তিনি কিছু জানাননি। তিনি বলেছিলেন, তবে এসব দিপক্ষীয় একান্ত বৈঠকের আলোচনাগুলো নিজেদের মধ্যে রাখাই ভালো। এগুলো নিয়ে বাইরে আলোচনা করার খুব একটা সুযোগ থাকে না। এই বৈঠকগুলো একান্ত বৈঠক, দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, এগুলো নিজেদের মধ্যে রাখার চেষ্টা করি। এটাই ভালো, এটাই প্র্যাকটিস আর কী। এতটুকুই বলি এর বাইরে আর বলার সুযোগ নেই।

জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোস্টার এই ছবিসহ টুইট করেন, তবে বৈঠকের তারিখ উল্লেখ করেননি।

এর আগে, গত ১৭ মার্চ গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আখিম ট্রোস্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা, সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন-এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত কী বলেছেন জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সম্বন্ধে বিশ্বব্যাপী সবাই অবগত আছে। এখানে নতুন করে বলার কিছু নেই। এসব ব্যাপারে তাঁরা উদ্বিগ্ন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, নির্বাচনের বিষয় বাদ দিয়ে তো কোনো আলোচনা হতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে তারা জানতে চেয়েছেন, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে কী হতে যাচ্ছে? এ ব্যাপারে তাদেরও পর্যবেক্ষণ আছে।

নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত কিছু জানতে চেয়েছেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ তো আমাদের দলের নিজস্ব ব্যাপার।’ তিনি জানান, বৈঠকে জার্মানির রাষ্ট্রদূত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন।

বিএনপির সেই বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত। গত ২০ এপ্রিল এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিকাব টক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতারা আমাকে উদ্ধৃত করে যা বলেছেন, তাতে আমি খানিকটা হতাশ হয়েছি। কারণ, ১৭ই মার্চের ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রায় সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে আখিম ট্রোস্টার বলেন, ‘আমার কর্তৃত্বের মধ্যে যা আছে, সে সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলি আমি। এই উদ্ধৃতি নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট।’ বিএনপি’র কোন বক্তব্য নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট? জানতে চাইলে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন- এমনটা বলা হয়েছে। কোনো বিষয়ে আমার কিছু বলার থাকলে আমি নিজেই সেটা বলতে পারি। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বলার প্রয়োজন দেখি না।’