ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে দুটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবামাধ্যম টাইমস নাউ।
এতে দেখা যাচ্ছে, দুই ব্যক্তি ফ্ল্যাট থেকে বের হচ্ছেন এবং একটি বড় স্যুটকেস নিয়ে লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্য একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ওই দুজন স্যুটকেস নিয়ে আবার ফ্ল্যাটে ঢুকছেন।
পুলিশের বিবৃতির বরাতে টাইমস নাউ ও এনডিটিভি জানিয়েছে, ওই স্যুটকেসে পলি প্যাকে ভরা ছিল এমপি আনারের লাশের খণ্ডবিখণ্ড অংশ। নিহতের হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ফেলা হয়েছিল এবং চামড়াও ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, যাতে পরিচয় নষ্ট করা যায়। তারপর স্যুটকেসে প্যাকেটগুলো ভরে ফ্ল্যাট থেকে বের করে নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেন খুনিরা। আর ভিডিও ফুটেজে দেখা দুই ব্যক্তিই এমপি আনারের কন্ট্রাক্ট কিলার।
পুলিশ সন্দেহ করছে, আনোয়ারুল আজিমকে কলকাতার ওই ফ্ল্যাটে একজন নারীর ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে নেওয়া হয় এবং তারপর কন্ট্রাক্ট কিলাররা তাকে খুন করে। নিহতের মরদেহ টুকরো টুকরো করতে জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে মুম্বাই থেকে বিশেষভাবে কলকাতার নিউটাউনে আনা হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েছে, জিহাদ বাংলাদেশি। এমপি আনার হত্যার দুই মাস আগে তাকে ভারতে আনা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে বিচারকের মুখোমুখি করলে ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাত আদালত ।
টাইমস নাউ সূত্রে আরও জানা গেছে, আখতারুজ্জামান শাহীন নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে এমপি আনারকে খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন জিহাদ। আখতারুজ্জামান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। এমপি আনারকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এই আখতারুজ্জামান।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আনারকে খুন করতে খুনিদের সঙ্গে প্রায় ৫ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন আখতারুজ্জামান।
টাইমস নাউ বলছে, কলকাতার নিউটাউন এলাকায় যে ফ্ল্যাটটিতে এমপিকে খুন করা হয়, সেটি তার বন্ধুকে ভাড়া দিয়েছিলেন ফ্ল্যাটের মালিক। তিনি আবগারি বিভাগের একজন কর্মচারী।
প্রসঙ্গত, আনোয়ারুল আজিম আনার গত ১৩ মে কলকাতায় নিখোঁজ হন। উত্তর কলকাতার বরানগরের বাসিন্দা আনারের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস স্থানীয় পুলিশের কাছে নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে লেখা হয়, আনার বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসার পর গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতেই থাকছিলেন। ১৩ মে বিকেলে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য তার বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। সেই ডায়েরি সূত্রে নিখোঁজ সংসদ সদস্যের খোঁজ শুরু হয়।
পরে ২২ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ দেখতে পাওয়া যায়। লাশ না মিললেও সেখানে আনারকে খুন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
পরিস্থিতিগত প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়, এমপিকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল এবং তারপরে তার দেহকে কয়েক টুকরো করা হয়েছিল।