ভারতের তিন উৎস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কমিয়েছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দৈনিক ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তথ্য বলছে, মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ভোর ৫টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৯৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে। দিনের অন্য সময় এই বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ আরও কম।
প্রথমে ভারতের সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে উসকানি দেওয়া এবং পরে সে দেশে বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে নিন্দার ঝড় বইছে। অন্তর্বর্তী সরকার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অর্ধেকে নামানোর তথ্য সামনে এলো।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা বাংলাদেশিদের সেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশিদের সেবা দেওয়া থেকে বিরত রয়েছে সেখানকার হোটেল-মোটেলগুলো। অপরদিকে বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিদিনই অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। যদিও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ভারত সম্পর্কে বিদ্বেষ না ছড়িয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ভারতের তিনটি উৎস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। এর মধ্যে ভেড়ামারা এইচভিডিসি সাবস্টেশন দিয়ে দৈনিক আমদানি করা যায় ১ হাজার মেগাওয়াট। ৩০ নভেম্বরেও এই সাবস্টেশন দিয়ে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছে। তুলনামূলক কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়—এ কারণে সাবস্টেশনটি দিয়ে সারা বছর একই হারে বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়। প্রতিদিন এই সাবস্টেশন দিয়ে আমদানি করা হয় ৯০০ থেকে ৯৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর রাত ১টায় এই সাবস্টেশন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৪৮২ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা হয়। এরপর আর বাড়ানো হয়নি। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টায় দেখা গেছে, এই সাবস্টেশন দিয়ে ৪১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা হয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব। তবে বিদ্যুতের সরবরাহ খরচ কমাতে কুমিল্লায় এইচভিডিসি বা ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়নি। কুমিল্লার একটি জোনে বিদ্যুতের চাহিদা ১৬০ মেগাওয়াট—সেখানেই ত্রিপুরার বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সেখানকার প্রতিদিনের চাহিদা আগেই ত্রিপুরাকে জানানো হয়। সে অনুযায়ী তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তবে কোনও ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সরবরাহ করতে না পারলে সেখানে বাংলাদেশের সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ফলে এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় ত্রিপুরাকে ৬২ মেগাওয়াটের চাহিদা দেওয়া হয়। এর বিপরীতে ৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
ভারতের ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় আদানি শিল্প গ্রুপ বাংলাদেশে সরবরাহ করার জন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এটি থেকে প্রতিদিন ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা সম্ভব।
কয়েক দিন আগে ওই কেন্দ্র থেকে ১৩৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে বাংলাদেশের পিজিসিবিকে পূর্বাভাস দিয়েছিল আদানি। কিন্তু মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ভোর ৫টায় আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে মাত্র ৫০৬ মেগাওয়াট। এরপর আদানির কেন্দ্রটি ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এদিন বিকাল দুপুর ২টায় কেন্দ্রটি আবারও উৎপাদনে আসে এবং বিকাল ৩টা পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ৬০ মেগাওয়াট। ৩টার পর তা বেড়ে হয়েছে ১৮৬ মেগাওয়াট। তবে কয়েক দিন ধরেই আদানি সরবরাহ ৭৫০ মেগাওয়াট থেকে ৮০০ মেগাওয়াটের মধ্যে রেখেছে। ভারত এবং কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে নানামুখী পর্যালোচনা করে এলেও পিডিবি বা আদানি প্রকাশ্যে কোনও কথা বলছে না। এ নিয়ে লুকোচুরি হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি ইনটেনশনালি করা হয়নি। পরিস্থিতির কারণেই হয়েছে। শীতের সময় আমাদের চাহিদা কমে যায়। তখন আমরা বিভিন্ন উৎস থেকে আসা সব বিদ্যুৎ নিতে পারি না। এরই অংশ হিসেবে আদানিও একটি ইউনিট বন্ধ রেখেছে। তাদের একটি ইউনিট থেকে আমরা বিদ্যুৎ নিচ্ছি।’
মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘চাহিদা কমায় আমরা তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও কম চালাচ্ছি। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বেশি চালানো হচ্ছে।’ আবার গ্যাস সংকট থাকায় তেলের কিছু কিছু কেন্দ্র চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেলচালিত কেন্দ্রের চেয়ে ভারতের বিদ্যুতের দাম অর্ধেক। ভারতের এক হাজার মেগাওয়াটের দাম পড়ে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। আর তেলে দাম পড়ে ১৬ থেকে ১৮ টাকা।
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।