পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
বৈধপথে যেসব রেমিট্যান্স যোদ্ধা দেশে টাকা পাঠাবে এ বছর থেকেই তাদের ইউনিভার্সেল পেনশন স্কীমের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের উপযুক্ত সম্মান দেওয়ার বিষয়েও সরকার ভাবছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, শুধু সরকারী কর্মকর্তা, ভিআইপি, সিআইপিদের জন্যই নয় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্যও সরকারীভাবে প্লট বরাদ্দ রাখা উচিৎ। প্রবাসী কর্মীদের জন্য আইনের সংখ্যা কমাতে হবে এবং আইন আরো সহজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ডিবেটে ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বোয়েসেল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেন, বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোর যেভাবে প্রবাসী শ্রমিকদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিৎ বাস্তবে তা হচ্ছে না। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ত্যাগের মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের উপযুক্ত সম্মান ও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার কর্তৃক যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা তাদের দেয়া হয় অনেকে তা জানেই না। আমলাতান্ত্রিক বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে সেগুলো তাদের জন্য আরো সহজ করতে হবে। কারো প্রতি অবিচার করে উন্নয়ন করা যাবে না।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং সিস্টেম আরো আন্তরিক করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসী শ্রমিকদের উৎসাহীত করতে হবে। ব্যাংকিং সিস্টেম ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসী শ্রমিকরা কম উৎসাহিত হয়। অন্যদিকে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তাদেরকে বুকে টেনে নেয়, তাদের সাথে গড়ে তোলে বন্ধুত্বের বন্ধন। সরকার প্রণোদনা দিয়ে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থের বিনিময় হার বাড়ালেও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কায়দা কৌশলে তা আরো বাড়িয়ে দেয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, অব্যবস্থাপনার কারণে প্রবাসী আয় থেকে উপার্জিত অর্থ বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে কিছুটা অনাগ্রহ দেখাচ্ছে অভিবাসী কর্মীরা। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করলে প্রতি ডলারে ২/৩ টাকা বেশি পেলে কেন একজন প্রবাসী কর্মী বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাবে। তাছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করলে প্রয়োজন অনুযায়ী তা প্রবাসীদের ঘরে ঘরে পৌছে দেয় হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। শুক্র-শনির কোন বাধা থাকে না। আমাদের দেশে শুক্র-শনি বন্ধ আবার কোনো কোনো দেশে রবিবার বন্ধ। এছাড়াও ৭ দিনে ২৪ ঘন্টাই হুন্ডি ওয়ালারা কর্মীর কর্মস্থলে গিয়ে ডলার সংগ্রহ করে। ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে হলে কর্মীর অনেক ক্ষেত্রে কাজের কিছু ক্ষতি হয়। তাই হুন্ডির সাথে বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণে সমতা আনতে বর্তমানে প্রদত্ত ২.৫ শতাংশ ইনসেন্টিভ বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা যেতে পারে। এছাড়া প্রতিবছর সিআইপিদের প্রদত্ত সম্মাননার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মীর প্রেরিত অর্থের উপর ভিত্তি করে শ্রেষ্ঠ রেমিট্যান্স যোদ্ধা নির্বাচন করে তাদের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করলে রেমিট্যান্স প্রাবহ বাড়বে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিসহ বিদেশে অবস্থানরত কর্মীদের প্রতি মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষথেকে জনাব কিরণ ৮ দফা সুপারিশ করেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, আমাদের অষ্টম পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনায় রেমিট্যান্সকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরির মাধ্যমে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অভিবাসন খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।
‘প্রবাসী কর্মীদের প্রেরিত অর্থ বৈদেশিক আয়ের মূল চালিকা শক্তি’ শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দলকে ৩০ হাজার টাকা এবং রানারআপ দলকে ২০ হাজার টাকা সহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, ড. নাশিদ রিজওয়ানা মনির ও সাংবাদিক ঝুমুর বারী।