বিয়ের দাবিতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানা পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা চৌধুরীর (৪৯) বাড়িতে অনশন করছেন এক নারী (৩৩) উদ্যোক্তা। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার খোলসী গ্রামের মেয়ে।
বুধবার (২১ জুন) সকাল ১০টা থেকে উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের বানিয়াবহু গ্রামে ওই নারী বিয়ের দাবিতে অনশন করছেন। সেলিম রেজা চৌধুরী ওই গ্রামের মৃত মান্নান চৌধুরীর ছেলে। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিয়ের দাবিতে অনশনে থাকা ওই নারী উদ্যোক্তা জানিয়েছেন ওসি (সেলিম রেজা) বিয়ে করুক, না হয় তাকে মেরে ফেলুক। এছাড়া আমি ওর বাড়ি থেকে কোথাও যাব না।
অনশন অবস্থায় নারী উদ্যোক্তা স্থানীয়দের বলেন, ২০২০ সালের দিকে ওসি সেলিম রেজা নাচোল থানায় থাকাকালে আমার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে মামলা সংক্রান্ত কাজে যাওয়া-আসা সূত্রে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। পরে বিয়ের আশ্বাস দেখিয়ে জেলা শহরের নাখেরাজ পাড়ায় ওসির ভাড়া করা বাসায় নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন।
তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন সময় হোটেলে নিয়েও ধর্ষণ করেছে ওসি। নাচোল থানার পর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বিশেষ শাখায় ও ভোলাহাট থানায় কর্মরত থাকাকালেও আমাদের সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে ওসির স্ত্রী আমাদের সম্পর্কের কথা জানার পরে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, প্রথমদিকে ওসির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সময় ওসি জানায় তার স্ত্রীকে তিনি ডিভোর্স দিয়েছেন এবং আমাকে বিয়ে করতে চায়। যার কারণে আমি তার প্রতি সরল বিশ্বাস রেখে এতদূর পর্যন্ত সম্পর্ক নিয়ে গেছি। পরে জানতে পারি, তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়নি। সে যোগাযোগ বন্ধ করতে চাইলেও আমি তাকে পেতে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রাখি।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে বিয়ের দাবিতে ভোলাহাট থানায় যাই। এ সময় সে আমাকে বেধড়ক মারধর করে ও পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।
ওসির বাড়িতে অনশনের আগে বিয়ের দাবিতে থানায় অনশন করার কথা জানিয়ে তিনি আরও দাবি করেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভোলাহাট থানায় গেলে ওসি নিজে এবং থানার কনস্টেবল ও ড্রাইভার দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় এবং বিয়ের দাবিতে অনশন করলে ৫৪ ধারায় পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। পরে সাত দিন কারাগারে থাকার পর ফিরে এসে জব্দ হওয়া মোবাইল থানায় গিয়ে ফেরত নেই। থানা থেকে মোবাইল এনে দেখি, ওসি আমাদের কথোপকথনের অডিও ও ভিডিও সবকিছু মুছে দিয়েছে এবং আমাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করছে।
অভিযুক্ত সেলিম রেজা চৌধুরীর বড় ভাই আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, আমার ভাই (সেলিম রেজা) এ বাড়িতে থাকে না। এই মেয়েটা আমার ভাইয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে। ওর অভিযোগের কারণে আমার ভাইকে ওসি পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে।
সেলিম রেজার স্ত্রী ইয়াসমিন পপি বলেন, এই মেয়ের জন্য আমার স্বামী সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। আমার স্বামী এই মেয়েকে বিয়ে করবে না। এজন্য যা হয় হোক।
নওগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনু বলেন, একটি মেয়ে ওসির বাড়িতে বিয়ের দাবিতে অনশন করছেন। তবে একজন ওসি হিসেবে কর্মস্থলে থাকা অবস্থায় নারী সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িয়ে পড়া সত্যিই দুঃখজনক।
তাড়াশ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, এক নারীর অনশনের বিষয়টি আমি ৯৯৯ এর মাধ্যমে জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। ওই নারী বিয়ের দাবিতে সেলিম সাহেবের বাসায় রয়েছে। তাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত ওই বাড়ি থেকে তিনি যাবে না বলে জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।