সিলেট ব্যুরো:
‘বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের জ্ঞান খুব সীমিত। তারা মাঝেমধ্যে আমাদের যে সুপারিশ দেয়, সেগুলো খুব আহাম্মকের মতো মনে হয়। বাংলাদেশ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানে এ দেশের মানুষ।’
বুধবার (৪ জানুয়ারি) সিলেটের সিভিল সার্জনের কার্যালয় আয়োজিত কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম দেশ বাংলাদেশ, যেখানে ৩০ লক্ষ লোক রক্ত দিয়েছে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। এখানে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গণতন্ত্র রয়েছে। অথচ তারা আসছে আমাদের মানবাধিকার আর গণতন্ত্র বোঝাতে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সিলেটে আরও সাতটি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের মোট ২৪টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রয়োজন। আশা করছি দ্রুতই এগুলো পেয়ে যাবো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কারণে দেশে যে কত উন্নয়ন হচ্ছে তা আমরা টের পাচ্ছি না। কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ার ফলে দেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু অনেক কমে গেছে। আগে তা প্রায় ৮৬ শতাংশ ছিলো। এরমধ্যে সিলেটে শিশু ও মাতৃমৃত্যু সবচেয়ে বেশি ছিলো। এগুলো অনেক কমে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নির্বাচনে ৭০-৮০ ভাগ লোক ভোট দেয়। কিন্তু অনেক দেশে ২৫-৩০ ভাগ লোকও ভোট দেয় না। নির্বাচনের সময় প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ এ দেশে একেকটি পদে বিপুল সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।’
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা হয় বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তারা (বিদেশিরা) আসছেন আমাদের বোঝাতে। এখানে প্রত্যেকের হৃদয়ে গণতন্ত্র। নির্বাচনে যান ৭০/৮০ ভাগের নিচে লোকে ভোট দেয় না। আর যারা আমাদের সুপারিশ দেন, তাদের দেশে মাত্র ২৫ শতাংশ লোক ভোট দেয়। আবার এসে বড় বড় কথা বলে। নিজেদের দিকে তাকায় না কেনো তারা? তাদের দেশে নির্বাচন করতে প্রার্থী পাওয়া যায় না। আর আমাদের দেশে একটি পদে ১০০ জন দাঁড় হয়ে যায়।
বাংলাদেশে বিদেশিদের চর্চার জন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আপনারা মিডিয়ারা অতো হইচই করেন কেনো? বরং আপনাদের কারণে বেদিশিরা পাত্তা পাচ্ছে। আপনারা বিদেশিদের কাভার করা (সংবাদ প্রচার) বন্ধ করেন। কাভার যদি বন্ধ করেন, তাহলে পরের দিন থেকে ওরা ঘরে বসে হুক্কা খাবে। আপনাদের কারণে তারা মজা পায়, নিজেদের রাজা মনে করে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, তারা (বিদেশি) কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করতে চায়, তাতে আমাদের কি? এগুলো নিয়ে মাথাব্যথার কারণ নেই। আমাদের দেশে কোনো কিছু গোপনও করি না। আমরা খুবই ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ)। আমাদের দেশে প্রতিদিন সাড়ে ১২ হাজার পত্রিকা, মাসে ১৮শ’ সাময়িকী বের হয়। আর কোথাও আছে? সুতরাং ওই হিসাব বন্ধ করেন। আপনারা পাত্তা না দিলেই ভালো।
ড. মোমেন বলেন, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস ও ভিশনের কারণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের চেয়ে আমাদের অবস্থান অনেক অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা দারিদ্রের মতো অভিশাপকে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। পাশ্ববর্তী দেশ থেকে আমরা অনেক ভালো করছি। যেহেতু অনেক ভালো করছি, সে কারণে আকর্ষণ বেড়েছে। অনেকে ফায়দাও লুটতে চাচ্ছেন।
বাংলাদেশে শান্তিতে আছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে গত ১৪ বছরে শান্তির স্থিতিশীলতা আছে। বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্র দেশ না। দুনিয়াতে যে দেশে শান্তির স্থিতিশীলতা থাকে, সে দেশ উন্নত হয়। সিঙ্গাপুর, ই্ইউই দেখেন, যেখানে শান্তিশৃঙ্খলা আছে, ওখানে উন্নতিটা হয়। আর যেখানে অশান্তি থাকে, সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ লিবিয়া, সিরিয়া দেখেন।
সিলেট/অমিতা/৪ জানুয়ারি ২০২৩