পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর সম্প্রতি ওমরাহ পালন করতে গিয়ে সৌদির পাশপাশি কাতার ও দুবাই ভ্রমন করেন। তিনি এখনো বিদেশে অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে নুরুল হক নুরের সঙ্গে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সদস্য মেন্দি এন সাফাদির হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টিরও সদস্য। সাফাদির সঙ্গে দুবাইয়ে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুর বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি এবং কূটনৈতিক কোনো সম্পর্কও নেই। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ সব সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দুদিন আগেও জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দার সঙ্গে ছবি তুলে নুরুল হক নুর কি দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, ভিপি নুর কি পবিত্র ওমরাহ পালনের কথা বলে বিদেশ ঘুরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টদের সঙ্গে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন? সাফাদির সঙ্গে ওই ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, ভিপি নুর পবিত্র ওমরাহ পালনের কথা বলে দেশ ছাড়লেও মুসলিমবিরোধী ইসরায়েলির সঙ্গে বৈঠক করলেন কেন?
সম্প্রতি নুরুল হক নুর কাতার যান। সেখান থেকে তিনি দুবাই যান। সেখানে তিনি দেশ থেকে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা বলেন। সম্প্রতি তিনি দুবাই থেকে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি ওমরাহ পালন করেন। এরই মধ্যে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তার ছবি প্রকাশ পেল। ওই ছবিতে দেখা যায়, একটি ভবনের সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মেন্দি এন সাফাদি ও ভিপি নুর।
বিদেশে গিয়ে নুর ফেসবুক লাইভে এসে সরকার, মন্ত্রী-এমপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে তার একটি লাইভ নিয়ে দেশে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
২০১৬ সালে বিদেশে বসে এই মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। বৈঠক শেষে দুজনের ছবি ফাঁস হয়ে গেলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
একপর্যায়ে আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশে আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
কে এই সাফাদি :
তিনি শুধু লিকুদ পার্টির নেতাই নন, তিনি ইসরায়েলের ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি’র প্রধান।এই প্ৰতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হয় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাথে। যদিও নূরের সাথে সাফাদির কি আলোচনা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।তবে পূর্বের একটি ঘটনার মাধ্যমে ধারণা করা যায় আলোচনার বিষয়বস্তু কি হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে মেন্দি সাফাদির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতির যোগসুত্র অনেক পুরনো। ২০১৬ সালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ভারত সফরে গেলে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পাটির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তার হাস্যোজ্জ্বল কয়েকটি ছবি গণমাধ্যমে ফাঁস হয়। সে সময় বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল সমালোচনার সৃস্টি করে,যাতে বিব্রত হতে হয় বিএনপিকে।
ঘটনাটি এমন সময় ঘটে যখন বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলন করছিলো। আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা কিভাবে সাহায্য করতে পারে, সে বিষয়ে তখন আলোচনা হয়েছিলো বলে চাউর হয়।দীর্ঘ ৭ বছর পর নুর এর সঙ্গে বৈঠক করে আবার আলোচনায় এলেন মেন্দি সাফাদি।
সমালোচকরা বলছেন, মুসলিমদের ঈমান আকিদার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক সাংঘর্ষিক।নূর একদিকে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন আদায়ে মুখে ইসলামের কথা বলছেন, অন্যদিকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রবাবশালী ব্যক্তির সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এটি দেশের মানুষ ও আলেম সমাজ এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রতারণা স্বরুপ।