বিজয় দিবস পালনে ইসলাম

::
প্রকাশ: ২ years ago

বিলাল হোসেন মাহিনী:
বিজয়ের মাসে সকল শহিদ ও স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। ৩০ লাখ শহিদের রক্ত এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা ও বিজয়। ইসলামে বিজয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সৃষ্টির প্রতিটি জীব স্বাধীনতা পছন্দ করে। পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি বা জীব পাওয়া যাবে না যারা পরাধীন থাকতে চায়। যে কোনো সফলতা ও বিজয়ের জন্য মানুষ শুধু চেষ্টা করতে পারে; জয় বা সফলতা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং যখনই মানুষ কোনো সফলতা লাভ করবে তখনই তার উচিৎ হলো- মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় ও তাঁর তাসবিহ-তাহলিল করা।

ইসলামি শরিয়তের সীমার মধ্যে বিজয় দিবস উদযাপন করা দোষণীয় নয়, বরং পছন্দনীয় ও প্রশংসনীয়। বিজয় দিবস সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের দুটি সুরা আমাদের সামনে রয়েছে। একটি সুরা ফাতাহ। ফাতাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে বিজয়। আরেকটি সুরার নাম হচ্ছে সুরা নাসর। নাসর মানে মুক্তি ও সাহায্য। সুরা নাসরে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং দলে দলে লোকদের ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন স্বীয় রবের প্রশংসার সঙ্গে তাসবিহ পড়–ন এবং আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করুন। (সুরা আন নাসর)।

আল্লাহ তায়ালা সুরা নাসরে বিজয় উদযাপনে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। প্রথম: তাসবিহ পাঠ করা তথা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা। দ্বিতীয় : হামদ পাঠ কর, আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। তৃতীয়: মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যদি ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তার জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু আমরা করি কী? শহীদদের কবর জিয়ারত ও আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ইসতিগফার ক’জন করি? এগুলোতো করি-ই না বরং ইসলাম যেসব কর্মকা- হারাম করেছে সেগুলো করে গোনাহ কামাই করি। (নাউযুবিল্লাহ)

দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা হচ্ছে ইসলামসম্মত বিশেষ সহজাত গুণ। সুতরাং দেশের বিজয় দিবস আমাদের গৌরব, অহংকার। দেশপ্রেমের অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হলো, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহর পথে এক দিন ও এক রাত সীমান্ত পাহারা দেওয়া এক মাস পর্যন্ত সিয়াম পালন ও এক মাস ধরে রাতে সালাত আদায়ের চেয়ে বেশি কল্যাণকর। যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল, মৃত্যুর পরও তা তার জন্য অব্যাহত থাকবে, তার রিজিক অব্যাহত থাকবে, কবর-হাশরের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে। ‘ (সহীহ মুসলিম, ১৯১৩)

বিজয় দিবসে আমরা যে কাজগুলো করতে পারি:
১. এই দিনে বিজয়ের জন্য আল্লাহর মহ্ত্ত্ব, পবিত্রতা ও বড়ত্ব বর্ণনা করা। ২. আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। ৩. মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে আত্মনিবেদন ও ইস্তিগফার করা। ৪. কুরআন তিলাওয়াত করা। ৫. এবং দান-খাইরাত করে তার ছাওয়াব দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, সেই শহীদ ভাই-বোনগণের রূহে সওয়াব পৌঁছাতে পারি। তাদের জন্য দু’আ করতে পারি।

বিজয় দিবস পালনের নামে বাদ্য ও নাচগানের অনুষ্ঠান, যুবক-যুবতীদের নিয়ে উত্তাল কনসার্ট, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা এবং সবধরণের অপসংস্কৃতি চর্চা ও শিরকি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রিয় নবী (সা.) মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিজয়ের চেতনাকে জাগ্রত করে, তাদেরকে মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয়, সম্মান, আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা করে দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি যেমন অসংখ্য দাসকে নিজ খরচে মুক্ত করেছেন তেমনি সমগ্র বিশ্বকে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ। নিজ দেশের প্রতি, দেশের সম্পদের প্রতি আমাদের অনেক বেশি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে। ব্যক্তিগত ও দলীয় সংকীর্ণতা পরিহার করে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা মওলানা ভাসানী, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ সাত জোয়ান, সেক্টর কমান্ডারগণসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে সামান্যতম অবদানও যার আছে তাকেও শ্রদ্ধা করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। বিজয়ের দিনে আমাদের শপথ হোক- সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশ ও দেশের ভূখ-, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতার মূলমন্ত্র (সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার) সমুন্নত রাখবো। ইনশাআল্লাহ।

লেখক: প্রভাষক, গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, যশোর।