বিএনপির শাস্তির তালিকায় আরও কতজন নেতা

:: পা.রি. রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১ বছর আগে

অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সংগঠনটির শীর্ষ পদ থেকে। গত ২৯ জুলাই বিএনপির অব্স্থান কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে অর্পিত দায়িত্বে অবহেলার কারণে শ্রাবণের মতো বিএনপি এবং এর কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের আরও বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারেÑ এমন আলোচনা এখন জোরেশোরেই চলছে। 

দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে হাইকমান্ডের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনে বোঝা গেছে, ২৯ জুলাইয়ের অবস্থান কর্মসূচির সময় অর্পিত দায়িত্ব পালনে ও ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ সব নেতার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, এরই মধ্যে অনেককে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। অনেককে শেষবারের মতো সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককে কৌশলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে দলে বা সংগঠনে পদ-পদবি কিংবা নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব আমলনামা খতিয়ে দেখা হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে শ্রাবণকে তার দায়িত্ব পালন থেকে সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছে। এটা রুটিন কাজ। অন্য ব্যাপার আমার কিছু জানা নাই।’

অনেকেই ছিলেন অনুপস্থিতি, ছিল সমন্বয়হীনতা 

২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি সফল করে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় ক্ষুব্ধ হয়েছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যই ছিল, মহাসমাবেশের পরদিন ‘বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিতে আরেকটি বড় ধরনের শোডাউন’ দেওয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়ে ওঠেনি। এ কারণে ওই কর্মসূচির পর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে কর্মসূচি সফল করার জন্য ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অনুপস্থিতি ও সমন্বয়হীনতা’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই।

গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ শেষে ২৯ জুলাই রাজধানীর ৫টি প্রবেশমুখে উত্তরা, গাবতলী, নয়াবাজার বিএনপি অফিসের সামনের অংশ, যাত্রাবাড়ী ও মুক্তিসরণিতে এ অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানিয়েছে, এ কর্মসূচি সমন্বয় ও সফল করার দায়িত্বে ছিলেন শনির আখড়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নয়াবাজার বিএনপি অফিসের সামনে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উত্তরায় বিএনএস সেন্টারের কাছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, গাবতলী এস এ খালেক বাসস্টেশনের সামনে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং মুক্তিসরণিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। তাদের সহযোগিতা করতে বিএনপির ঢাকা নগরের দুই কমিটি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যেও দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়।

এই কর্মসূচির সময় ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় প্রথম ধাপে কেউ বাধা পেলে দ্বিতীয় ধাপে কারা এগিয়ে যাবেন, সে দায়িত্বও দল এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্যে ভাগ ও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সক্রিয়ভাবে উপস্থিত না থাকায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপে ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমান ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কেউই তাদের নির্ধারিত অবস্থান কর্মসূচিতে যাননি কিংবা সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেননি। মির্জা আব্বাস শনির আখড়ায় এবং নজরুল ইসলাম খান গাবতলীতে কর্মসূচির সময় অনুপস্থিত ছিলেন। গাবতলীতে আমান উল্লাহ আমান স্বশরীরে অংশ নিলেও সেখানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। পুলিশি বাধার মুখে তেমন কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেননি তারা।

অন্যদিকে উত্তরায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ড. মঈন খান ও কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। উত্তরার স্পটে গাজীপুর জেলা এবং মহানগরের সাংগঠনিক অংশগ্রহণ ব্যাপক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সে রকম হয়নি।

দলের হাইকমান্ড সূত্র জানাচ্ছে, অবস্থান কর্মসূচিতে দায়িত্বশীল নেতাদের ভূমিকা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করে দেখা হয়েছে। এদের অনেককে ওই দিন ফোন করেও পাওয়া যায়নি। অনেকে নির্দিষ্ট স্থানে না গিয়ে নিজেকে নিরাপদ রেখে মিছিল করে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়েছেন। অনেকে নেতাকর্মীর সঙ্গে সমন্বয় না থাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকে সংঘর্ষের পরপরই নেতাকর্মীদের রেখে পালিয়ে গেছেন। কর্মসূচির দায়িত্বশীল নেতাকে ব্যর্থ করতে কেউ কেউ আবার নিজের অনুসারীদের না নিয়ে নিজে এককভাবে মাঠে থেকেছেন।

নেতাদের অভিমত

এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, অবস্থান কর্মসূচিতে নেতাদের সমন্বয় ছিল না। নানা কারণে এটা হতে পারে। কিন্তু তাদের সদিচ্ছার অভাব ছিল না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও একই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো সমন্বয়হীনতা, সাংগঠনিক দুর্বলতা নেই। ঢাকায় মহাসমাবেশের মতো একটি বিশাল কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করে নেতাকর্মীরা পরের দিন অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আগের দিনের কর্মসূচির বিশালত্ব দেখে সরকার ভয় পেয়েছে। সে কারণে অবস্থান কর্মসূচিতে তারা বেপরোয়া আক্রমণ চালিয়েছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে কর্মসূচির সময় নেতাকর্মীরা মাঠে নামেননি। কিন্তু এসব অপপ্রচারে কোনো কাজ হবে না। জনগণের আন্দোলনেই এই সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে।

তবে নেতাদের এমন বক্তব্যের পরও বিএনপি থেকে কর্মসূচি পালনে ব্যর্থতার কারণে কে বা কারা সাংগঠনিক পদক্ষেপের শিকার হচ্ছেন, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটছে না।