“নববর্ষ” উদযাপন একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। তবে কবে থেকে “নববর্ষ” বা “বর্ষ” গণনা শুরু হয়েছে তার সঠিক তথ্য আজও মিলেনি। মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ সূর্য উদয়-অস্তের ভিত্তিতে দিনরাত গণনা শুরু করেছিল। কিন্তু মাস গণনার শুরু করেছিল চাঁদের ভিত্তিতে। অর্থাৎ মানুষ চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি দেখে মাস গণনা করতো। এক শুক্লপক্ষ থেকে অন্য শুক্লপক্ষ কিংবা এক কৃষ্ণপক্ষ থেকে অন্য কৃষ্ণপক্ষ পর্যন্ত একমাস ধরে তখন মাস গণনা করা হতো। এভাবে ১২ চান্দ্র মাসে এক বছর গণনা করা হতো। পরবর্তীতে সৌর বছর দিয়ে বর্ষ গণনা শুরু হয়। তাই বর্ষ গণনার ভিত্তি এক নয়। কেউ গণনা করে চন্দ্রের ভিত্তিতে আবার কেউ সূর্যের ভিত্তিতে। তবে একই দিন থেকে সব বছর গণনা শুরু হয়নি। ফলে বর্ষ গণনার ভিত্তি অনুযায়ী বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন সময়ে “নববর্ষ” উদযাপন করে থাকে।
পৃথিবীর প্রতিটি জাতিই নিজ নিজ বছরের প্রথম দিনকে বরণ করে নেয় নিজস্ব সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসারে। সব জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নববর্ষের প্রথম দিনটি বরণের ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাসও রয়েছে। যেমন ইরানের নববর্ষ “নওরোজ” পালিত হয় বসন্তের পূর্ণিমায়। অন্যদিকে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ Happy New Year (হ্যাপী নিউ ইয়ার) উদযাপিত হয় ১লা জানুয়ারি। আবার বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয় ১লা বৈশাখে। হিজরি নববর্ষ পালিত হয় মুহররম মাসের ১ তারিখে। প্রাচীন মিশরীয়, ফিনিশীয় ও ইরানীয়গণ ‘নববর্ষের’ উৎসব পালন করতেন শারদীয় বিষুব দিনে ২১শে সেপ্টেম্বরে। প্রাচীন গ্রীক ও রোমকগণ খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত এ উৎসব পালন করতেন সূর্যের দক্ষিণ অয়নাস্ত দিনে ২১শে ডিসেম্বর। প্রাচীন ইহুদীগণ এ উৎসব উদযাপন করতেন বসন্ত বিষুব দিনের ২১শে মার্চ। ইংল্যান্ডের এ্যাঙ্গলো সেক্সনগণ এ উৎসব পালন করতেন সূর্যের দক্ষিণ-অয়নাস্ত দিনে ২৫শে ডিসেম্বর। তিব্বতীয়দের ‘নববর্ষের’ উৎসব “লোগসর”, শ্যামবাসীদের(থাইল্যান্ড) “ত্রাত”, ভিয়েৎনামীদের “তেত” উৎসব সৌরমাস-সমন্বিত চান্দ্রমাসের হিসাবে পালিত হত ফেব্রুয়ারী মাসের গোড়ায়, মধ্যে অথবা শেষ ভাগে। ইহুদীরা নববর্ষের উৎসব “রাশ হুশনা” এবং প্রাচীন আরবগণের “উকাজের মেলা” চান্দ্র বৎসরের প্রথম মাস মহরমে আন্তর্গোত্রিক যুদ্ধ বিগ্রহ, বিবাদ বিসংবাদ বন্ধ করে খেলাধুলা ও পানাহারে মেতে পালন করতেন। প্রাচীন ইরান ও প্রাচীন ভারতবর্ষের আর্যজাতির “নববর্ষ” পালনের সময় ও পদ্ধতি প্রায় একইরূপ ছিল। এরা সৌরমাস সমন্বিত চান্দ্রমাসের হিসাবে “নববর্ষের” উৎসব পালন করতেন।
ইরানে ছয়দিন ধরে “নওরোজ” এবং ভারতে তিন দিনব্যাপী “দোল” উৎসব এরূপ “নববর্ষ” জ্ঞাপক উৎসব। “দোল” ফাল্গুনী(দোল) পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয়। “নওরোজ” ও ফাল্গুন মাসের মধ্যেই উদযাপিত হয়। এ সবের প্রত্যেকটির সাথে বহু অনুষ্ঠান জড়িয়ে আছে এবং তার প্রায় সব কটিই ধর্মসম্পৃক্ত। এর থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, “নববর্ষ” ও তার অনুষ্ঠান প্রাচীন এবং এত প্রাচীন যে, তখনও মানুষের মধ্যে ধর্মবোধ জাগেনি। এর বহু যুগ পরে তার সাথে ধর্মবোধ ও আচারনিষ্ঠা যুক্ত হয়েছে।
গবেষনায় দেখা গেছে, “নববর্ষ” উদযাপনের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। পারস্যের বর্ষবরণ উৎসব “নওরোজ” পালিত হয়ে আসছে প্রায় ১৫ হাজার বছর ধরে। ব্যবিলনে নববর্ষ উৎসব উদযাপন করা হতো প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগেও। রোমানরা অনেক আগেই বসন্তকালে নববর্ষের উৎসব পালন করতে শিখেছিল ব্যবিলনীয়দের কাছ থেকে। আর খ্রিস্ট জন্মের অনেক আগ থেকেই ইহুদিরা নববর্ষ উৎসব “রাশ হুশনা” যথারীতি পালন করতো। পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান সম্প্রদায় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ি ১লা জানুয়ারিতে Happy New Year উৎসব পালন করে আসছে অনেক আগ থেকেই। হিজরি নববর্ষ উদযাপনে কোন আড়ম্ভরতা নেই। তবে না থাকলেও আরবসহ গোটা মুসলিম বিশ্বেই প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে এ দিনটি ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যে পালিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে বাংলা নববর্ষ “পহেলা বৈশাখ” উদযাপিত হচ্ছে মাত্র কয়েক শতক ধরে।
নববর্ষ নিয়ে ভিন্ন জাতির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস বা মিথ প্রচলিত আছে। যেমনঃ মেক্সিকোর নববর্ষের সূচনার সময় অর্থাৎ রাত ১২টা বাজার ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে কেউ যদি একটি করে আঙ্গুর খায়, তাহলে প্রতিটি ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে নতুন বছর তাদের জন্যে সৌভাগ্য বয়ে আনবে বলে মেক্সিকানরা বিশ্বাস করে। চেরিফুলের দেশ জাপানেও নববর্ষে দরজার মুখে গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া আর উজ্জ্বল রঙের ফল ঝুলিয়ে রাখা হয়। এর ফলে বাড়িতে সুখ নেমে আসবে এরকম ধারণা করা হয়। চীন ও বার্মায় নববর্ষের প্রথম দিন গাছ এবং পাহাড়ের চূড়ায় প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। কথিত আছে যে, ভাগ্য ও ফসল ভালো হওয়ার জন্যই তারা এ কাজটি করেন।
গ্রাম-বাংলার গৃহস্থ বৌ-ঝিয়েরা বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু বাঙ্গালিরা চৈত্র মাসের শেষ দিনের সন্ধ্যায় এক হাঁড়ি পানিতে একটি কচি আমের ডাল বসিয়ে এতে এক মুষ্ঠি আতপ চাল সারা রাত ধরে ভিজিয়ে রাখেন। “পহেলা বৈশাখ”-এর ভোর বেলায় সূর্যোদয়ের পূর্বে ঘুম থেকে উঠে তারা ভিজা চাল ঘরের সবাইকে খেতে দেন এবং হাঁড়িতে ডোবা আমের শাখা দিয়ে সকলের গায়ে পানি ছিটাতে থাকেন। এতে গৃহে নতুন বছরের শান্তি নেমে আসবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
এছাড়া বাংলা নববর্ষে ‘পুণ্যাহ’ নামক আরও একটি সার্বজনীন কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানের কথা না বললেই নয়। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, “পুণ্যাহ” শব্দের মৌলিক অর্থ “পুণ্য কাজ”। প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের জন্যে বাংলার জমিদারদের কাছারিতে অধিকাংশ “পুণ্যাহ” পহেলা বৈশাখে উদযাপিত হত। বেশ কিছুসংখ্যক ‘পুণ্যাহ’ সারা মাস ধরে পূর্বনির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠিত হত। সেদিন অধিকাংশ প্রজা ভাল কাপড়চোপড় পরে জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে আসতেন। কোথাও কোথাও প্রজাদের মিষ্টিমুখ করানো হত। এ দিনে জমিদাররা প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবর নিতেন। একে অপরের সহানুভুতিশীল হতেন। এখন আর সেই জমিদারী প্রথাও নেই, “পুণ্যাহ” উৎসবের প্রচলনও নেই। কবেই কালের অতল গর্ভে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যখন ছিল, তখনও এতে কোন ধর্মীয় অনুশাসন অথবা ক্রিয়াকলাপ ছিল না। এ ছিল জমিদার প্রজার মধ্যে মিলন ঘটানো ও সদিচ্ছা বিনিময় করার মাধ্যমে খাজনা আদায়ের প্রীতিপূর্ণ অনুষ্ঠান।
যা-ই হোক, ভিন্ন জাতির বর্ষ গণনা যেমন ভিন্ন তেমনি ভিন্ন জাতির নববর্ষের উৎসবও ভিন্ন। আর এজন্যেই প্রত্যেক জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির ভিত্তিতে নববর্ষ উদযাপন করে থাকে।
এ কথা ধ্রুব সত্যি যে, বাংলা নববর্ষের সূচনা মুসলমানদের হাতেই। বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন হয় ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে, এ কথা ইতিহাস স্বীকৃত। মুসলিম ঐতিহ্যের হিজরি সনকে ভিত্তি করেই মুঘল সম্রাট আকবর বাংলার কৃষকদের সুবিধার্থে বাংলা সনের প্রর্বতন করেন। বাংলা নববর্ষের পদচারণা খুব বেশি দিনের নয়। চলতি নববর্ষে বাংলা সন ১৪৩০তম বছরে পদার্পন করলেও মূলত এর যাত্রা শুরু হয়েছে মুঘল শাসনামলে মাত্র ৪৬৭ বছর আগে।
“বাংলা ক্যালেন্ডার” যা “বাংলা সন” নামে পরিচিত তা ১৫৮৪ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের সময় সরকারীভাবে চালু করা হয়। এটা প্রথমে “তারিখ-এ-এলাহি” নামে পরিচিত ছিল। “তারিখ-এ-এলাহি” সম্রাট আকবর-এর শাসনামলের ২৯ বছরের মাথায় ১৫৮৪ সালের ১১ মার্চ প্রথম চালু করা হয়। যদিও এটা আকবর-’র রাজত্বের ২৯ বছর শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার পর রাজকার্যের সুবিধার্থে চালু করা হয় তবুও এর গণনা করা হয় ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সাল থেকে যখন সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তখন তারিখ-এ-এলাহি-’র উদ্দেশ্য ছিল আকবর রাজত্বকে আরো গৌরবময় করে তোলা এবং রাজস্ব আদায়ে চলমান অসুবিধাসমূহ দূর করা। এর আগে মোঘল সম্রাট হিজরি সাল ব্যবহার করছিলেন রাজস্ব আদায়ের কাজে। কিন্তু হিজরি সাল ব্যবহারের কারণে কৃষকদের সমস্যা হত কারণ চন্দ্র ও সৌর বছরের মধ্যে ১১ বা ১২ দিনের পার্থক্য ছিল। ফলে ৩১টি চন্দ্র বছর ৩০টি সৌর বছরের সমান হয়ে যেত। তখন রাজস্ব চন্দ্রবছর অনুযায়ী আদায় করা হত আর চাষাবাদ করা হত সৌরবছর অনুযায়ী। সম্রাট আকবর তার শাসনের প্রথমেই এই সমস্যা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং এর একটি বৈজ্ঞানিক কার্যকর সমাধানও খুঁজছিলেন। তাই তিনি প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক এবং রাজজ্যোতিষী আমির ফাতেউল্লাহ সিরাজীকে পরিবর্তন আনার আদেশ দেন। রাজজ্যোতিষী আমির ফতেউল্লাহ সিরাজী তখন অনেক গবেষণার পর অত্যন্ত সুকৌশলে চান্দ্র সন কে সৌর বৎসরে পরিণত করে হিজরি ৯৬৩ সনকে ভিত্তি সন ধরে “বাংলা সন” গণনার পরামর্শ দেন। তখন সম্রাট আকবর সমগ্র রাজ্যে ৯৬৩ হিজরি সনকে ভিত্তি ধরে বাংলা সন গণনার নির্দেশ দেন। এরই ফলে ৯৬৩ মহররমের প্রথম মাসকে তারিখ-এ-এলাহি-’র প্রথম মাস ধরে গণনা করা শুরু হয়। যেহেতু ৯৬৩ হিজরি সনের মহররমের প্রথম মাস বৈশাখ মাসের সাথে মিলে যায় সেহেতু বৈশাখ মাসই হয় তারিখ-এ-এলাহি-’র প্রথম মাস যা আগে শাকাব্দ অনুযায়ী চৈত্র মাসকে প্রথম মাস হিসেবে ব্যবহার করত বাঙ্গালীরা। এরই ফলে পারস্য তথা ইরানের নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান নওরোজের আদলে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সূচনাও হয়। তখন সম্রাটের আনুকূল্যে ও পৃষ্ঠপোষকতায় জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হতো। নওরোজ অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মিনা বাজার। আর এ মিনা বাজারের আদলে বর্তমানে বাংলা নববর্ষ উৎসবে যোগ হয়েছে বৈশাখীমেলার যা বান্নি বা বারোয়ারি উৎসব নামেও পরিচিত।
উল্লেখ্য যে, হিজরি সন গণনা শুরু হয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। খ্রিস্ট জন্মের ৬২২ বছর পরে মহানবী (সাঃ) মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় গমনই হল হিজরত। তখন হজরত ওমর (রাঃ) মহানবীর এ ঐতিহাসিক হিজরতকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যে হিজরতের বছরকে ভিত্তি বছর ধরে মদিনায় গমনের দিন থেকে হিজরি সন গণনার প্রবর্তন করেন।
তারিখ-ই-ইলাহি চালু হবার পর সেই সময়ের মুসলমান সমাজে পালাপার্বণের সংখ্যা নির্দিষ্ট হয় বছরে চোদ্দটি। তার মধ্যে একটি প্রধান উৎসব হল ‘নওরোজ’ বা নববর্ষ পালন-উৎসব। পয়লা বৈশাখের দিনটিই সেই দিন। পৃথিবীর ‘নববর্ষের’ প্রাচীনতম উৎসবগুলোর মধ্যে ইরানীদের ‘নওরোজ’ অন্যতম। এটি ছ’দিনের উৎসব। ইরানীরা নববর্ষের প্রথম দিনকে ‘নওরোজ-ই-কচুক’ বা ছোট নববর্ষ এবং ষষ্ঠ দিনকে ‘নওরোজ-ই-বুজর্গ’ বা সম্ভ্রান্ত নববর্ষ নামে অভিহিত করে থাকেন। এক মহানন্দময় পরিবেশে পানাহার, নাচ, গান, বাদ্য ও উল্লাসের মধ্য দিয়ে ছয়দিন আগে নতুন দিনে ‘নওরোজ-ই-কচুক’-এ যে উৎসব শুরু হয় ‘নওরোজ-ই-বুজর্গ’-এ তা চরমে উঠে শেষ হয়।
ইরানীদের ‘নওরোজ’ উৎসবের একটা মুসলিম-সম্পৃক্ত ইতিহাস আছে। মদিনা, উত্তর ভারত ও পরিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের সাথেই এ ইতিহাসের যোগ দেখা যায়। হজরত মুহম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের বছর চল্লিশেক আগে মদিনা যখন পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনস্ত ছিল, তখন ইরানীরা মদিনায় তাঁদের নিজস্ব “নওরোজ” উৎসবের প্রচলন করেন। মহানবী (সাঃ) যখন মদীনায় হিজরত করেন, তার দুই বছর পরে মুসলমানদের জন্য “ঈদ” উৎসব প্রবর্তন করে তিনি মদীনা থেকে তথা মুসলিম জগত থেকে সেই “নওরোজ” উৎসবকে বিতাড়িত করেন। তবে, মুসলিম ইরানে উৎসব হিসাবে “নওরোজ” ও “ঈদ” দুটিই প্রতিপালিত হলেও, “নওরোজ”-’র জাঁকজমক, দীর্ঘতা, আনন্দ ও ভোগবিলাস প্রভৃতির দিক থেকে গুরুত্ব “ঈদ” থেকে অনেক গুণে বেশী। ঐতিহাসিক তথ্য মতে, ইরান থেকে সম্রাট হুমায়ুন “নওরোজ” উৎসবটি উত্তর ভারতে আমদানী করেন। আর সম্রাট আকবরের রাজত্বের (১৫৫৬-১৬০৫) গোড়া থেকেই “নওরোজ” অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। তাতে হেরেমবাসিনী নারীরা শখের দোকান সাজিয়ে বৈশাখী মেলার মত “মীনা বাজার” বসাতেন। এমন এক ‘মীনা বাজারে’ যুবরাজ সেলিম (পরে সম্রাট জাহাঙ্গীর) কুমারী মেহেরুন্নেসার (পরে সম্রাজ্ঞী নূরজাহান) প্রেমে আত্মহারা হয়েছিলেন। পরে বাবার মতই অন্য আরেক নওরোজের উৎসবে যুবরাজ খুররমও (পরবর্তীকালে সম্রাট শাহজাহান) প্রথম চোখের দেখায়ই হৃদয় দিয়ে ফেলেন কিশোরী মমতাজকে (পরে সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহল)। নওরোজ উৎসব না হলে ইতিহাসের পাতায় নুরজাহানই বা কোথায় থাকতেন, কোথা থেকেই বা তৈরী হত শ্বেতমর্মরের তাজমহল। ভারতীয় সমাজে মুঘল সভ্যতার এক অন্যতম অবদান এই বাংলা ক্যালেন্ডার।
কোন কোন ইতিহাসবিদ মনে করেন, বাংলার রাজা শশাঙ্ক এই বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রণেতা। তাঁদের মতে, রাজা শশাঙ্কের আসাম বিজয়ের স্মৃতি স্বরূপ এই ক্যালেন্ডারের সৃষ্টি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের প্রামাণ্য তথ্য হল এই যে, মহারাজ শশাঙ্ক বেনারস বিজয়ের পর চিল্কাহ্রদ পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে তা অধিকার করলেও আসামের পথে তিনি কখনোই যাননি। তাই আসাম বিজয়ের সঙ্গে বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরীর তথ্যটি প্রমাণের অভাবে এভাবেই ত্যাজ্য হয়েছে।
তারিখ-এ-এলাহি-’র শুরুর পর যে ৪০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে তাতে হিজরি এবং বাংলা সনের মধ্যে ১৪ বছরের ব্যবধান ছিল। কারণ হিজরি সন হিসাব করা হয় চন্দ্রকে ভিত্তি করে আর বাংলা সন হিসাব করা হয় সূর্যকে ভিত্তি করে। কিন্তু বাংলা সন আর গ্রেগরিয়ান সন এর মধ্যে কোনো পার্থক্য হয়নি কারণ উভয়ই সূর্যকে ভিত্তি করে গণনা করা হয়।
সপ্তাহের নামঃ আকবরের রাজত্বের সময় মাসের প্রত্যেকদিনের আলাদা নাম ছিল। কিন্তু যেহেতু মাসের ৩১দিনের ৩১টা নাম মনে রাখা কষ্টকর তাই আকবরের প্রপৌত্র শাহজাহান সপ্তাহ পদ্ধতির সুচনা করেন তার ফসলী সাল পদ্ধতিতে। তার সময়কার সপ্তাহের নামকরণগুলি হচ্ছেঃ ১. সূর্য এর জন্য রবি (Sunday) ২. চাঁদ এর জন্য সোম (Monday) ৩. মঙ্গল গ্রহ এর জন্য মঙ্গল (Tuesday) ৪. বুধ গ্রহের জন্য বুধ (Wednesday) ৫. বৃহস্পতি গ্রহের জন্য বৃহস্পতি (Thursday) ৬. শুক্র গ্রহের জন্য শুক্র (Friday) এবং ৭. শনি গ্রহের জন্য শনি (Saturday) ইত্যাদি।
মাসের নামঃ প্রথমদিকে মাস এর নাম ছিল ফারওয়ারদিন, খোরদাদ, তীর, মুরদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আযার, দে, বাহমান ইত্যাদি। একথা জানা যায় নি যে কোন মাস গুলোর নাম থেকে বর্তমানের বৈশাখ জৈষ্ঠ মাসের নামগুলো এসেছে। তবে ধারণা করা হয় যে, ৭৮খ্রিস্টাব্দে “সাকা” জাতির রাজত্বের সময় প্রচলিত শাকাব্দ থেকে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত বাংলা মাসের নামগুলো হচ্ছেঃ ১. বিশাখা (Librae) থেকে বৈশাখ ২. জাইষ্ঠা (Scorpii) থেকে জৈষ্ঠ ৩. আষাঢ়া (Sagittarii) থেকে আষাঢ় ৪. শ্রাবণা (Aquilae) থেকে শ্রাবণ ৫. ভাদ্রপাদা (Pegasi) থেকে ভাদ্র ৬. আশ্বিনী (Arietis) থেকে আশ্বিন ৭. কৃতিকা (Tauri) থেকে কার্তিক ৮. পুস্যা (Aldebaran) থেকে পৌষ ৯. আগ্রৈহনী (Cancri) থেকে আগ্রহায়ন ১০. মাঘা (Regulus) থেকে মাঘ ১১. ফাল্গুনী (Leonis) থেকে ফাল্গুন এবং ১২. চিত্রা (Virginis) থেকে চৈত্র।
ষড়ঋতুঃ বাংলা সনকে ছয়টি কাল বা ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ঋতুতে দুটি করে মাস রয়েছে। যথাঃ বৈশাখ জৈষ্ঠ মিলে গ্রীষ্মকাল, আষাঢ় শ্রাবণ মিলে বর্ষাকাল, ভাদ্র আশ্বিন মিলে শরৎকাল, কার্তিক অগ্রহায়ন মিলে হেমন্তকাল, পৌষ মাঘ মিলে শীতকাল, এবং ফাল্গুন চৈত্র মিলে বসন্তকাল।
কৃষিঋতুঃ কৃষিকার্যের সুবিধার্থে বাংলা সনকে আরো দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলোকে কৃষিঋতু বলে। যথাঃ রবি মৌসুম ও খরিপ মৌসুম। রবি মৌসুমের মেয়াদকাল অগ্রহায়ন থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত। আর খরিপ মৌসুমের মেয়াদকাল চৈত্র থেকে কার্তিক পর্যন্ত। খরিপ মৌসুম আবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথাঃ খরিপ-১ ও খরিপ-২। খরিপ-১ চৈত্র থেকে আষাঢ় পর্যন্ত এবং খরিপ-২ শ্রাবণ থেকে কার্তিক পর্যন্ত ধরে গণনা করা হয়। রবি মৌসুমের শস্যকে বলা হয় রবি শস্য আর খরিপ মৌসুমের শস্যকে বলা হয় খরিপ শস্য। তবে ষড়ঋতু ও কৃষিঋতু এদের কোনটিই বাংলা সনের ক্যালেন্ডারে দেখা না গেলেও কার্যক্ষেত্রে এদের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এ দুই ঋতু ছাড়া যেন বাঙালি জাতির কৃষ্টি-সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে না।
বৈশাখ মাসের নামকরণঃ যে মাসটিকে আমরা বৈশাখ বলি, সেই মাসে চাঁদ বিশাখা নক্ষত্রে এসে পূর্ণিমা দেখায়। আর এ বিশাখা থেকেই মাসটির নামকরণ হয়েছে বৈশাখ।
সন এবং তারিখঃ বাংলা ক্যালেন্ডারের মতোই ‘সন’ এবং ‘তারিখ’ শব্দ দুটির উৎপত্তি আরবী শব্দ থেকে। ‘সন’ অর্থ বৎসর, ‘তারিখ’ অর্থ ইতিহাস। আর ‘সাল’ শব্দটির উৎপত্তি পার্সী শব্দ থেকে, যার অর্থ বৎসর। যেহেতু বাংলায় ভূমি-রাজস্ব আদায় ঠিক ঠিক করার জন্যেই এই ক্যালেন্ডারের প্রচলন, তাই তারিখ-এ-এলাহিকে সেই প্রথম দিকে ‘ফসলি সন’ নামেও অভিহিত করা হত। মুঘল রাজত্ব শেষ হবার সাথে ‘ফসলি সন’ নাম মুছে গিয়ে এখন শুধু ‘সন’ শব্দটাই আছে। বাংলা সালের দৈর্ঘ্য ৩৬৫দিন। কিন্তু পৃথিবীর সুর্য কে প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫দিন ৫ঘন্টা ৪৮মিনিট ৪৭সেকেন্ড সময় লাগে। এই ঘাটতি দূর করার জন্য গ্রেগরিয়ান সালে প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসের সাথে একদিন যোগ করা হয়। শুরুর দিকে বাংলা সাল এই অতিরিক্ত সময়কে গণনায় নেয় নি। পরে এই ঘাটতি দূর করার জন্য বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে এবং ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটা কমিটি গঠন করা হয় ১৯৬৬সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি। পরে কমিটির সুপারিশে ঋতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাস কে ৩১ দিনের এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ৩০ দিনের হিসাবে গণনা করা শুরু হয়। আর প্রতি চার বছর পর পর অধিবর্ষ বা লিপ-ইয়ার-এ ফাল্গুন মাস কে ৩১ দিন ধরা হয়।
তিথিঃ “তিথি” মানে “দিন” বা “সময়”। জ্যোতির্বিজ্ঞানে চন্দ্রকলার হ্রাস-বৃদ্ধি দ্বারা নির্দিষ্ট সময়কেই তিথি বলে। তিথি দ্বারা চন্দ্র কতৃক পৃথিবী পরিক্রমনে দিনের হিসেব রাখা হয়। সেই হিসেবে ৩০তিথি বা দিনে ১মাস। আর ১৫দিনে ১পক্ষ। পূর্ণিমার ১৫দিনকে “শুক্ল পক্ষ” এবং অমাবশ্যার ১৫দিনকে “কৃষ্ণ পক্ষ” ধরা হয়। বর্তমান বাংলা ক্যালেন্ডারে ‘তিথির’ হিসেবও যোগ করা হয়েছে।
নক্ষত্র ও রাশিঃ পৃথিবীর সূর্য-পরিক্রমণের পথটি যেহেতু উপবৃত্তাকার সেহেতু এই বৃত্তপথে যে সমস্ত নক্ষত্র পরিভ্রমণ করছে সেগুলো হচ্ছেঃ কৃত্তিকা, রোহিণী, ব্রাহ্মী, মৃগশিরা, অগ্রহায়ণী, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্য, তিষ্যা, অশ্লেষা, মঘা, পূর্বফাল্গুনী, উত্তরফাল্গুনী, হস্ত, চিত্রা, স্বাতী, বৈশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠ, মূলা, পূর্বসাধ, উত্তরাসাধ, শ্রাবণী, ধনিষ্ঠা, শতভিষক, পূর্বভদ্রপদ, উত্তরভদ্রপদ, রেবতী, আশ্বিনী ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে ১২টি রাশি। এগুল হচ্ছেঃ মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ, মীন ইত্যাদি। আর এভাবেই পৃথিবীর সূর্যকে পরিক্রমণের কথা এবং ঋতু পরিবর্তনের ধারা, তিথি, গ্রহ, নক্ষত্র, রাশি এ সমস্ত কিছু মাথায় রেখেই তৈরী হল আজকের বর্তমান বাংলা ক্যালেন্ডার।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ সব সময় ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ভারতে সেটা কখনও ১৪ আবার কখনও ১৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এর কারণ বাংলাদেশে যে বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হয় সেটাতে ১৯৬৬ সনের পূর্বে কোন লিপ-ইয়ার ছিল না। ফলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে বাংলা ক্যালেন্ডারের একটা অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হতো। ১৯৬৬ সনের ১৭ই ফেব্রুয়ারি ক্যালেন্ডারটিকে সংশোধন করে গ্রেগরিয়ান লিপ ইয়ারের বছরে ফাল্গুন মাসে একটা অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সন থেকে বাংলাদেশে এই ক্যালেন্ডারটি অনুসরণ করা হচ্ছে যদিও ভারতে সনাতন ক্যালেন্ডার মেনে এখনও নববর্ষ পালন করা হয়। তাছাড়া ভারতে আকবরীয় ধারণার বিষয়টাকে বাংলা নববর্ষের প্রকৃত ইতিহাস হিসেবে মানা হয় না বরং রাজা শশাঙ্কের সময়ের ইতিহাসকে তারা বাংলা ক্যালেন্ডারের ইতিহাস মনে করে। রাজা শশাঙ্কের শাসনকাল ছিল ৫৯০ থেকে ৬২৫ খৃষ্টাব্দের মাঝামাঝি পর্যন্ত। মজার বিষয় হলো সেই ইতিহাস অনুযায়ী বাংলা নববর্ষের সূচনা ১৪ এপ্রিল ৫৯৪ খৃষ্টাব্দ, যা বর্তমান ক্যালেন্ডারের সাথে হুবহু মিলে যায়। অন্যদিকে আকবরীয় ইতিহাসে সূচনাকারী দিনটি ছিল একটা বড় ত্রুটি ।
আরেকটি বিষয় এখানে একটু ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন বোধ করছি। প্রতি বছর ইংরেজি নববর্ষের সময় রাত ১২টা ১মিনিটে মানুষ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়। বাংলা নববর্ষেও আজকাল এ প্রথা অনুসরণ করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণই ভুল। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিন শুরু হয় রাত ১২টার পর থেকে কিন্তু বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিন শুরু হয় সূর্যোদয়ের পর থেকে। ঠিক যেমনটা হিজরি ক্যালেন্ডারে দিন শুরু হয় সূর্যাস্তের পর থেকে। ফলে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানো উচিত সকালে সূর্যোদয়ের সময়। বিষয়টা আপাতদৃষ্টিতে খুব সাধারণ মনে হলেও আমরা আসলে দিনের পুরো এক চতুর্থাংশ তথা ছয় ঘণ্টার হেরফের করে ফেলছি। তাছাড়া শুভেচ্ছা যখন বাংলা নববর্ষের জানাচ্ছি তখন এই সামান্য অজ্ঞতাটুকু থেকে বের হয়ে আসতে দোষ কোথায়? আমাদের নববর্ষ বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত নয় বলে কি আমরা একটা ভুল রীতিকেই অনুসরণ করে যাবো? তাহলে ভিনদেশীরা আমাদের থেকে সঠিকটা শিখবে কি করে? তাছাড়া বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত নয় কথাটাও সম্ভবত ঠিক নয়। লন্ডনে অনুষ্ঠিত বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান পুরো ইউরোপে অনুষ্ঠিত সর্ব বৃহৎ এশিয়ান ফেস্টিভাল এবং বাংলাদেশ ও ভারতের বাহিরে সর্ব বৃহৎ বাঙালি অনুষ্ঠান। ফলে আমাদের এই চর্চাগুলো হওয়া উচিত নির্ভুল যাতে আমাদের পরবর্তী বংশধর এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভিনদেশীরাও আমাদের থেকে সঠিকটা দেখতে এবং শিখতে পারে।
দেশজ সংস্কৃতির বাতাবরণে কৌশলে প্রতিবেশী হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির মঙ্গল শোভাযাত্রা, কপালে তিলক-সিঁদুর পরা, উলুধ্বনি দেয়া ইত্যাদি যোগ হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। প্রকৃতপক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা, তিলক-সিঁদুর-ধুতি এদের কোনটিই বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠানের অনুষঙ্গ নয়। বাংলা নববর্ষের সূচনাপর্বে এসবের কোনো বালাই ছিল না। মুসলিম ঐতিহ্যের ভিত্তিতে বাংলা নববর্ষ চালু হলেও মুসলমানদের উদারতার কারণে তা সার্বজনীন অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। আধুনিক কালে মহাধুমধামে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতির বাংলা নববর্ষ উদযাপন মুসলমানদের সেই উদারতারই প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয়।
লেখক: মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী।
[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]