বাংলাদেশ-মরিশাসের বন্ধুত্ব আরো জোরদার হোক

:: মেহজাবিন বানু ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজ সিং রূপন সস্ত্রীক ঢাকায় এসেছেন। এটিই মরিশাসের কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম বাংলাদেশ সফর।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক।

মরিশাসের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় ষষ্ঠ ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সে যোগ দেবেন। তিনি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। মরিশাসের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী সফররত মরিশাসের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়াও তিনি পোশাক শিল্প পরিদর্শন করবেন।

ঢাকায় ১২-১৩ মে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। এতে যোগ দেবেন মরিশাসের প্রেসিডেন্ট। সফর শেষে ১৪ মে তিনি ঢাকা ছাড়বেন।

মরিশাসের প্রাণবন্ত রাজধানী পোর্ট লুইসের অনেক ঘূর্ণায়মান রাস্তার মাঝে মুজিব স্ট্রিট এমন একটি দৃশ্য প্রদান করে যা যে কোনো বাংলাদেশির হৃদয়কে গভীর গর্ব ও আনন্দে ভরিয়ে দেবে। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিজয়ের মাসে মরিশাসে বাংলাদেশ হাইকমিশন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্ট্রিট’-এর যৌথ ই-উদ্বোধনের আয়োজন করে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মরিশাস সরকার তাদের দেশের রাজধানীতে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি রাস্তার নামকরণের অপরিসীম সম্মান আমাদের দিয়েছে।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

মরিশাসের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং স্থানীয় সরকার ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হুসনু এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি (ভার্চুয়াল উপস্থিতি) একযোগে পথফলক উন্মোচন করেন। এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরিশাস প্রজাতন্ত্রের সরকার, বন্ধুপ্রতীম জনগণ এবং যারা এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পন্ন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্ট্রিট’ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক হওয়ায় মরিশাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এটি অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশের এই বীরকে সম্মান জানানোর জন্য মরিশাস সরকারের প্রতি বাংলাদেশ চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে। মরিশাস ও এর জনগণ বাংলাদেশ ও এর জনগণকে দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ গৌরবকে বিদেশের মাটিতে অমর করে রাখার বিশাল উপহার দিয়েছে। তারা আমাদের দেখিয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু হয়তো মর্মান্তিকভাবে মারা গেছেন; আমাদের দেশের জন্য তাঁর অবদান এবং ত্যাগ দেশে এবং বিদেশে বেঁচে আছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার চেতনা জাগিয়ে তুলেছেন, যা মরিশাসে আমাদের বাংলাদেশি শ্রমিকদের দ্বারা প্রায়শই প্রশংসিত হয় এবং দেশে আমাদের ইতিবাচক খ্যাতির ভিত্তি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্ট্রিট পোর্ট লুইসের প্লেইন ভার্টে অবস্থিত।

এই মহান সম্মান ছাড়াও বাংলাদেশ ও মরিশাস ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করে আসছে। উভয় দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক, মূল্যবোধ এবং জনগণের মূল্যবোধ সম্পর্কে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। দুই দেশ অনেক বড় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে একে অপরকে সমর্থন করার পাশাপাশি একে অপরের প্রার্থিতা সমর্থন করেছে। মরিশাসে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) সদর দপ্তর রয়েছে, যার বর্তমান সভাপতি বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় কথা, মরিশাস রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের রেজুলেশনে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছে এবং এই অসহায় মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। একইভাবে চাগোস দ্বীপ সম্পর্কিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের পক্ষে মরিশাসকে সমর্থন করেছে বাংলাদেশ। কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় মরিশাস সরকার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং কেবল তাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য নয়, লকডাউনের সময় বাংলাদেশি কর্মীদের উচ্চ স্তরের যত্ন প্রদানের জন্য ও প্রশংসা করা উচিত। সৌভাগ্যবশত, মহামারী চলাকালীন কোন বাংলাদেশি শ্রমিককে ফেরত পাঠানো হয়নি এবং মরিশাসের নাগরিকদের মতো তারাও বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং সুবিধা এবং টিকা করণের সুবিধা ভোগ করে।

বাণিজ্য ও বাণিজ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে, যদিও বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে বাণিজ্যের বর্তমান পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নয়, তবে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এসএডিসি এবং সিওএমইএসএ (কমসা) ছাড়াও, মরিশাস এখন আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এরিয়া (এএফসিএফটিএ) এর অংশ। ১ জানুয়ারী ২০২১ এ চালু, এএফসিএফটিএ আফ্রিকান বাণিজ্যের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ গেম চেঞ্জার। যেমন, মরিশাসকে “আফ্রিকার প্রবেশদ্বার” হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মরিশাসের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বোর্ডের মতে, ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্যাস, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, গহনা এবং কারুশিল্পের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তারা আফ্রিকার বিশাল বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণের মাধ্যমে এসব খাতে বিনিয়োগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে চান। বিশেষ করে মরিশাস সরকার মরিশাসে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলিকে কর প্রণোদনা দিয়ে অন্যান্য দেশকে ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। ফার্মাসিউটিক্যালসে বাংলাদেশের দক্ষতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি আমাদের দেশের জন্য একটি লাভজনক সুযোগ হবে এবং বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে দুটি মৌরিশীয় টেক্সটাইল কোম্পানি কাজ করছে, সিআইইএল গ্রুপ এবং কম্প্যাগনি মরিসিয়েন ডি টেক্সটাইল লিমিটেড (সিএমটি), যাদের বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশি দের কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য। তদুপরি, মরিশাসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কয়েকজন মৌরিশিয়ান রয়েছে যাদের বাংলাদেশি পণ্যের দোকান রয়েছে। ব্যবসা বিনিময়ের এই চেতনায়, উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও সম্ভাবনা অন্বেষণ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের সেতুবন্ধনে সহযোগিতাকরার জন্য উচ্চতর পরিমাণে সফর হওয়া উচিত।

বর্তমানে পর্যটন, বিমান পরিষেবা, ব্যবসায়িক সহযোগিতা, শ্রম সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের মতো বেশ কয়েকটি পারস্পারিক বিষয়ে কিছু চুক্তি /সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এই চুক্তি/সমঝোতা স্মারকগুলির সমাপ্তি অবশ্যই দু’দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতেও আশা করা যেতে পারে। আমাদের দুই মহান জাতির বন্ধন চিরকালের জন্য সমৃদ্ধ হতে পারে।

 

লেখক: মেহজাবিন বানু, গবেষক ও কলামিস্ট।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net