বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় হাইতির চেয়ে কম

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

জিডিপি অনুপাতে হাইতির স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি বলে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি গোলটেবিল বৈঠক থেকে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একটি মিলনায়তনে ‘হেলথ এক্সপেন্ডিচার: এ ক্রিটিক্যাল চ্যালেঞ্জ ইন এনশিউরিং হেলথ কেয়ার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিভিল সোসাইটির আহবায়ক এবং আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সৈয়দ রোবায়েত। সূচনা বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার বাংলার এডিটর গোলাম মোর্তজা।

মূল প্রবন্ধে ডা. সৈয়দ রোবায়েত বলেন, ২০০০ সালে বাংলাদেশে মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ স্বাস্থ্য ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল। এটা চড়াই উতরাই করে আরেকটু নিম্নগামী হয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে ক্রমাগত বাজেট কমছে। আমাদের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে (ডলার হিসেবে) তবে ২০২১ সালে মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৪০ সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বাজেট জিডিপি অনুপাতে নিম্নগামী। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই চিত্র হচ্ছে, ভুটানের স্বাস্থ্য বাজেটও নিম্নগামী। তবে এখনো ভুটান বাংলাদেশের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করে তাদের জিডিপি অনুসারে। ভারত এ ক্ষেত্রে ক্রমাগত উন্নতি করেছে। ভারতে বাংলাদেশের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি সরকারি ব্যয় স্বাস্থ্য খাতে। শ্রীলংকা উত্থান পতনের মধ্যে থাকলেও আমাদের চেয়ে সাড়ে চারগুণ বেশি আছে। মালদ্বীপ এক্ষেত্রে ক্রমাগত উন্নতি করেছে। মিয়ানমারের ক্রমাগত উন্নতি হয়েছে। নেপালেও উন্নতি হয়েছে। পাকিস্তান উত্থান পতনের মধ্যে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের আশে পাশে কোনো দেশ নেই, কারণ পাকিস্তান ছাড়া কোনো দেশের জিডিপি অনুপাতে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয় এক শতাংশের নিচে নেই।

মূল প্রবন্ধে তিনি আরও বলেন, ২০০০ সালে যদি আমরা দেখি, জিডিপি অনুপাতে মিয়ানমার ও নেপাল বাংলাদেশের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে সরকার কম ব্যয় করতো। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যয় করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি সারা পৃথিবীর সবগুলো দেশের তুলনা করি জিডিপি অনুপাতে তাহলে সবচেয়ে কম স্বাস্থ্য খাতে সরকার ব্যয় করে এমন রাষ্ট্রের তালিকায় প্রথম স্থানে যে দেশ আছে, তার নাম বেনিন। বেনিনের স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে বেনিনের পরের নামটি হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ সারা বিশ্বে নিম্নতম স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। তালিকার তিন নম্বরে থাকা হাইতির স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় বাংলাদেশের থেকে বেশি। হাইতির স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ ব্যয় শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও আলোচনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাইনুল ইসলাম, আইপাস বাংলাদেশের হেলথ ডিরেক্টর ডা. ওয়াহিদা সিরাজ, আইসিডিডিআরবি’র সায়েন্টিস্ট ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান, নারী পক্ষের প্রজেক্ট ডিরেক্টর সামিয়া আফরিন, কেয়ার বাংলাদেশের হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশান প্রোগামের ডিরেক্টর ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার, ওজিএসবির সভাপতি ডা. ফারাহানা দেওয়ান, আইন ও শালিস কেন্দ্রের প্রজেক্ট অফিসার সান্তা ইসলাম, প্রথম আলোর সাংবাদিক শিশির মোড়ল প্রমুখ।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের অধিকাংশ ব্যক্তি দেশের বাইরে চিকিৎসা গ্রহণ করায় দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। তারা যদি দেশেই চিকিৎসা গ্রহণ করতো তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র পাল্টে যেত।

বৈঠক থেকে বক্তারা রোগীদের পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয় কমানোর জন্য সরকারি বরাদ্দ এবং সরকারের ওষুধ কোম্পানি যাতে আরও বেশি ওষুধ উৎপাদন করে সে বিষয়ে জোর দেন। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের জন্য যোগ্য এবং দক্ষ জনবল তৈরির বিষয়েও তারা গুরুত্ব আরোপ করেন।