ঠিক বাংলাদেশের মতই দীর্ঘদিনের স্বৈর শাসনের পতন হলো সিরিয়ায়। শেখ হাসিনার মত একই কায়দায় পালাতে হলো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে।
শেখ হাসিনা যেমন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন ঠিক তেমনি বাশার আল আসাদও আশ্রয় নিয়েছেন তার বন্ধুপ্রতিম দেশ রাশিয়ায়। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনামলের অবসান হয়েছে। আর বাংলাদেশে অবসান হয়েছে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালানোর পর দেশের আপামর জরগণ যেভাবে তাদের ক্ষোভ ঝেড়েছিল তার বাসভবন ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায়ও ঠিক একই কায়দায় পলাতক সিরিয়া প্রধানের বাসভবন ভাঙচুর করেছে সেখানকার বিদ্রোহীরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ছোট দেশ হতে পারে কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে নজির স্থাপন করেছে জুলাই আগস্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে তারা যে আসলেই মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ করে যেভাবে দেশকে স্বাধীন করেছিল সেভাবেই আবার রক্ষাও করতে পারে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন অনেক ভালো।
তারা বলছে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যেমন আমরা একজন ড. ইউনুস পেয়েছি ঠিক তেমনই একজন কান্ডারী প্রয়োজন এখন সিরিয়ার।
তবে দুদেশের বিদ্রোহের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য আছে। যেমন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেই পালিয়েছেন আর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ না ছেড়ে পালিয়ে মস্কোতে গিয়ে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
আরেকটি পার্থক্য হলো সেখানে ১৪ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলছিল যেটা খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করছিল। সে তুলনায় বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ ছিল না কিন্তু ছিল ক্ষমতা কুক্ষীগত করতে বিরোধীদের একেবারেই নিশ্চিহ্ন করা, হত্যা, গুম, শোষণ আর লুটপাটের রাজনীতি।
উল্লেখ্য বাশার আল আসাদ সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের পদে আসেন ২০০০ সালে। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।
২০১১ সালে প্রথম বাশারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমেই ২০২৪ সালে শেষ সময়ে এসে সিরিয়ায় অবসান হলো আসাদ রাজত্বের।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ১৩ বছরে প্রাণ হারিয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কোটি কোটি মানুষ।
এদিকে শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানও দেশ স্বাধীন হবার পর প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি দুটো পদেরই স্বাদ গ্রহণ করেছেন। তিনিও চেয়েছিলেন ক্ষমতা তার কাছেই রাখতে যার দরুণ তাকেও সে প্রতিদান পেতে হয়েছে পঁচাত্তরে। ঠিক তেমনি শেখ হাসিনাও ছিলেন ক্ষমতা প্রেমি। ২০১৯ সালে চতুর্থবারের মত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় এসে টানা ১৫ বছর একতরফা শাসন করেন বাংলাদেশকে। যার খেসারত তিনিও পেলেন ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
অন্যদিকে একই পথে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানকেও। পাকিস্তানেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকরা বিদ্রোহ করছে দেশটির বর্তমান সরকার শেহবাজ শরীফের বিরুদ্ধে।