বাঁশখালীর খাল ও ছড়াগুলো মুক্ত করা জরুরি | মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম

:: মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম ::
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

দখল-দূষণে ধুঁকছে বাঁশখালী ২৯টি সরকারি খাল ও ছড়া। বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে অনেক খাল। ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যক্তি-গোষ্ঠী খাল দখল করে গড়ে তুলেছে নানান স্থাপনা। পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে সাগর, মাঝখানে জলকদর খাল উত্তর দক্ষিণ মানচিত্র অপূর্ব এক অনন্য জনপদ নাম বাঁশখালী উপজেলা। এই উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত খালটিই জলকদর খাল।

এই উপজেলায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষের বসবাস। ৩৭৬.৯০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে এই উপজেলার ঐতিহ্যের বিশাল অংশজুড়ে জলকদর খাল। খানখানাবাদের উত্তর সীমান্তে ঈশ্বরবাবুর হাট ও রাতারকুল গ্রাম ঘেঁষে জলকদর সাঙ্গু নদে মিলিত হয়েছে। জলকদর খাল শঙ্খ নদী হয়ে খানখানাবাদের অভ্যন্তরে বাহারছড়া, কাথারিয়া, সরল, গন্ডামারা, শীলকূপ, ছনুয়া, শেখেরখীল মধ্যবর্তী হয়ে আবারও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলেছে এই শঙ্খ নদী। এই জলকদর খালের এ পাড়ে-ওই পাড়ের সঙ্গে সংযোগ খাল বা ছাড়াগুলো হচ্ছে, পুকুরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, কালীপুর, বৈলছড়ি, কাথরিয়া, সরল বাঁশখালী পৌর এলাকা, শীলকূপ গন্ডামারা, চাম্বল, শেখেরখীল, ছনুয়া ও পুঁইছছি ইউনিয়নের ২৮ টি ছড়া।

খাল ও ছড়াগুলো অধিকাংশ এলাকা অবৈধ দখলদার ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় আগের সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ। এখন আগের মতো সেই চিত্র তেমন একটা চোখে পড়ে না। দখল আর ভরাটের পরিপ্রেক্ষিতে সরু হয়ে আসছে এই সবকয়টি খাল ও ছড়া। ফলে নৌকা চলাচলে যথেষ্ট অসুবিধা পোহাতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আগের মতো মালামাল পরিবহন করতে পারছেন না। জালিয়াখালী বাজার, বাংলাবাজার, সরকারহাট ও শেখেরখীল ফাঁড়িরমুখ বাজার সাগরের মাছ বেচাকেনায় জমজমাট থাকে। খালের এসব অংশে মোটামুটি পানির প্রবাহ থাকায় মাছের নৌকা, অন্যান্য নৌকা-সাম্পান চলাচল রয়েছে। এসব এলাকায় দখলও বেশি হয়েছে, যা চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া খালের তীরে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। চর ও বাঁধ দখল করে গড়ে উঠেছে জনবসতি। উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ছড়ার প্রবাহিত পানি খালে নামার জন্য অবস্থিত অধিকাংশ সুইসগেট নানাভাবে দখল ও বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যার সৃষ্টি হয় খালের পূর্বাঞ্চল জুড়ে।

মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম।

খাল ও ছড়া জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও নানাভাবে দখলদারের দখলদারত্বে থাকায় বর্তমানে পানিনিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হয়ে সাধারণ জনগণ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অল্প বৃষ্টি হলেই বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি। ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন কৃষক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। খাল ও ছড়াগুলো খনন করে পুনরুদ্ধার করা হলে হাজার হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। কৃষিপণ্য, লবণ চাষ, মাছ উৎপাদন ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বাঁশখালী নয়, দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অতীতের মতো বড় অবদান রাখবে এই জনপদ।

উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার সংলগ্ন খালগুলোর পার্শ্ববর্তী বসবাসকারী লোকজন ও ব্যবসায়ীরা, ময়লা-আবর্জনা গুলো খালে ফেলে পানি চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করায় জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে নাকাল গ্রামবাসী। স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন পদেক্ষপ। সরকারের নিতে হয়, ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পূনর্র্নিমাণ, ত্রাণ বিতরণ, রাস্তা-ঘাট সংস্কার সহ নানা পদক্ষেপ।

সরাসরি দূষিত পানি প্রবেশ করছে কৃষিজমিতে, দূষিত পানিতে আশপাশের কৃষিজমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। আবাদি জমিতে ফলানো যাচ্ছে না ফসল। খাল-বিলের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মরছে প্রাকৃতিক মাছ. ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন। এই উপজেলায় একদিকে পাহাড়ী পানির ঢল অন্যদিকে খাল বা ছড়াগুলো দখল হওয়ায় প্রতি বছরে কয়েক বার প্লাবিত হয়ে আসছে। বছরে বছরে সরকারি ভাবে খাল খনন প্রকল্প দিয়ে পরিষ্কার করা হলেও দখলকৃতদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরিশেষে বদলকৃত সরকারি খাল গুলো মুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আকুল আবেদন। আশা করি অতি শ্রীঘই জনস্বার্থে এই কাজটি সফল করতে উদ্যোগ নিবেন সরকার।

লেখক: মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাঁশখালী প্রেস ক্লাব, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]