পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
চীনের মহাপ্রাচীরের পর মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় স্থাপনার দেশ বেনিন। নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য ছয় শতাব্দী আগে প্রি-মেকানিক্যাল যুগে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বর্গফুটের বিশাল দেয়াল স্থাপন করেছিল তারা। বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। তবে আজ আমরা বেনিনের স্থাপত্যশৈলী আর সহস্রাব্দের ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলব না।
আমরা কথা বলতে চাই বেনিনের ইসলাম আর মুসলমানদের নিয়ে। পশ্চিম আফ্রিকার রাষ্ট্রপতিশাসিত একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র বেনিন। দেশটির রাষ্ট্রীয় নাম রিপাবলিক অব বেনিন। রাজধানীর নাম পোর্টো-নভোয়া। দেশের বৃহত্তম নগরীর নাম কটোনও। এটি আফিকার ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর মধ্য থেকে একটি দেশ। এর পূর্ব নাম ছিল দাহোমি। বেনিনের জলবায়ু ক্রান্তীয়। এর বর্তমান অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। বেনিন ১৯৬০ সালের ১ আগস্ট ফরাসি উপনিবেশবাদ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। আর ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬০ সালে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে।
দেশের বেশির ভাগ মানুষই দিনমজুর আর কৃষক।
সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমান জনসংখ্যা ১১,৩৪০,৫০৪ জন। এর মধ্যে ২৭.৭ শতাংশ মুসলিম, ২৫.৫ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক, ১১.৬ শতাংশ বৌদ্ধ, ৯.৫ শতাংশ অন্য খ্রিস্টানসহ বাকি আরো কিছু ধর্মবিশ্বাসের সংমিশ্রণ সেখানে রয়েছে। জাতিগতভাবেও এদের মধ্যে রয়েছে নানা মিশ্রণ। তবে ফন, ইয়োরোবা ও আজা জাতির লোকই সংখ্যাগরিষ্ঠ। দেশটির সরকারি ভাষা ফরাসি হলেও ফন ও অন্যান্য আফ্রিকান ভাষাও এখানে বহুল প্রচলিত। দেশটির আয়তন এক লাখ ১৪ হাজার ৭৬৩ বর্গকিলোমিটার।
অনুন্নত এই জনপদে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের নানা এলাকা থেকে বাণিজ্যিক কাফেলা নিজেদের পণ্য নিয়ে উপস্থিত হতো এই সমুদ্র উপকূলে। আবার কেউ কেউ আসত দাস সংগ্রহের অভিপ্রায়ে। যদিও তৎকালীন সময়ে পৌত্তলিকতা ছিল বেনিনের প্রধান ধর্মবিশ্বাস। কিন্তু এসব বাণিজ্য কাফেলার মধ্য থেকে মুসলিম বণিকরা নিজেদের ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য বেনিনবাসীর সামনে তুলে ধরতে পিছপা হয়নি। যার ফলে মুসলিম বণিকদের উত্তম চরিত্র, মাধুর্য আর নীতি-নৈতিকতায় মুগ্ধ হয়ে অনেক লোক ইসলামের সুমহান ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে শুরু করে। এর মধ্যে কেনিয়া থেকে আগত বেনিনে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অধিবাসীরা প্রথম ইসলামের ছায়াতলে আসার সৌভাগ্য অর্জন করে। আর কেনীয় নেতাদের আহ্বানে দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে।
The world fact book-এর তথ্যানুযায়ী, নাইজেরিয়া ও মালি থেকে আগত মুসলিম পণ্ডিতরাই ইসলামের শাশ্বত আদর্শ তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে বেশির ভাগ বেনিন মুসলিমই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের নীতি-আদর্শ গ্রহণ করে। বেনিনের জাতিগুলোর মধ্য থেকে ইউরোবা ও বারিবা জাতিগুলোই ইসলাম গ্রহণের দিক থেকে অগ্রগামী ছিল। তবে বেনিনের হাউসা ও ফুলানি উপজাতিগুলোও ইসলামের প্রচার ও প্রসারে অনেক ভূমিকা রেখেছে।
ইসলামী শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (ইসেসকো) তথ্য মতে, বেনিনের মুসলমানরা ১৯৯০ এর দশকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি ইসলামী কর্মকাণ্ডের প্রতিও গভীর মনোযোগী হয়ে ওঠে। ইউনেসকো ২০১৫ সালে কোটোনোকে বেনিনের ইসলামিক সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে।
সৌজন্য: দৈনিক কালের কণ্ঠ