পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ প্রায় শেষ। কাজের বাকি আর মাত্র ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী মার্চে টানেল দিয়ে যান চলাচলের কথা রয়েছে। এরই মধ্যে এই টানালের টোল প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা টোল অনুযায়ী, টানেলে প্রাইভেটকার ও জিপের টোল দিতে হবে ২০০ টাকা। একই ধরনের গাড়িতে শাহ আমানত সেতুতে টোল দিতে হয় ৭৫ টাকা। মাইক্রোবাসে টানেলে টোল দিতে হবে ২৫০ টাকা, এই গাড়িতে বর্তমানে সেতুতে টোল দিতে হয় ১০০ টাকা। পিকআপের জন্য টানেলে টোল দিতে হবে ২০০ টাকা, বর্তমানে সেতুতে দিতে হয় ১৩০ টাকা।
এছাড়া ৩১ বা তার চেয়ে কম সিটের বাসের জন্য টানেলে টোল ধরা হয়েছে ৩০০, যা সেতুতে নেওয়া হয় ৫০ টাকা। ৩২ বা তার চেয়ে বেশি আসনের বাসের ক্ষেত্রে টানেলে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা, যা সেতুতে নেওয়া হয় ১৫৫ টাকা।
আবার ৫ টন ধারণক্ষমতার ট্রাকের ক্ষেত্রে টানেলে নেওয়া হবে ৪০০ টাকা, বিপরীতে এসব গাড়ির টোল সেতুতে দিতে হয় ১৩০ টাকা। টানেলে ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকে ৫০০ টাকা এবং ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। যা শাহ আমানত সেতুতে নেওয়া হয় যথাক্রমে ২০০ ও ৩০০ টাকা।
৩ এক্সেল পর্যন্ত ট্রাক চলাচলে টানেলে টোল দিতে হবে ৮০০ টাকা এবং ৪ এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারের জন্য টানেলে ১ হাজার টাকা টোল ধরা হয়েছে। বিপরীতে চার এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারকে সেতুতে ৭৫০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া টানেলে চার এক্সেলের বেশি হলে প্রতি এক্সেলের জন্য দিতে ২০০ টাকা করে দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘টানেলের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শনিবার পর্যন্ত অগ্রগতি ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ। টোল হার নির্ধারণ নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। এখন টানেলের সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য কাজ চলছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
জানা গেছে, নির্মাণের আগে করা সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী পরিবহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে ২০ বছর মেয়াদি এ ঋণ দিয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে যানবাহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৬২ হাজার।
তবে টানেলের টোল হার সহনীয় পর্যায়ে রাখা না হলে তা ব্যবহারে চালকেরা অনাগ্রহী হবেন বলে মন্তব্য করেছেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার। তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য বিকল্প হিসেবে শাহ আমানত সেতু রয়েছে। তাই টানেলের টোল নির্ধারণে এই সেতুর টোল হারের বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। যদি টোলের হার বেশি হয়ে যায়, তাহলে এই বিপুল বিনিয়োগে করা টানেলে প্রত্যাশিত যান চলাচল করবে না।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব বা সুড়ঙ্গের মধ্যে দক্ষিণ সুড়ঙ্গের (টিউব) পূর্তকাজ শেষ হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত পর্যন্ত। এটি এখন যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত। উত্তর সুড়ঙ্গের (পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী) কাজও শেষের পথে। এটির কাজ শেষ হলে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যাবে টানেলটি। গত ২৬ নভেম্বর সকালে দক্ষিণ সুড়ঙ্গের পূর্তকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। বাকি কাজ চলতি জানুয়ারি মাসে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
এই টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী প্রথম বা উত্তর সুড়ঙ্গের খননকাজের উদ্বোধন করেন। ২ হাজার ৪৪৬ মিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। দ্বিতীয় বা দক্ষিণ সুড়ঙ্গের (আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী) খননকাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর। গত বছরের ৭ অক্টোবর এই খননকাজ শেষ হয়।