অমিতা সিনহা:
সিলেটের রাজনীতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নগরীতে ফের ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে চলেছে। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের নিজ দলের অবস্থান নিয়ে একে অপরের ইটপাটকেল নিক্ষেপের চিত্র ফুটে উঠেছে ভরা মঞ্চে। নিক্ষেপকৃত পাটকেল থেকে রক্ষা পেতে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আশ্রয় নিয়েছে সভাস্থলের চেয়ারগুলোর।
গত ৬ নভেম্বর সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম কামালকে সিলেট শহরের আম্বরখানা বড়বাজার এলাকায় গাড়ীর মধ্যে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে পালিয়ে যায় দু’যুবক। এ সময় স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। নেতার এমন মৃত্যু নেতাকর্মীরা মেনে নিতে পারিনি। এঘটনাকে ঘিরে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সিলেট নগরের রাজপথে বিক্ষোভ হয়। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সভাস্থলের ফেস্টুন, ব্যানার, রিফলেট ভেঙে গুড়িয়ে দেয় ক্ষুদ্ধ বিক্ষোভকারীরা। পরক্ষণে ছাত্রলীগের কর্মীরা রাজপথে নেমে ছাত্রদলের বিক্ষোভ যাত্রার ছত্র ভঙ্গ করেন। এক পর্যায়ে ছাত্রদল-ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অভিযোগও উঠেছে রাজনৈতিক ও পূর্ব শত্রুতা জের ধরে বিএনপি’র নেতা আ ফ ম কামালকে খুন করেছে। নিহতের বড় ভাই ময়নুল হক বাদী হযে হত্যা মামলা করেন ছাত্রলীগের আজিজুর রহমান সম্রাটসহ ১০জনের বিরুদ্ধে। নেতা আ ফ ম কামালের মৃত্যুতে শোক দিবস পালন করেছেন দলের নেতাকর্মীরা গণসমাবেশের কার্যক্রম স্থগিত রেখে। এর কয়েকদিন পর ১৫ নভেম্বর বিয়ানীবাজার পৌরশহরে আসন্ন গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রদল প্রচার মিছিল বের করলে সেখানেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরপর ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে ছাত্রলীগের কর্মীরা বিরোধীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। উপায় না পেয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মীরা সংক্ষিপ্ত পথসভা করে শেষ করেন।
অপরদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে সুনামগঞ্জ জেলায় তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে বেগবান করতে উদ্যোগ নিয়েছিলো বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগ। জেলার দিরাই উপজেলার ওই আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উপস্থিতি নেতাকর্মীরা জেলার উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের শাখাগুলোর সম্মেলনের জন্য দিন তারিখও ঘোষণা করেন। মিছিল ও স্লোগানে ভরপুর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে হঠাৎ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। নিজ দলের অভ্যন্তরে দ্বি-মতের দ্বন্দের রেস ধরে তুমুল ইটপাটকেল নিক্ষেপও লাঠিসোটা মধ্য দিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আহত হয় কমপক্ষে ২০ নেতাকর্মী। রক্তক্ষয়ী এমন সংঘর্ষে ইটপাটকেলের নিক্ষেপের আঘাত পেয়ে আজমল হোসেন চৌধুরী ওরফে আরমানের (৩৫) মৃত্যু হয়।
ঘটনাস্থলে সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা মঞ্চে নিজেদের ঢিল থেকে রক্ষা পেতে চেয়ারের আশ্রয় নেন।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরু ল ইসলাম নাহিদ বলেন, ত্রি-বার্ষিকী সম্মেলনে যারা বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের আওয়ামী লীগে জায়গা হবে না। শিগগির তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে বিরোধী দলের পর পর ধাওয়া কোনোভাবে কাম্য নয় বলে জানান বিএনপি ও ছাত্রদলের কর্মীরা। উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ছরওয়ার হোসেন বলেন, আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি আমরা শান্তি পূর্ণভাবে করার সময় ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বাধা দেয়। এই কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে ছাত্রলীগের নির্লজ্জ হামলার ঘটনায় আমরা নিন্দ জানাচ্ছি।
উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আজাদ জিসান বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উস্কানিমুলক মিছিল দিয়ে পৌরশহরের শান্ত পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করলে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রলীগ সেটি প্রতিহত করেছে। স্ব স্ব দলের অভ্যন্তরে দ্বি-মতের দ্বন্দ অপর দিকে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের বিরোধীতার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সংঘর্ষ। কোনো পথে মোড় নেবে রাজনীতির এমন অস্থিরপনা খোলা চোখে চেয়ে আছে এদেশের তরুণ সমাজ।