ফারাক্কার ১০৯ গেট খুলে দিল ভারত, ডুবতে পারে যেসব জেলা

::
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

ভারতের বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বন্যার জেরে ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। সোমবার এ গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। এতে একদিনে বাংলাদেশে ঢুকবে ১১ লাখ কিউসেক পানি।

এই গেট খুলে দেওয়ায় দেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নদ-নদী বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভারাইন পিপলের পরিচালক এম আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার খবরটি আমাদের জন্য বিপদজনক। এর ফলে দেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিবেশী দুই রাজ্যে বন্যার জেরে পানির চাপ পড়েছে। তবে স্বস্তির বিষয়, এখনো নেপাল থেকে পাহাড়ি ঢল নামেনি। ফারাক্কা ব্যারাজ এলাকায় পানি বিপৎসীমার ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপর দিয়ে বইতে থাকায় বাধ্য হয়ে গেট খুলতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ফিডার ক্যানেলেও পানির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

ফারাক্কা ব্যারেজের জেনারেল ম্যানেজার আর দেশ পাণ্ডে গণমাধ্যমকে বলেন, ফারাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ সবসময় এলার্ট রয়েছে। প্রতিমুহূর্তে নজর রাখা হচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে যেভাবে পানির চাপ তৈরি হয়েছে তাত ১০৯ গেটের সবকটি খুলে না দিলে ব্যারাজের ওপর বড় চাপ তৈরি হচ্ছিল। বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। আপাতত ফিডার ক্যানেলে ৪০ হাজার কিউসেক ও ডাউন স্ট্রিমে ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে।

ফারাক্কা ব্যারেজ খুলে দেওয়া নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিল ভারত:
এদিকে, ভারতের গঙ্গা নদীর ওপর অবস্থিত ফারাক্কা ব্যারেজ খুলে দেওয়ার বিষয়ে দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। মূলত উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানির প্রবাহ বাড়ার কারণে এমনটা ঘটেছে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, আমরা গণমাধ্যমে ফারাক্কা ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দেওয়ার খবর দেখতে পেয়েছি। এর ফলে গঙ্গা/পদ্মা নদীতে স্বাভাবিক গতিপথ ধরে ভাটির দিকে ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হবে।

তিনি বলেন, এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। মূলত উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানির প্রবাহ বাড়ার কারণে এমনটা ঘটেছে।

রণধীর জয়সওয়াল বলেন, এটি বুঝতে হবে যে, ফারাক্কা একটি ব্যারেজ, ড্যাম নয় (ব্যারেজ হলো পানির প্রবাহের ওপর এমন একটি বাঁধা যার সাহায্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি অন্যদিকে প্রবাহিত করা হয় এবং ড্যামের মাধ্যমে কোনো প্রবাহের ওপর বাঁধা দিয়ে উজানে পানি ধরে রাখা হয়)। যখনই এখানে পানি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে আসে তখন তা স্বাভাবিক গতিতে বয়ে যায়।

ফারাক্কা ব্যারাজের উদ্দেশ্য তুলে ধরে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এটি কেবলমাত্র একটি কাঠামো যার মাধ্যমে খুব সাবধানে প্রধান নদী গঙ্গা/পদ্মা ওপর একটি গেট সিস্টেম ব্যবহার করে ফারাক্কা খালে ৪০ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত করা হয় এবং ভারসাম্যপূর্ণ পানি প্রধান নদী হয়ে বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত হয়।

যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে প্রটোকল অনুযায়ী ফারাক্কার সব ডেটা বাংলাদেশকে সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন রণধীর জয়সওয়াল।

তিনি বলেন, এবারও এমন করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে ভুয়া ভিডিও, গুজব ও বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আসলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। আসল তথ্য জেনে এগুলো বলা দরকার।