আজ ২৮ আগস্ট একটু আগে অঝোরে কাঁদলেন আমার এক বন্ধু। অর্থনৈতিকভাবে কুমিল্লার এক স্বাবলম্বী ব্যবসায়ী। বিভিন্ন খামারসহ অনেক কিছু আছে তার। মাসে ব্যবসাগুলো থেকে কমপক্ষে তিন-চার লাখ টাকা আয় হয়েছে। চলনে-বলনেও খুব বনেদি। এবারের বন্যায় তার সব শেষ হয়ে গেছে। আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘বন্ধুরে আমিতো নি:স্ব হয়ে গেলাম। বন্যায় সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে’।
এমন আরো বহু মানুষের কান্না-বিলাপ শুনতে শুনতে আমার বুক ভারি হয়ে যাচ্ছে।কিছু দিন আগে ফেনির এক বন্ধুকে ফোন দিলাম কি খবর কেমন আছে পরিবারের সবাই সেই বন্ধু কান্না করতে করতে কইলেন আজ তিন দিন যাবত পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নাই। এমন আরো বহুজনের করুণ পরিণতি হয়েছে। যারা বিত্তবান তারা এখন ফকির হয়ে গেছে।
কুমিল্লাজেলা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে যেসব জেলাগুলোতে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে তার একটি কুমিল্লা । ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝে হওয়ায় এ জেলার গুরুত্বও অনেক।
অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এ জেলাটিতে অনেক পরিবারের দিন কাটছে এখন না খেয়ে। কারণ এ পরিবারগুলো খাবারের জন্য হাত পাতেনি। আমার পরিচিত অনেকে চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছেন, না খেয়ে আছেন। না খেয়ে মরে যাবেন তবুও রাস্তায় দাড়িয়ে হাত পেতে খাবার-পানি নেবেন না। আমার জেলা শহরের বেশিরভাগ মানুষের এমন ইগো বা তাদের এমন আত্মসম্মান দেখে আমার নিজেরও মাঝে মাঝে রাগ ওঠে। পরে ভাবি, আমিও হয়তো এমনই করতাম। সম্ভবত ওই জনপদের মানুষের রক্তের দোষ!
পরিশেষে যারা কুমিল্লায় ভান বাসিদের জন্য আপনারা যারা এগিয়ে যাচ্ছেন খাবার পানি দিতে তাদের কাছে অনুরোধ, অনুগ্রহ করে ফটোসেশন বন্ধ করে বিপদে পড়া মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান। যিনি খাবার পানি নিচ্ছেন তার ছবি তুলবেন না।
কুমিল্লা বুড়িচংয়ের মানুষ এমন মহাপ্লাবন দেখেনি। তারা জানে না কীভাবে বন্যা মোকাবিলা করতে হয়। ত্রানের জন্য হাত পাতারও অনেকের অভ্যাসে নেই। তাই ঘরে গিয়ে ভাই বন্ধু মনে করে খাবার-বিশুদ্ধ পানি দিয়ে আসুন। গ্রামের দালান কোঠাগুলোতেও যান। ওইসব বাসার বাসিন্দারা কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে আছে। ওইসব ঘরের মানুষ বলবে না খাবার দিয়ে যান। অনেক ঘরে ছোট ছোট মাসুম বাচ্চা কাঁদছে দুধের অভাবে।
আমি কি করে বুঝাই আমার শহরে, আমার কুমিল্লার বুড়িচংয়ে কি ক্ষতি হয়ে গেলো। একের পর এক ঘটনা শুনছি আর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছি। আমি, আমার পরিবার সাধ্যমতো পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। অনুগ্রহ করে যার যার সাধ্যমতো বন্যার্ত মানুষের পাশে থাকুন। এ জীবনে না হোক, পরজীবনে নিশ্চয় আপনি পুরষ্কৃত হবেন।
লেখক: প্রবাসী এবং সংবাদকর্মী।
[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]