প্রথমদিনেই আটকে গেল শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম

::
প্রকাশ: ২ years ago
প্রতীকী ছবি। আইস্টকফটো ডটকম

পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে জানুয়ারিতে। এই কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা নেবে দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুলের প্রায় সাড়ে চার লাখ শিক্ষক। সে ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে ভার্চুয়ালি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।

কিন্তু প্রথম দিনেই এই কার্যক্রম কার্যত জটিলতার মুখে পড়েছে। হাজারো শিক্ষক প্রশিক্ষণ সার্ভারে প্রবেশই করতে পারেনি। ফলে প্রশিক্ষণের জন্য নতুন করে তারিখ নির্ধারণ করা হবে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন বছরে বদলে যাবে শিখন ও মূল্যায়নের ধরন। কিন্তু যারা নতুনভাবে শেখাবেন ও মূল্যায়ন করবেন সেসব শিক্ষকদের অনলাইনে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এই প্রশিক্ষণ এনসিটিবি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও এসপায়ার টু ইনোভেশন (এটুআই) এর সমন্বয়ে হচ্ছে। মূলত কারিগরি বিষয়টি দেখভাল করছে এটুআই। কন্টেন্ট সরবরাহ করেছে এনসিটিবি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে মাউশি।

সার্ভার জটিলতার বিষয়ে এটুআইএর শিক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বিষয়ভিত্তিকভাবে সারাদিনই দেয়া হচ্ছে। সার্ভারে যখন এক লাখের বেশি মানুষ প্রবেশ করে তখন ট্রাফিক বাড়বে। দেশর বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই শিক্ষকরা যুক্ত হয়। যেকারণে সমস্যাটি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সকালের পর থেকে সমস্যার সমাধান করা গেছে।

সমস্যার কারণ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল ডেটাবেজ সেন্টারের অধীনের সার্ভারে প্রোগ্রামটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী এই সার্ভারের সক্ষমতাও বৃদ্ধির আশ্বাস দেন তিনি।

একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সশীরের প্রশিক্ষণ ছাড়া এসব প্রশিক্ষণ খুব বেশি কাজে লাগবে না তাদের।

রাজধানীর একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমামুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রথম দিনে সার্ভার সমস্যার কারণে অনেকে ঢুকতেই পারেনি। আবার দেখা যাচ্ছে যখন বাংলা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তখন অন্যবিষয়ের শিক্ষকরাও সার্ভারে বসে আছে। এর ফলে মূলত সমস্যা তৈরি হয়েছে।

প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বিষয়ে ধারণাটি মাত্র পেয়েছি। বুঝতে পারছি আগে যেমন শিক্ষকদের লেকচার দিতে হত এতে তা থাকছে না, শিক্ষকদের মেন্টর হিসেবে কাজ করতে হবে। তিনি মনে করেন সশরীরে প্রশিক্ষণই আসল প্রশিক্ষণ।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় একঘণ্টাার বাংলা বিষয় দিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এরপর ধর্ম, ইংরেজি, স্বাস্থ্য শিক্ষা, গণিত, শিল্প সংস্কৃতি, জীবন জীবিকার এক অংশ, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অংশ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বাকী বিষয়ে রবিবার প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা আছে।

মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার পরিচালক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, প্রশিক্ষণের শুরুতে সার্ভারে সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এরপর সারাদিনই শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে অনলাইনে।

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) কতজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটুআই থেকে এখনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। বেশি সমস্যা হলে প্রশিক্ষণের দিন বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষাক্রম চালুর আগে শনিবার ও রবিবার মাধ্যমিক স্তরের তিন লক্ষাধিক শিক্ষককে এক ঘণ্টা করে অনলাইনে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ডিসেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষককে পাঁচ দিনের সশরীর প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারেনি। এসব শিক্ষকের প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে অনলাইনে। এরপর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাঁচ দিন সশরীরে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।

তবে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা বলেন, অনলাইনে প্রশিক্ষণের প্রথম দিনেই অনেক শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

গত মে মাসে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় এনসিটিবি।

এতে বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরে ৬৪ জেলায় প্রতি বিষয়ে তিনজন করে মূল প্রশিক্ষক বা মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হবে। তারা প্রতিটি উপজেলায় প্রতি বিষয়ে তিনজন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবেন। এসব শিক্ষকের মাধ্যমে ডিসেম্বরে সারা দেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তিনটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হবে। এরমধ্যে রয়েছে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি। বাকি শ্রেণিগুলোতে ২০২৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

এনসিটিবি সদস্য ড. মশিউজ্জামান বলেন, প্রশিক্ষণের জন্য অনেক শিক্ষক তালিকাভুক্ত হয়নি। সমস্যার কারণে ২৮ ডিসেম্বর থেকে প্রশিক্ষণের সার্ভারটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও যেসব শিক্ষক কেন যুক্ত হয়নি তাদেরকে শনাক্ত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

তিনি মনে করেন সমস্যাটি সাময়িক, রোববার সব ধরনের সমস্যা কেটে যাবে।