প্রতি বছর ৬০ হাজার কর্মী নেবে জার্মানি

:: পা.রি. ডেস্ক ::
প্রকাশ: ২ years ago

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরেও প্রতি বছর ৬০ হাজার কর্মী নেবে জার্মানি।

দীর্ঘদিন ধরে দেশটি কর্মী সংকটে ভুগছে। সংকট মোকাবেলায় বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মী আকর্ষণে অভিবাসন আইন পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির সরকার। এ সংক্রান্ত খসড়া আইনের অনুমোদন দিয়েছে সরকারের মন্ত্রিসভা।

স্বরাষ্ট্র ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা নতুন খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মন্ত্রিসভা। জার্মান পার্লামেন্টের দুই কক্ষে পাস হলে আইনটি কার্যকর হবে।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

জন্মহার কমে যাওয়ায় অবসরে যাওয়া বয়স্কদের শূন্যস্থান পূরণে যথেষ্টসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী নেই জার্মানিতে। ফলে তৈরি হয়েছে কর্মী সংকট। গত বছর জনবল ঘাটতির প্রভাবে রেল ও বিমানের সময়সূচিতেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। ব্যবসায়ীদের সংগঠন জার্মান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক জরিপে প্রায় ৫৬ শতাংশ কম্পানি কর্মী ঘাটতি থাকার কথা জানিয়েছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২২ সালের শেষে শূন্যপদ ছিল প্রায় ২০ লাখ, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ শ্রম বাজারে ৭০ লাখ কর্মী ঘাটতি থাকবে বলে সতর্ক করেছেন বিশষজ্ঞরা।

এদিকে, অভিবাসনের জন্য আকর্ষণীয় না হওয়ায় জার্মানির বর্তমান আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলছে। কর্মী চাহিদা মেটাতে এই আইনের পরিবর্তন ওলাফ শলৎসের জোট সরকারের অন্যতম এজেন্ডা। এরই মধ্যে শ্রম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিলে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করেছে। গত বুধবার তার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডার এই পদক্ষেপকে জার্মানির ‘নতুন অভিবাসন নীতির পথ চলার ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক সাফল্যে অবদান রাখতে পারেন এমন যে কোনো দক্ষ কর্মী (জার্মানিতে) স্বাগত। ’

খসড়া আইনে বলা হয়েছে, এটি বাস্তবায়ন হলে প্রতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে ৬০ হাজার কর্মীকে জার্মানিতে আনা সম্ভব হবে।

মন্ত্রিসভায় আইনটি উপস্থাপন করেছেন শ্রমমন্ত্রী হুবার্টুস হাইল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা। এই আইনের মূলত তিন ধাপ রয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান হাইল। প্রথমত, কোনো কাজে দক্ষ এবং জার্মানিতে চাকরির প্রস্তাব আছে এমন ব্যক্তি আগের চেয়ে সহজে জার্মানি আসতে পারবেন। দক্ষতার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির বদলে চাকরির পূর্ব অভিজ্ঞতাকেও বিবেচনায় নেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট খাতে কারো ন্যূনতম দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে এবং ডিগ্রি বা কারিগরি প্রশিক্ষণ থাকলে তিনিও চাকরি নিয়ে জার্মানিতে আসতে পারবেন।

তৃতীয় ধাপে, চাকরির চুক্তিপত্র না থাকাদের জার্মানিতে এসে কাজ খোঁজার সুযোগ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ে পয়েন্টের ভিত্তিতে আগ্রহী ব্যক্তিকে ‘অপরচুনিটি কার্ডের’ জন্য যোগ্য বিবেচিত হতে হবে। এর মধ্যে আছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা, বয়স ইত্যাদি।

ব্লু কার্ড ও পারিবারিক ভিসা
দক্ষ কর্মীদের জন্য জার্মানি আগে থেকেই ‘ব্লু কার্ড’ দিয়ে আসছে। এর ফলে তারা দীর্ঘমেয়াদে জার্মানি ও ইউরোপে বসবাস ও চাকরির অনুমতি পেয়ে থাকেন। নতুন আইনে সেটি পাওয়া আরো সহজ হবে। কারো ডিপ্লোমা সনদ ও চাকরির চুক্তিপত্র থাকলে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে চার বছর পর্যন্ত থাকার এই অনুমতি পাবেন। এক্ষেত্রে ন্যুনতম বার্ষিক আয়ের যে শর্ত ছিল তার পরিমাণ আগের চেয়ে কমানো হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি না থাকলেও প্রাসঙ্গিক চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ব্লু কার্ড পাবেন।

শুধু কর্মী নন, নতুন নিয়মে তাদের পরিবারও জার্মানিতে সহজে আসা ও স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাবেন। বিদেশে অর্জিত কারিগরি ডিগ্রি জার্মানিতে স্বীকৃত না হলেও অভিবাসীরা চাকরি করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা থাকতে হবে। এছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কারিগরি সনদ দেখানো সাপেক্ষে চাকরি খোঁজার জন্য এক বছর পর্যন্ত জার্মানিতে থাকার অনুমতি পাওয়া যাবে।

এর আগে, গত সপ্তাহেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪ লাখ করে দক্ষ কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল দেশটি। তাদের মূল খাতগুলোতে কর্মী ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিবছরই এ জনশক্তি নেয়ার কথা জানায় দেশটির নতুন জোট সরকার।

ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন উইর্টশাফ্টসওচেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কো-গভর্নিং ফ্রি ডেমোক্র্যাটস (এফডিপি) এর সংসদীয় নেতা ক্রিশ্চিয়ান ড্যুয়ার বলেছেন, দক্ষ কর্মীর ঘাটতি এতটাই গুরুতর হয়ে উঠেছে, যে কোনো সময় এটি নাটকীয়ভাবে অর্থনীতিকে খুব দুর্বল করে দিতে পারে। সেজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর অন্তত ৪ লাখ যোগ্য কর্মীর প্রয়োজন হবে। জার্মানির জনসংখ্যাগত ভারসাম্যহীনতা ও মূল খাতগুলোতে কর্মী সংকট মোকাবেলায় যত দ্রুত সম্ভব এসব দক্ষ শ্রমিক নিতে হবে।

চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটসসহ অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোর জন্য একটি পয়েন্ট সিস্টেম গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি প্রতি ঘন্টায় ১২ ইউরো (১৩.৬০ ইউএস ডলার) উন্নীত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন তারা।

জার্মান ইকোনমিক ইনস্টিটিউটের ধারণা, চলতি বছরেই ৩ লাখ লোকের ঘাটতি দেখা দিতে পারে জার্মানিতে। কারণ শ্রমবাজারে প্রবেশকারী তরুণদের তুলনায় বেশি বয়স্ক কর্মী অবসর গ্রহণ করছেন৷ এটি অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৯ সালে সাড়ে ছয় লাখ শ্রম ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net