ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
আজ শনিবার ৩১তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। বিশ্ব জুড়ে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতার শিকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সুরক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে উদযাপন হতে যাচ্ছে দিবসটি। বাংলাদেশ এবছর ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন হবে।
সারা বিশ্বে প্রায় তিন বছর ধরে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ মানব জীবনে যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে স্বভাবতঃই প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনকেও তা প্রভাবিত করেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারী, পুরুষ ও হিজড়াসহ বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধি ব্যক্তির সংখ্যা ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৮ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিবন্ধীতার হার ১৫ শতাংশ।
প্রতিবছর আমরা বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে ৩ ডিসেম্বর আর্ন্তজাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালন করে থাকি। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের মানবাধিকারের কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তা মূল্যয়নের সময় এসেছে। অথচ অন্য সব সাধারণ নাগরিকের মত তাদেরও রয়েছে সমান সুযোগের অধিকার।
প্রতিবন্ধী শব্দটি যেন এক বৈষম্যের প্রতিধ্বনি। শব্দের অর্ন্তগত অর্থ সেই শব্দের নাম নির্দেশ করে থাকে। সেজন্য অন্য শব্দ ব্যবহৃত হলেও হয়ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সেই শব্দকেও নেতিবাচক করে তুলবে। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বৈষম্যের উৎপত্তি এবং বৈষম্য থেকে জনবিচ্ছিন্নকরণ। প্রতিবন্ধী নাগরিকগণ যেন সমাজে অন্য সব নাগরিকের মত সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারেন সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়। আর শারীরিকভাবে অসম্পূর্ণ মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই দিবসটির সূচনা হয়।আর সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা মানব বৈচিত্রেরই অংশ। তাই, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি। সমাজের অবিচ্ছেদ্য এ অংশকে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।
প্রতিবন্ধী মানুষের রয়েছে নানা রকম প্রকারভেদ।শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী,বাক প্রতিবন্ধী,বুদ্ধি প্রতিবন্ধী,এমন কি বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে বয়স, লিঙ্গ, জাতি,সংস্কৃতি বা সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী এই মানুষ গুলো নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে জীবন যুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধা হিসেবে জীবনকে পরিচালনা করছে।দুঃখ জনক হলেও এটাই চুরান্ত বাস্তবতা যে, প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে রয়েছে পদে পদে বাধা। এরা পৃথিবীর রং, রূপ ও রসের বিলাস-বৈচিত্র্যের বৃত্ত থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। স্বাভাবিক মানুষের ন্যায় সুন্দর এই জীবনটাকে যথাযথ ভাবে উপভোগে বরাবরই অক্ষম। দিকে দিকে যে বিচিত্র কর্মধারা নিত্যপ্রবাহিত, সেখানে যোগদানের ক্ষেত্রেও তারা প্রতিনিয়ত অবহেলিত ও নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতার শিকার। ফলে ধীরে ধীরে এদের জীবনে আসে হতাশা। অদৃশ্য শিকলে হাতদুটো যেন বাঁধা পরে যায় অজান্তেই। অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় সর্বদিক।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার তিনটি লক্ষণ প্রথমত, এদের বুদ্ধি তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় কম থাকে। ওয়েক্সলার ইন্টেলিজেন্স স্কেল অনুযায়ী এদের আইকিউ ৭০ বা তার কম থাকে।
দ্বিতীয়ত, জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার দক্ষতার ক্ষেত্রে এ শিশুদের যথেষ্ট ঘাটতি থাকে।
তৃতীয়ত, ব্যক্তির মানসিক প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি তার ১৮ বছর বয়সের আগেই দৃশ্যমান হয়।বেশির ভাগ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুকে প্রথম দর্শনে বোঝা যায় না যে, তাদের কোনো সমস্যা আছে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের বিকাশ একটু দেরিতে হয়। তারা দেরিতে কথা বলতে শিখে, তাদের স্মৃতিশক্তি কম থাকে, মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা ও ধৈর্য কম থাকে, কোনো কিছু শিখার ক্ষমতাও কম থাকে। যেমন_ অন্য বাচ্চারা হয়তো দিব্যি টয়লেট করে পরিচ্ছন্ন হয়ে বের হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের আইকিউ গড়ে ৯০-১০০ এর মধ্যে থাকে। প্রতিবন্ধীদের পরিমাপক মাত্রা বেশ কম থাকে। মৃদু মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের বুদ্ধির একক বা আইকিউ স্কোর থাকে ৫০ থেকে ৬৯ এর মধ্যে। এরা সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে পারে। তবে তারা পরীক্ষায় সচরাচর খারাপ করে। মধ্যম মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের বুদ্ধাঙ্ক বা আইকিউ ৩৫-৪৯ এর মধ্যে থাকে। এই স্তরের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের অনেক অল্প বয়সেই বোঝা যায়। তাদের ভাষার বিকাশ দেরিতে হয়, এদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ও সমাজে চলার জন্য প্রচুর সহযোগিতা দরকার হয়। তাদের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলে স্পেশাল এডুকেশন টিচারদের তত্ত্বাবধানে শিখালে ভালো ফল পাওয়া যায়।আর ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে এ আইনটি বাতিল করে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩’ প্রবর্তন করা হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের সুরক্ষা প্রদানের অনন্য দলিল।তাছাড়াও, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫, ১৭, ২০ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অন্যান্য নাগরিকদের সাথে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমসুযোগ ও অধিকার প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে প্রশ্ন থেকে যায় আজও কি অন্যান্য নাগরিকদের সাথে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমসুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত হয়েছে?গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদফতর এর সর্বশেষ হাল-নাগাদ তথ্য অনুসারে জানা যায়,সংবিধানের ১৫(ঘ) অনুচ্ছেদ দায়-দায়িত্বের অংশ হিসেবে ২০০৫-০৬ অর্থ বছর হতে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। শুরুতে ১,০৪,১৬৬ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ২০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনা হয়।২০০৮-০৯ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ জন এবং জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ২৫০ হিসেবে বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৬০.০০ কোটি টাকা।২০০৯-১০ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৬০ হাজার জনে, মাসিক ভাতার হার ৩০০ টাকায় এবং বার্ষিক বরাদ্দ ৯৩.৬০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।২০১০-১১ অর্থ বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৬ হাজার জনে উন্নীত করা হয় এবং মাথাপিছু মাসিক ভাতা ৩০০ টাকা হিসেবে বার্ষিক বরাদ্দ ১০২.৯৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হিসেবে ১৬২০ কোটি টাকা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন যে থেকেই যায়, এই অর্থ কি একজন প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য যথেষ্ট? অবশ্যই যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ (১) নম্বর অনুচ্ছেদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ এদেশের সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই, দেশের প্রতিবন্ধী জনগণের সর্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের জনগণ, সংশ্লিষ্ট সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।তাই বলি, একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে কেবল প্রতিবন্ধী হিসেবে অনুগ্রহ নয় দিতে হবে মানুষ হিসেবে যথাযোগ্য সম্মান।প্রতিবন্ধীদের যদি মানুষ হিসেবে যথাযোগ্য সম্মান ও সমঅধিকার ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যায় তাহলে তারা দেশ ও জাতীর জন্য বয়ে আনতে পারে অকল্পনীয় সম্ভাবনাময় অর্জন । তাদের অনেকের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে অসাধারণ প্রতিভা। সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং পরিচর্যার মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানো সম্ভব।অথচ সময়মতো চিকিৎসা পেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা ভালো হয়ে যায় আর সম্পূর্ণ ভালো না হলেও সমাজে উপার্জনক্ষম হয়ে বেঁচে থাকতে পারে। ধরন অনুযায়ী মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো, অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস, শারীরিক, মানসিক অসুস্থতাজনিত, দৃষ্টি, বাক প্রতিবন্ধীতা, বুদ্ধি, এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা।
কারণ: এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার কারণ জানা যায় না। বিভিন্ন রোগের প্রভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা হতে পারে। ডাউন্স সিন্ড্রোম, ভেলোকেরিওফেসিয়াল সিন্ড্রোম এবং ফেটাল অ্যালকোহল সিন্ড্রোম জন্মগত বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। কখনও কখনও পিতা-মাতার থেকে প্রাপ্ত অস্বাভাবিক জিন বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার কারণ হিসেবে কাজ করে।
গর্ভাবস্থার সমস্যার জন্য বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা হতে পারে। আবার জন্মকালীন সমস্যার কারণেও বুদ্ধি প্রতবন্ধিতা হতে পারে। কিছু রোগ ও বিষাক্ততার প্রভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা হতে পারে। যেমন_ হুপিং কাশি, মিজলস, মেনিনজাইটিস রোগের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা হতে পারে। সিসা বা লিড, মারকারি ইত্যাদি বিষাক্ততার শিকার হয়েও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা হতে পারে। আয়োডিনের ঘাটতির
কারণে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতে পারে। অপুষ্টির কারণেও এটি হতে পারে।বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার জন্য যেসব রোগ ও সংক্রমণ দায়ী সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা বিশেষভাবে দরকার।
পরামর্শ: শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে উঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে নাকি তা খেয়াল করা বাবা-মায়ের জরুরি দায়িত্ব। যে সকল শিশুর প্রতিবন্ধী হয়ে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে তা আগে থেকেই বোঝা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। সাধারণত অভিভাবকেরা এ ধরনের সমস্যা বুঝতে অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলেন। ১. শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে হবে। স্বাভাবিক বিকাশের ধীর গতি প্রতিবন্ধী শিশুর সবচেয়ে বড় লক্ষণ। তাই শিশুর আবেগ, সামাজিক এবং অন্যান্য সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক কার্যকলাপ বোঝার চেষ্টা করুন। বয়স অনুযায়ী তার মানসিক বিকাশ হচ্ছে না বলে মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ২. অনেকেই শিশুর মধ্যে ধীর মানসিক বিকাশ লক্ষ্য করার পরও ভাবেন হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। আরো কিছু দিন অপেক্ষার পক্ষপাতী তারা। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বড় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। এমন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিলে শিশুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত। ৩. প্রত্যেক শিশুর সামান্যতম সমস্যা হলে তার বাবা-মা সবার আগে বুঝতে পারেন।তাই শিশুর আচরণ ও মানসিক বিকাশ নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
হোমিও প্রতিকার: প্রতিবন্ধী শিশুদের পিতা-মাতার প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন কালবিলম্ব না করে তাদের সন্তানকে কোন হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসাধীনে ন্যস্ত করেন,হোমিওপ্যাথি হলো একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি, এই পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং সম্পূর্ণ উপসর্গের উপর ভিওি করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়,সব লক্ষণ এবং উপসর্গ মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের ফিরে যাবার একমাএ উপায় এটি হোমিওপ্যাথির উদ্দেশ্য প্রতিবন্ধী রোগীর অন্তনিহিত কারণ এবং ব্যক্তিগত সংবেদনশীলতা মোকাবেলার মাধ্যমে আরোগ্য করা,রোগের কারণ অনুভূতি ব্যক্তিস্বাতন্ত এবং হ্রাস বৃদ্ধির উপর ভিওি করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়, আর সঠিক ভাবে নির্বাচন করতে পারলে তাহলে আল্লাহর রহমতে হোমিওপ্যাথিতে প্রতিবন্ধী রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের সমাজে নারীরা এমনিতেই বৈষম্যের শিকার। প্রতিবন্ধী নারীগণ সেক্ষেত্রে দ্বিগুন বৈষম্যে আক্রান্ত। এছাড়াও শারীরিক, মানসিক, যৌন নির্যাতন ও অবহেলার ঝুঁকিও তাদের বেশী। প্রতিবন্ধী শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধদের সেক্ষেত্রে বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন। শিক্ষানীতি ও স্বাস্থ্যনীতিতে ইতিমধ্যে প্রতিবন্ধিতা বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আমাদের আন্তরিক হতে হবে। প্রতিবন্ধীদের যাতে কেউ সমাজের বোঝা হিসেবে ভাবতে না পারে সেজন্য তাদেরকে কোনো একটি বিশেষ কাজে দক্ষ করে তুলতে হবে এবং কর্মমুখী পেশার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুর মাঝেও অনেক সুপ্ত প্রতিভা থাকতে পারে। তাই খেলাধুলা ও বিনোদনে প্রতিবন্ধী শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে ছবি আঁকা, গান, ক্রীড়া বা অন্য কেনো বিষয়ে দক্ষতা থাকলে তা যথাযথভাবে প্রয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে।প্রতিবন্ধী শিশুদের ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে এরা সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারে। আসুন সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেই। তাহলে প্রতিবন্ধী শিশুদের চলার পথ যেমন মসৃণ হবে তেমনি অভিভাবকদের কষ্টও অনেকাংশে লাঘব হবে। প্রতিবন্ধী নাগরিকের সমাজে অন্যসব নাগরিকের মত সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার একটি মানবাধিকার যা সংবিধান স্বীকৃত। তাদের প্রতি সকল বৈষম্য দূরীকরণে সিআরপিডির বাস্তবায়ন জরুরী। এব্যাপারে সমাজ, রাষ্ট্র ও জনগণের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ প্রয়োজন। উন্নয়নের মূলস্রোতে এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা গেলে তারা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন।এ দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সভা সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি এবং চিকিৎসক, গবেষক ও কলামিস্ট।