অনলাইন মিডিয়ার বদৌলতে আমরা সহজে পৃথিবীর নানা প্রান্তের খবরাখবর মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে থাকি।কোন জায়গায় কি হচ্ছে তা জানার জন্য আমরা সবসময় উৎসুক হয়ে উঠি।
কথিত আছে জানার মাধ্যমে যেমন জ্ঞানের পরিধি বাড়ায় তেমনি আপনাকে পণ্ডিতমহলে বিজ্ঞ ও সুবক্তা হিসেবে উপস্থাপন করবে।
তাই আমরা জানার জন্য বিভিন্ন উৎস অনুসন্ধান করি,জানার উপলক্ষ্য খুঁজি।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে তথ্য পাওয়াটা অনেকটা সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
সকালে উঠে ফেসবুকে ঢুঁ মারলে যেমন প্রচুর তথ্যের যোগান পাই কিংবা গুগলের সার্চে গিয়ে মনের নানান কৌতূহল মেটাতে পারি। তাই এখন আর বলার অবকাশ নেই আমরা মাইলের পর মাইল গমনের মাধ্যমে পত্রিকা, রেডিও ও টেলিভিশন দেখতাম।হাতের মুঠোর যন্ত্রটিকে ইঙ্গিতের মাধ্যমে টেলিভিশন কিংবা শত পত্রিকার পাতা চোখের সামনে এসে উপস্থিত হয়।
আজ এই লেখার উদ্দেশ্য কিভাবে তথ্য পেতে পারি তা নয়,লেখার চেষ্টায় কলমের বিচরণ করছি’প্রচার,প্রসার আর অপ্রচার’ নিয়ে সামান্য চিন্তার বিষয় উপস্থাপন করতে।
তাহলে শুনি মানসের চিন্তিত কথামালায় কি বলছে এই নিয়ে।
প্রচার:
আমি মাঝেসাঝে একটু-আধটু শুনতে পেরেছি ‘নিজের ঢোল নাকি নিজেকে পেটাতে হয়’ তার অর্থ দাড়ায় আপনার ভালোত্বের বিষয়টি অন্যদের নজরে আসার জন্য বলতে বা লিখতে হয়।যাতে করে তারা আপনার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে।
তাই আমরা ইনিয়েবিনিয়ে রয়েসয়ে নিজেদের কথা সবসময় বলার চেষ্টা করি।
এই জানান দেওয়ার জন্য যে প্রত্যয়ের সূচনা ঘটে তাকে আমরা প্রচার বলতে পারি,
ধরুন আপনি বিদেশের নামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন,ভালো কথা এখন নিজের সামাজিক অবস্থান পাকাপোক্ত করার নিমিত্তে নামি-দামি পত্রিকায় বড় অক্ষরে শিরোনাম টেনে বললেন ‘অমুকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন’ এটাই প্রচার।তাই এই প্রচারকে কেন্দ্র করে আমাদের সমাজে রমরমা ব্যবসায়ের সুযোগ হয়েছে-
পণ্যের প্রচার,প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা,ব্যক্তির মত সম্বলিত প্লেকার্ডে প্রচারণা।
এই প্রচার চালাতে আমরা যেমন সেমিনারের আয়োজন করি তেমনি পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোকেও ছাড় দেয়নি।
এতেই একটি মহল ঠিকই মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
গণমাধ্যমের সঙ্গে অনেকে আঁড়ি দিয়ে নিজের নামে পত্রিকা কিংবা ইউটিউব, ফেসবুকে পেজ খুুঁলে চালাচ্ছে চমকপ্রদ প্রচার।
প্রচার,প্রচারণা চলুক তাতে আমার এতো মাথা ব্যথার কারণ নেই।
আমি বলতে চাইছি এই প্রচারে যেন আমাদের নৈতিকতা ঠিক থাকে।
প্রসার:
কথিত আছে ‘প্রচারে প্রসার’ আপনি যত বেশি নিজের ঢোল পেটাতে পারবেন আপনি তত তাড়াতাড়ি মানুষের মাঝে পরিচিত হয়ে উঠতে পারবেন।
আপনার ভালোত্বের সুনাম তখন দিকবিদিক ছড়িয়ে পড়বে।
তাই প্রচারের সাথে প্রসারের বিষয়টি জড়িত।
প্রচারের আসল উদ্দেশ্য থাকে যাতে করে মানুষের চিন্তার বিষয়টি অন্য মানুষের কাচে পৌঁছাতে পারে।
এখানে সফলতা নির্ভর করে আপনি কিভাবে প্রচারণা করছেন,এক সময় স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনের সময় নেতারা মহল্লার চায়ের দোকান গুলোতে চায়ের আড্ডা জমিয়ে নেতার গুণকীর্তন করতেন।চা প্রিয় আমুদে মানুষের মধ্যে আপনার নেতার গুণকীর্তন প্রচার হয়ে যেত এবং তাদের আলাপচারিতায় প্রসারের কাজটাও হয়ে যেত,তবে এখন চায়ের দোকানের আড্ডার সময়টা আর নেই এখন মানুষ যান্ত্রিক চাইলেও চায়ে মজিয়ে কথা শুনাতে পারবেন না।
তাই আসলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নামক একটা চমৎকার মাধ্যম যা সাহায্যে আপনি সহজে নিজেকে প্রচার করতে পারবেন।
একবার ভাইরাল হতে পারলে তো জীবন স্বার্থক।মানুষ আপনাকে পৌছিয়ে দিবে সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে।
তাই মানুষ নিজেদের চিন্তার প্রসার ঘটাতে বেছে নিয়েছে চমকপ্রদ প্রচারণার মাধ্যম গুলো।
বলেছি আগেই প্রচারে প্রসার।তাই মানুষ নিজেদের জানান দিতে নানা পাত্রে নিজের অর্থকড়ি ঢেলে প্রচার ও প্রসারতা ছড়াচ্ছে।
প্রসারতা চলুক,নিজের ভালোত্বের বিকাশ ঘটুক।
অপপ্রচার:
অপপ্রচার মানে নেতিবাচক কাজ কিংবা মিথ্যা রটানো।আমরা জানি বর্তমানে নেতিবাচক কাজেরই বেশি প্রসার হচ্ছে।
যার কারণ হলো মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর সহজ ব্যবহার।
এখন আমরা কোনো কিছুর বাছবিচার না করেই যে কোন গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছি।অপপ্রচারের মাধ্যমে নানা ভাবে আমরা মানুষের ক্ষতি করে ফেলছি,গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে দিচ্ছি।
অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে আমরা মানুষের সম্মানহানি করছি।অনেক ক্ষেত্রে মানুষ আত্মহত্যার মতো নিকৃষ্ট কাজ পর্যন্ত করে বসে অপরের অপপ্রচারের মাধ্যমে।
সমাজের কিছু খারাপ মানুষের দ্বারা অপ্রচার গুলো বেশি প্রচার হচ্ছে এবং প্রসার হয়ে মানুষের সামাজিক সংহতি নষ্ট করছে।
আমরা অপপ্রচার করতে করতে দ্বিধা করি না নেতার সম্মানহানি করতে, মানুষের মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়াতে,নারীদের নানান বিষয়টি অপপ্রচার চালাতে দেখি।
ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা এই ঘৃণিত কাজগুলো বেশি করতে পারছি, এখানে আমরা তেমন একটা বাছবিচার না করেই সবকিছু শেয়ার করে ফেলি।
তাই এইসব কাজ গুলো অপপ্রচার হিসেবে সমাজে নানান সমস্যার সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলতে চাই, ভালোত্বের প্রচার চলুক দ্বিধাহীনভাবে,প্রসারতা আসবে ভালো কাজের তাতে চিন্তার কিছু নাই।প্রসার আনতে আমরা যেন ঘৃণিত পন্থা অবলম্বন না করি সেদিকে নজর রাখতে হবে,অর্থকড়ির বিনিময়ে প্রসারতা না ঘটিয়ে চিন্তার সুষ্ঠ বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে প্রসার চলুক।
আর বলবো অপপ্রচার চালানো অপরাধের সামিল।তাই অপপ্রচার না চালিয়ে নৈতিকতার চর্চা করতে পারলে সামাজিক নানা সমস্যা বন্ধ করা সম্ভবপর হবে।
তাই আসুন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই আমরা গুজব ও অপপ্রচার চালাবো না,ভালোত্বের প্রচারে নিজেদের সামিল করবো।
লেখক: আহমেদ হানিফ; শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]