গত কয়েকমাস ধরেই পোল্ট্রি শিল্পে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও কর্পোরেটদের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক খামারিরা।
বর্তমান বাজারে যেকোনো সময়ের চেয়ে মুরগির দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও স্বস্তিতে নেই খামারিরা। খাদ্যে দামের সঙ্গে তীব্র গরম যোগ হওয়ায় ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তীব্র গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে মুরগি মরা, ডিম উৎপাদন কমা ও বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় পোল্ট্রি শিল্পে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা, লেয়ার ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দামের কারণে ক্রেতা সংকটে পড়েছেন বিক্রেতারা। দামের কারণে খুচরা দোকানেও বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মিরপুর শেওড়াপাড়ার অলি মিয়ার টেকের বাজারে মুরগি বিক্রেতা মো. রাকিব বলেন, অনেক বছর ধরেই ব্যবসা করছি। কিন্তু এত দামে কখনো মুরগি বিক্রি করতে হয়নি। ক্রেতারা আসছেন দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ কিনছেন না। আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণও কমেছে। এভাবে চললে খরচ ওঠানো কষ্ট হয়ে যাবে। তবে মুরগির খাবারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে এমনটি হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, তিন থেকে চার মাস আগে ২৫ কেজির বস্তা মুরগির খাবার ৭৫০ টাকায় কিনতাম। সেটা এখন বেড়ে ৯৫০ টাকা। যেভাবে দাম বাড়ছে এতে মুরগির দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ঢাকা জেলার প্রান্তিক খামারি নূরুল হক বলেন, ৩০ টাকা উৎপাদন খরচের ব্রয়লারের বাচ্চা ৭০ থেকে ৯০ টাকা ও লেয়ার মুরগির বাচ্চা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। অথচ, প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় ব্রয়লারের বাচ্চা ৬২ টাকা ও লেয়ার মুরগির বাচ্চা ৬৭ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আমরা সেই দামে বাচ্চা কিনতে পারি না। বাচ্চা, খাবার ও ওষুধের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়লেও আমরা লাভের মুখ দেখছি না। মুরগি ও ডিমের মুনাফা তুলে নিচ্ছেন ফড়িয়ারা।
শেওড়াপাড়ায় দোকান দোকানে ডিম সরবরাহকারী মাসুদ মিয়া বলেন, উৎপাদন কমে যাওয়া ও চাহিদা বাড়ার কারণে সপ্তাহ ব্যবধানে ১০০ ডিম প্রতি পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে ২০০ টাকা। সাতদিন আগেও ১০০ ডিম ৯৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। সেটা আজ ১১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরা বাজারে ডিমের দাম বেড়েছে; দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমেছে।
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা আলমগীর বলেন, গরমের কারণে অনেক ডিম নষ্ট হয়েছে। মুরগি মারা যাওয়ায় ডিমের উৎপাদন কম। যার কারণে বাজারে ডিমের সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়ছে।
ঈদের পর মাত্র ১০ থেকে ১২ দিনে সারা দেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্রয়লার মুরগি এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লেয়ার মুরগি। এছাড়া সোনালিসহ অন্যান্য মুরগি ৫ শতাংশ মারা যাওয়ায় সোনালি মুরগির দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার।
তিনি বলেন, একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা খামারিরা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কেনেন। সেখানে ২২০ টাকা দাম মোটেও বাড়তি বলা যাবে না। এখন বাজারে ডিম খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা এটাও যৌক্তিক দাম। সরকারের উচিত সরকার ঘোষিত দামকে সারা বছরের জন্য বাস্তবায়ন করা। বাজারের দাম বাড়লে বাজারে তদারকি হবে। বাজারের দাম কমে গেলে আপনারা দেখবেন না তা হতে পারে না। এর আগে খামারিদের ডিমের দাম ৩ টাকা কমিয়ে রেখে ডিম সিন্ডিকেট কোল্ড স্টোরেজ করে ধ্বংস করে দিয়েছে প্রান্তিক খামারিদের। ডিম সিন্ডিকেট ডিম মজুদ করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। দাম বাড়ায় খামারিরা এখন ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। তাই সরকারের উচিত সবসময়ের জন্য প্রান্তিক খামারিদের নিশ্চিত প্রফিট দেওয়া ও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির ন্যায্য মূল্যের নিশ্চিত করা। এতে করে পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে বলেও তিনি মনে করেন।