সরকারি তদারকি না থাকায় পোল্ট্রি খাতে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির বাজার থেকে মাত্র ৫২ দিনের ব্যবধানে ৯৩৬ কোটি টাকা মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অভিযোগ করা হয়েছে।
এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫শত টন। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন ১ কেজি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং কর্পোরেট কোম্পানীদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। পাইকারী পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত। ২ হাজার টনে প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাক মুনাফা ধরা হয় তবে একদিনে ৬ কোটি টাকা।
এখানে উল্লেখ্য, বড় মুরগীতে প্রতিদিন ১২ কোটি এবং বাচ্চা মুরগীতে একদিনে ৬ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে ৬২৪ কোটি টাকা হয় এবং ১ দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন ২০ লক্ষ।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রয় হয়েছে। জানুয়ারির ৩১ থেকে ২৩ মার্চ, সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা ম্যাসেজ করলেও বাচ্চা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়। তাহলে হয় ৩১২ কোটি টাকা। প্রান্তিক খামারী উৎপাদনে না থাকায় এই সুযোগে পোল্ট্রি শিল্পের পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিলো ৯৩৬ কোটি টাকা।
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
সুমন হাওলাদার বলেন, ব্রয়লার মুরগির অস্বাবাবিক দামের কারণ প্রান্তিক খামারি লস করতে করতে খামার বন্ধ করে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়েছে। ছোট ছোট খামারিদের লসের কারণ কর্পোরেট গ্রুপ গুলোর স্বেচ্ছাচারিতা পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয়, প্রান্তিক খামারি উৎপাদন করলে বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে লসে ফেলে দেয়, আবার উৎপাদনে না থাকলে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করে দেয়। পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা ১০০% উৎপাদন করে কর্পোরেট গ্রুপ তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তি ভিক্তিক খামার করেন, এতে করে বাজার তার দখলে চলে যাচ্ছে তার প্রমান বার বার বাজার সিন্ডিকেট।
তিনি বলেন, পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ এবং কর্পোরেট গ্রুপের মুরগি ডিম উৎপাদন বন্ধ করতে না পারলে কোনদিন বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ হবে না। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে উদ্বেগ নিতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সাইন্স বিভাগের প্রফেসরদের এবং পোল্ট্রি স্টোক হোল্ডারদের সমন্বয়ে পোল্ট্রি উন্নয়ন ডেভলপমেন্ট বোর্ড গঠন করে পোল্ট্রি সকল পণ্যের উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। যেমন- মুরগির বাচ্চা পোল্ট্রি ফিড ও ডিম মুরগি। অথবা কর্পোরেট গ্রুপের উপর নির্ভর না করে সরকারি হ্যাচারি ও ফিড মিল চালু করে মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড খামারিদের কাছে ন্যায্য মূল্য সরবরাহ করতে হবে। প্রাণিসম্পদের সকল কর্মকর্তা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।
কর্পোরেটদের প্রতারণার ফাঁদ ব্ল্যাংক চেক জমা নিয়ে চুক্তি ভিক্তিক মুরগি পালন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফিড ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও ব্রিডার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সাহেবের ভাষ্য মতে তাদের দখলে চুক্তি ভিক্তিক খামারের সংখ্যা ১২% তার মানে এক লক্ষ ষাট হাজার খামার থেকে উনিশ হাজার দুইশত খামার সকল কোম্পানির চুক্তি ভিক্তিক খামার। প্রান্তিক খামার বন্ধ থাকলেও চুক্তি খামার কখনো বন্ধ থাকেনা। এখন এই সুজকে চুক্তি খামারে বাচ্চা দিলেও প্রান্তিক খামারে বাচ্চা দিচ্ছে না। প্রান্তিক খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করে সকল ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা ও প্রাণিসম্পদের মাধ্যমে সকল প্রকার ভ্যাকসিন সহ সকল সুবিধা দিয়ে খামারিদের উৎপাদনে আনতে হবে ও বাজার প্রতিযোগিতায় রাখতে হবে। তা না হলে কর্পোরেটদের দখলে একচেটিয়া বাজার হয়ে পড়বে এবং সাধারণ ভোক্তারা জিম্বি হয়ে পড়বে। সকল কর্পোরেট গ্রুপ মুরগির বাচ্চা পোল্ট্রি ফিড উৎপাদন করে খামারিদের সরবরাহ করবে এবং তাদের ডিম মুরগি উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। প্রান্তিক খামারি ডিম মুরগি উৎপাদন করে বাজেরে সরবরাহ করবে এতে করে বাজার সিন্ডিকেট হওয়ার সম্বাবনা থাকবেনা। প্রাণিসম্পদের মাধ্যমে কর্পোরেট গ্রুপের সকল খামারি ও ডিলারদের ব্ল্যাংক চেকের মিথ্যা মামলা তদারকি করে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করে জিম্বি দশা থেকে মুক্ত করতে হবে। সকল প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলায় জবাব দিহিতার আওতায় আনতে হবে যাতে করে সেবার মান বাড়বে ও ডিম ও মুরগির উৎপাদন বাড়বে কর্মসংস্থান রক্ষা হবে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net