মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বড় ছেলে রফিক বিন সাঈদীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে সকাল দশটায় পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার মরদেহ নিজ জেলা পিরোজপুরে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেলা ১১টায় প্রশাসনের নির্দেশে জানাজার জন্য বলা হলে সাঈদীর ভক্তরা বাধা প্রদান করেন। তারা দাবি তোলেন, সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী পিরোজপুর না আসা পর্যন্ত জানাজা অনুষ্ঠিত হবে না। এ সময় কিছুটা হট্টোগোলের সৃষ্টি হয়।
এরপর মাসুদ সাঈদী দুপুর ১টা ১০ মিনিটে পিরোজপুরে পৌঁছালে আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন চত্বরে হাজার হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটি এম মাসুম। এরপর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, মিরেরসরাই দরবার শরিফের পীর শাহ্ সুফি আল্লামা আব্দুল মোমেন নাছেহী প্রমুখ।
এ সময় পিরোজপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফাজ্জেল হোসেন ফরিদ বলেন, সকাল ৭টার দিকে ঢাকা থেকে সাঈদীর মরদেহবাহী গাড়িটি গোপালগঞ্জ হয়ে পিরোজপুরে আসতে চাইলে গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। পরে বরিশাল হয়ে তার মরদেহবাহী গাড়িটি পিরোজপুরে আনা হয়।
তিনি আরও জানান, তার জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকে লোক আসতে থাকায় সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ ছাড়া পিরোজপুর-বাগেরহাট সড়কের পিরোজপুর পুরাতন সিও অফিস (ইউএনও) এলাকার রাস্তাসহ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা আটকে মানুষ জানাজায় অংশ নেন। বেলা ১১টার দিকে জানাজা শুরু করতে চাইলে উপস্থিত মুসল্লিদের অনুরোধে তা বন্ধ করা হয়। কারণ ওই সময় সাঈদীর তৃতীয় ছেলে সেখানে পৌঁছাননি। জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এ ছাড়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন নেতাসহ স্থানীয় বিএনপির নেতারা অংশ নেন।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা সাঈদীর শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সাঈদী নিঃসন্দেহে একজন ভালো লোক ছিলেন। তিনি বিএনপির জোটের হয়ে পিরোজপুর থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন। তার সময়ে এলাকা সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়েছে।
জানাজা নামাজের আগে সাঈদীর ছেলে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, আমার বাবাকে অন্যায়ভাবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে আমার বাবা সাঈদীর গায়ে অপরাধের কোনো কাদা লাগেনি। বাবার করে যাওয়া অসিয়ত মোতাবেক তাকে তার বড় ছেলে রফিক বিন সাঈদীর কবরের পাশে দাফন করা হয়।
প্রসঙ্গত ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আদালত। এরপর থেকে তিনি কারাবন্দি হিসেবে কাশিমপুর জেলখানায় কারাভোগ করছিলেন।