পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি সোহেলের গ্রামে পরিবারের কোটি টাকার সম্পদ

::
প্রকাশ: ২ years ago
জেএমবি সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবের গ্রামের বাড়ি

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক: 
ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভেটেশ্বর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আবু তাহেরের (৭৫) ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সোহেল তৃতীয়।

স্থানীয়রা জানান, ১৫ বছর আগেও পরিবারটির ঠিক মতো সংসার চালতো না। সেই পরিবারটি এখন ২৫-৩০ বিঘা জমির মালিক। টাকা-পয়সাও হয়েছে অনেক। তাদের চলাফেরায় আভিজাত্য দেখা যায়। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সোহেল পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন আদিতমারী উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, সোহেলের বাবা আবু তাহের এলাকায় তাহের নেতা নামেই সবার কাছে পরিচিত। সোহেলের বড় ভাই আবু সাঈদ ঢাকায় টিউশনি করেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। দুই নম্বর ভাই আব্দুস সাত্তার শাহীন ঢাকার অদূরে গাজীপুরে গ্রামো ফার্মাসিউটিক্যালস নামে একটি ওষুধ কোম্পানির মালিক ছিলেন। তিনিও সেখানে কয়েকটি মামলায় জেল খেটেছেন বলে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বোন শিরিন আক্তারের বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। ভাইদের মধ্যে সবার ছোট আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব।

তার শৈশব ও স্কুলজীবন কেটেছে আদিতমারী উপজেলার কুমড়ীরহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। আদিতমারী ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর পাড়ি জমান ঢাকায়। আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবের ১০ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর খুব কমই এসেছেন গ্রামে।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

বাড়ির কেয়ারটেকার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত ১৫ দিন আগে আবু তাহের ও তার স্ত্রী সালেহা বেগম বাড়িতে এসে দুই দিন অবস্থান করার পর চলে গেছেন। কোথায় গেছেন সে বিষয়ে জানি না। এরপর আর বাড়িতে কেউ আসেননি।

কুমড়ীরহাট বাজারে কথা হয় ভেটেশ্বর গ্রামের আহম্মদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগেও পরিবারটির দৈন্যদশা ছিল। এখন অনেক জমিজমার মালিক। তারা কীভাবে এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন সেটা বলতে পারব না। আর সেই পরিবারের ছোট ছেলে জঙ্গি এটা আমাদের কল্পনাতেও আসে না।

হাসান মালিক নামে আরেকজন বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব নামাজ-কালাম পড়ত। কারো সঙ্গে কোনো ঝামেলায় জড়াতো না। আজ সেই ছেলে পুলিশের হাত থেকে পালিয়েছে, এটা ভাবতেই গা শিউড়ে উঠছে।

কমলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি বলেন, আমার জীবদ্দশায় তাদের দেখেছি, এতো অবস্থা ছিল না। বছর পাঁচেক আগে থেকেই দেখছি তারা অবস্থাশালী হয়ে গেছে। তাছাড়াও সোহেলের বাবা একটু দেওয়ানি টাইপের ছিলেন। আর ছেলেরা ঢাকায় কি করতেন এসব গোপন রেখেছিলেন। এসব খোঁজ রাখা আমাদের সম্ভব হয়নি, মাঝখানে শোনা যাচ্ছিল তার এক ছেলে বিভিন্ন মামলায় ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছে। এর চেয়ে বেশি আমাদের জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আদিতমারী থানা পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

আদিতমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, পুলিশ গোটা আদিতমারীতে কড়া নজরদারি করছে। এছাড়াও ওর বাড়িতে নজর রাখা হয়েছে। যেন কোনোভাবেই সেখানে আশ্রয় না নিতে পারে।

আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল আলম বলেন, শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর ভূমিকা পালন করে আসছে। সে যত বড়ই জঙ্গি হোক না কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাকে ধরা পড়তেই হবে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (২০ নভেম্বর) ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবের হাজিরা ছিল। হাজিরা শেষে তাদের হাজতখানায় নেওয়ার পথে তারা পালিয়ে যান। রোববার দুপুরে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। তারা প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন ও লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।