পাতিলেবু দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, যেভাবে খাবেন

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক: 
পাতিলেবু আকারে ছোট হলেও এর রয়েছে নানা গুণ। শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী পাতিলেবু। পাতিলেবুর মধ্যে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। যা হজম শক্তি বাড়াতে, লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

পাতিলেবু মানুষের শরীরের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করে দেয়। লেবুর রসে থাকা সালিভা ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মিশ্রণ হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকী বদহজমের বিভিন্ন উপসর্গ থেকে বাঁচিয়ে শরীরকে ফিট রাখতেও সাহায্য করে এই লেবুপানি।

এ ছাড়া পাতিলেবুতে ভিটামিন সি ও প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ থাকে, যা সর্দি কাশির মতো রোগের বিরুদ্ধে ভীষণ কার্যকর। এতে আছে পটাসিয়াম, যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, এতে থাকা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড শ্বাসকষ্টের সমস্যাও কমায়।

ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ পাতিলেবু শরীরের যত্ন নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লেবুতে থাকা ফাইবার, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল শরীরের অন্দরে জন্ম নেওয়া জীবাণুর বিনাশ ঘটায়। অনেকেই জানেন না, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পাতিলেবু ওষুধের মতো কাজ করে।

রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাতিলেবুর জুড়ি মেলা ভার।

 

বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন পাতিলেবু
ডায়াবেটিস হাতের মুঠোয় রাখতে পাতিলেবু হতে পারে অন্যতম অস্ত্র। খেতে বসার আগে খেতে এক গ্লাস পানিতে পাতিলেবুর রস আর বিট লবণ মিশিয়ে খেয়ে নিন। খাবার খাওয়ার ৪৫ মিনিটের মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে এক দিন খেয়ে বন্ধ করে দিলে চলবে না। সুস্থ থাকতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারে সঙ্গে পাতিলেবু খাওয়ার অভ্যাস করুন। বিশেষত, মুসুর ডাল, শাকসব্জি দিয়ে তৈরি তরকারির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। উপকার পাবেন।

ডায়াবেটিস থাকলে খাওয়াদাওয়ায় অনেক বিধিনিষেধ চলে আসে। ইচ্ছা করলেই সব কিছু খাওয়া যায় না। বিকেলে অনেকেই তাই চিনাবাদাম খান। শর্করার মাত্রা কমাতে এই বাদাম বেশ কার্যকরী। বাড়তি সুফল পেতে চিনাবাদামের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন পাতিলেবুর রস। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।

ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসকরা প্রতিদিন সালাদ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এই সালাদে যদি দু’চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। লেবুতে উপস্থিত পটাশিয়াম এবং ভিটামিন ডায়াবেটিক রোগীর অন্যতম ওষুধ হতে পারে।

ঘন ঘন চা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে? তা হলে লিকার চায়ের সঙ্গে এক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। গ্রিন টি-র সঙ্গে লেবুর রসের যুগলবন্দি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।

 

পাতিলেবুর রসের উপকারিতা
ভিটামিন সি-র অভাবে স্কার্ভি নামক এক রোগ হয়, যার ফলে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়। লেবুর রস খেলে এই রোগের নিরাময় হয়।

লেবুর মধ্যে অ্যাসিড থাকায় তা হজমে সাহায্য করে। অন্যান্য বেশ কিছু পেটের সমস্যাতেও মহৌষধের কাজ করে লেবুর রস।

প্রতিদিন লেবুর রস খেলে শরীরের রক্ত চলাচল ভাল হয়। এতে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং দূরে থাকে অসুখ-বিসুখ।

লেবুতে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম থাকে, তাই তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। লেবুর রসের মধ্যে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী। লেবুর রস মা এবং সন্তান দু’জনের স্বাস্থ্যের জন্যই ওষুধের মতো কাজ করে।

চুল চকচকে এবং নরম রাখতে অনেকেই লেবুর রস লাগান। কারণ লেবুতে তামা আছে যা চুলের জন্য উপকারী।

লেবুর রস শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং সেই সঙ্গে রক্তচাপের সমস্যাও দূর করে।

অন্যান্য ফলের চেয়ে লেবুতে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তা ছাড়া ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামেও সমৃদ্ধ লেবু। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের জোগান হিসেবে এবং ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

চুল, ত্বক ভাল রাখা তো বটেই, পাতিলেবুর গুণাগুণ ধমনীকে ভাল রাখতে ও এর কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে পরোক্ষে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ও রক্ত চলাচলেও এর সদর্থক প্রভাব পড়ে।

শরীরে প্রবিষ্ট অনেক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি। ফুড পয়জ়নিং কিংবা ডায়েরিয়া প্রতিরোধে তাই পাতিলেবুর রস কাজে দেয়। এতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড হজমশক্তিও বাড়ায়। পেট খারাপ হলে লেবু খেতে নেই— এটি ভ্রান্ত ধারণা।

লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত হওয়ায় পাতিলেবুর রস ডায়াবেটিক রোগীদের পক্ষে উপকারী। উচ্চ রক্তচাপযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে লেবুতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ভাল কাজে দেয়। তা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও কমায়।

ভিটামিন সি পানিতে দ্রাব্য ভিটামিন, তাই পানিতে লেবু রস গুলে খেতে পারেন। আবার ভাতের পাতেও খেতে পারেন তা। কোনও দিন বাড়িতে ফল কেনা না থাকলে, মিড মর্নিং স্ন্যাকের সঙ্গে লেবুর রস খেয়ে নিতে পারেন। আবার ছানা তৈরির সময়েও পাতিলেবুর রস ব্যবহার করাই ভাল। তবে দুধ আর লেবু পরপর খাবেন না কখনওই।

চিকিৎসকের মতে, যে কোনও ফর্মে লেবু শরীরে গেলেই হল। তবে গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যেস থাকে অনেকের, যা ঠিক নয়। কারণ, গরম পানির উচ্চ তাপমাত্রায় ভিটামিন সি-এর কার্যকারিতাই নষ্ট হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু খাওয়াও উচিত নয়, এতে অ্যাসিড হতে পারে। লেবুর রস ত্বকে সরাসরি মাখার পরে সেখানে রোদ পড়লে তা ত্বককে পুড়িয়ে কালো করে দিতে পারে, র‌্যাশও বেরোতে পারে।

উজ্জ্বলতা বাড়াতে লেবুর ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন। ৪ চামচ লেবুর রস, ৬ চামচ টমেটোর রস, চন্দন বাটা নিন। চন্দন বাটা একটু বেশি করে নিন। তার সাথে লেবুর আর টমেটোর রস মেশান। মিশ্রণটা মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট মতো। তারপর ধুয়ে ফেলুন পরিষ্কার পানি দিয়ে। এটা রোজ মাখবেন না, কারণ চন্দন স্কিন ড্রাই করে দেয়।

ত্বকের মতো চুলের যত্নেও পাতিলেবু ব্যবহার করে আপনি খুশকি অনায়াসেই দূর করতে পারেন। পরিমাণমতো অলিভ অয়েল, লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে আর পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ২০ থেকে ২৫ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। দেখবেন খুশকি আস্তে আস্তে কমে যাবে।

চুল যাতে না উঠে যায়, চুলের যাতে বৃদ্ধি ভালো হয়, তার জন্য লেবুর রস ব্যবহার করুন। পরিমাণমতো নারিকেল তেল, লেবুর রস রাতে ঘুমানোর আগে মিশিয়ে চুলে আর স্ক্যাল্পে লাগান। রাতে না হলে গোসলের অন্তত তিন ঘন্টা আগে লাগান। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। দেখবেন আপনার চুল কি সুন্দরভাবে বেড়ে উঠছে। ভালো ফল পেতে এটা এক দিন অন্তর ব্যবহার করুন।

প্রতিদিন একটা করে পাতিলেবু খেলে তার উপকার যেমন অনেক, তেমনই লেবুর অতিরিক্ত ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা ভাল। যেমন, কিডনির অসুখ থাকলে শরীরে পটাসিয়াম লেভেল হাই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লেবুতে পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকায় কিডনির রোগীদের অতিরিক্ত লেবু খেতে বারণ করা হয়। ইউরিক অ্যাসিডের রোগীদের ক্ষেত্রেও লেবুর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকলে ভাল। সরাসরি লেবু খাওয়ার অভ্যেস থাকলে এক সময়ে তা দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাছাড়া খিদের মুখে শুধু লেবুর রস পেটে গেলে লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে পাচকরসে থাকা অ্যাসিড মিলে পাকস্থলীর গাত্রের ক্ষতি করতে পারে, যার জেরে স্টমাক আলসারও হতে পারে।