ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শেখ হাসিনা হলের এক ছাত্রীকে পরীক্ষার আগের রাতে হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রীরা হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) হলের প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জোহুরা মীম।
অভিযুক্তরা হলো- শেখ হাসিনা হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি (৪) ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মৃদুলা সরকার রূপা, শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি (২) ও অর্থনীতি বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সামিয়া তাসনীম স্বর্ণা, পরিসংখ্যান বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী খাদিজা আক্তার, একই বিভাগের শান্তা ইসলাম, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী ফারহানা চৌধুরী এবং অজ্ঞাতনামা একজন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় ফাতেমা তুজ জোহুরা মীমের কক্ষে (৩০৯) এসে হলের অন্য এক শিক্ষার্থী জানান, ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা ১৩-১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের হলের টিভি রুমে ডেকে পাঠিয়েছেন। মীমের পরদিন বৃহস্পতিবার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। এ কারণে যথাসময়ে টিভি রুমে উপস্থিত না হলে সেদিন রাত ১২টায় তার কক্ষে ১২তম আবর্তনের চার জন শিক্ষার্থী যান এবং ডাকানোর পরও কেন টিভি রুমে যাননি তা নিয়ে জবাবদিহি করেন। পরীক্ষা থাকায় মীম উপস্থিত হননি বলে জানান এবং তার রুমের সিনিয়রকেও (মৃদুলা সরকার রূপা) বিষয়টি আগে জানিয়েছেন বললে তারা রুমমেট সিনিয়রকেও রুমে আনেন এবং তিনিসহ বাকি চার জন উচ্চবাচ্য ও পরিবার তুলে বাজে মন্তব্য শুরু করেন।
ঝামেলা এড়িয়ে যেতে অভিযোগকারী রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পরিসংখ্যান বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার তার হাত ধরে টান মেরে দরজা বন্ধ করে দেন। পাশ থেকে অর্থনীতি বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সামিয়া তাসনীম স্বর্ণা বলেন, ‘ওরে (মীম) ধর, যেতে দিবি না। ও একটা বেয়াদব’। এরপর উপস্থিত পরিসংখ্যান বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শান্তা ইসলাম বলেন, ‘ওর সাথে ফাইজা (হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি) আর সিসিলি (শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) আপুই কথা বলবে। এমন মন্তব্যের পর সামিয়া তাসনীম বলেন, ‘আমাকে ফাইজা আপু বলেছে কথা বলতে ওর (মীম) সাথে, আমিই বলবো’।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই ঘটনার আগেও সামিয়া তাসনীম স্বর্ণা অভিযোগকারীকে রুমে ডাকিয়ে হেনস্তা করেন। রাতে ঘটনার এক পর্যায়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ১২তম আবর্তনের ফারহানা চৌধুরী বলেন, ‘এমন জুনিয়রকে চড়ানো, উষ্ঠানো উচিত’।
মোবাইল ফোনে অভিযুক্ত ফারহানা আক্তার, মৃদুলা সরকার ও সামিয়া তাসনিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ভুল বুঝাবুঝির কারণে সমস্যা হয়েছিল। প্রভোস্টের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ফাতেমা তুজ জহুরা মীম বলেন, ‘অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর প্রাধ্যক্ষ হলে এসেছিলেন এবং আমাদের দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছেন।’
অভিযোগ তুলে নেবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমার অভিযোগপত্র হল প্রভোস্ট এবং বিভাগীয় প্রধানের কাছে জমা দিয়েছি। রবি অথবা সোমবার আমি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে কথা বলবো। অভিযোগ তুলে নেওয়া কোনও চিন্তা নেই।’
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ সাহেদুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমি দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছি। দুই পক্ষেরই ভুল ছিল। তাই নির্দিষ্ট কোনও সমাধান আসেনি। তবে উভয়পক্ষই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।’
হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহেজাবীন বলেন, ‘ওইদিন রাতে আমি হলে উপস্থিত ছিলাম না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর বিষয়টি জানতে পেরেছি। যদি ছাত্রলীগের ভেতরের কেউ করে থাকে তাহলে আমরা সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।’
রুম থেকে বের করে দেওয়া ও নানা সময় ছাত্রীদের হেনস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হলে ছাত্রলীগের কিছু কট্টর বিরোধী আছে তারা এগুলো ছড়াচ্ছে। এরকম কিছুই হয়নি।’
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘বিষয়টা ঘটনা সমাধানের সময় সামনে এসেছে। সামনে যদি কেউ রুম পরিবর্তন করে বা করতে চায় তাহলে লিখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হবে।’