পঞ্চগড়ের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ধর্মাশ্রয়ী নীতি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের জন্য দায়ী।
শনিবার গণমাধ্যমে ৩০ জন বিশিষ্টজনের স্বাক্ষরিত পাঠানো বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।
পাঠকদের উদ্দ্যেশে বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
পঞ্চগড়ের আহমদ নগরে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বসতিতে হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে পরের দিন আবারও পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন ও বিক্ষুব্ধ।
পঞ্চগড়ের এই আক্রমণের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৯ সালেও এমনইভাবে আহমদিয়া সম্প্রদায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সাংবিধানিক নীতি এবং ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য না করা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
শুধু আহমদিয়া সম্প্রদায়ই নয় দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় বা ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তি-জনগোষ্ঠী একইভাবে উগ্র ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়ে আসছে; সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের আক্রমণ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। কিন্তু রাষ্ট্র এই আক্রমণ বন্ধ কিংবা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে বরাবরই নিষক্রিয় থাকছে। রাষ্ট্রের এই নিষক্রিয়তা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টিসহ বাংলাদেশকে ক্রমশ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীর জন্য ভীতিকর রাষ্ট্রে পরিণত করছে, যা জনযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতিকে কলঙ্কিত করছে।
একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের অধিক গুরুত্ব প্রদান এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থার অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসনেও নিষক্রিয় থাকা দেশে ধর্ম ও জাতিগত নিপীড়ন প্রবণতার সৃষ্টির জন্য দায়ী।
রাষ্ট্র ও রাজনীতির ধর্মাশ্রয়ী নীতি প্রতিটি প্রতিটি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের জন্য দায়ী। আহমদিয়া সম্প্রদায় কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীর উপর ইতোপূর্বে সংঘটিত নিপীড়নের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হলে স্বাধীনতার মাসে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
ঘটনা পরবর্তী সময়ে তদন্ত কমিটি গঠন ও ঘটনাস্থলে কয়েক দিনের পুলিশী পাহাড়া বসিয়ে রাষ্ট্রীয় দায় শেষ করার বিপরীতে রাষ্ট্রকে কঠোর নীতি অনুসরণ করতে হবে। সকল ধর্ম ও বিশ্বাসের মানুষের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র তথা সরকারকে ধর্মবোধের রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে কঠোরতার সাথে ধর্মীয় উগ্রতা ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে হবে।
এই বিবৃতির মাধ্যমে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে আমরা নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি জানাচ্ছি এবং দাবি করছি যে- অবিলম্বে
১. প্রতিটি সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ- এটিকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে;
২. প্রতিটি ঘটনায় সংসদীয় তদন্ত কমিশন এবং স্বাধীন গণতদন্ত কমিশন গঠনের বাধ্যবাধকতা প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়ন করতে হবে;
৩. সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনার বিচারে সকল মামলা দ্রুত বিচার আইনে এবং সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে নিস্পত্তি করতে হবে এবংএ যাবতকালে সংঘটিত সকল সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের বিচার করতে হবে; এবং
৪. পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বসতিতে হামলা ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেফতার এবং সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত সম্পাদন ও বিবৃতি প্রকাশ করতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি উল্লিখিত দাবির বাস্তবায়ন রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা, যা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশিত বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে একমাত্র সহায়ক।
বিবৃতি স্বাক্ষরকারী:
১. অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
২. পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ
৩. রাশেদা কে. চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা
৪. রামেন্দু মজুমদার, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
৫. ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
৬. অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
৭. অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
৮. ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, মহিলা পরিষদ
৯. ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সদস্য সচিব, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ
১০. এস.এম.এ সবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি
১১. খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী
১২. অ্যাডভোকেট তবারক হোসাইন, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
১৩. এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৪. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৫. রনজিৎ কুমার সাহা, সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
১৭. সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
১৮. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক জোট
১৯. পারভেজ হাসেম, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২০. ড. জোবায়দা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২১. ড. সেলু বাসিত, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী
২২. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব)
২৩. অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংগঠক, গণজাগরণ মঞ্চ
২৪. এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী
২৫. জহিরুল ইসলাম জহির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, খেলাঘর
২৬. জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, সমাজ কর্মী
২৭. অলক দাস গুপ্ত, সংস্কৃতি কর্মী
২৮. দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২৯. সেলিম রেজা, আহবায়ক, সংস্কৃতি মঞ্চ।
৩০. গৌতম শীল, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net