দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হলে আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকবে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত নিজের এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপির এককভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই। এই অর্থনীতিবিদের মতে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ১৬৬টি আসন পেতে পারে। আর বিএনপি সর্বোচ্চ ১৩৭টি আসন পেতে পারে। ‘ভোটারের মন বুঝে’ ও আগের চারটি ‘অপেক্ষাকৃত ভালো’ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে করা গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার ২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।
দীর্ঘ দুই ঘণ্টা ধরে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি এককভাবে এই গবেষণা করেছেন, এর সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
বক্তব্যের শুরুতে আবুল বারকাত বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে কোন দলের অবস্থা কেমন হতে পারে, তা জাতীয় কৌতূহলের বিষয়। গত কয়েকটি নির্বাচনের তথ্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দোদুল্যমান ভোটারদের মন বুঝতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে দলভিত্তিক সম্ভাব্য ফলাফলে উপনীত হয়েছি।’
পুরো গবেষণার ক্ষেত্রে আবুল বারকাত একটি প্রধান অনুসিদ্ধান্ত মেনে করেছেন। সেটি হলো, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক। যেখানে সব দল, প্রার্থী ও ভোটারের জন্য নির্বাচনী মাঠ হবে সমান-সমতল। ফলে গবেষণায় নির্বাচনী কারসাজি, প্রহসন, জোরজবরদস্তি, টাকাপয়সার খেল—এসব স্থান পায়নি।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ১১ কোটি ৯০ লাখ। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ভোটারই দলের অনুগত ভোটার। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আওয়ামী লীগের, ৩০ শতাংশ বিএনপির আর ১০ শতাংশ অন্যান্য দলের। আর এর বাইরের ৩০ শতাংশ ভোটার দলীয় অনুগত নন। এই দোদুল্যমান ৩০ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবেন, তা পূর্বনির্ধারিত নয়।
আ.লীগ ১৬৬, বিএনপি ১৩৭
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টি আসনের ফলাফল মোটামুটি নির্ধারিত। এগুলো দলগুলোর জন্য ‘সম্ভাব্য বিজয় নিশ্চিত’ আসন। এর মধ্যে ৭০টি আসন পাবে আওয়ামী লীগ ও ৭০টি আসন পাবে বিএনপি। বাকি ১৫টি আসন পাবে অন্যান্য দল। তবে এই আসন দিয়ে সরকার গঠন নিরূপণ হবে না। অন্য ১৪৫টি সংসদীয় আসনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করতে হবে।
দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ৫টি উপাদান প্রভাব রাখবে বলে গবেষণার ফলাফলে বলা হয়। সেগুলো হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, ২০১৪ ও ২০১৮ জাতীয় নির্বাচন, পদ্মা সেতু ও মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যে প্রথম তিনটি উপাদানের সুবিধা পাবে বিএনপি। আর পদ্মা সেতুর সুবিধা পুরোটাই পাবে আওয়ামী লীগ। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিতে জাতীয় সংহতির ইস্যু বানাতে পারলে এর সুবিধা আওয়ামী লীগ পেতে পারে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪৮ থেকে ১৬৬টি, বিএনপি ১১৯ থেকে ১৩৭টি এবং অন্যান্য দল ১৫টির মতো আসন পেতে পারে। সম্ভাব্য ফলাফলের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকার গঠনের সম্ভাবনা বেশি। আর বিএনপির পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিএনপির জোটবদ্ধ সরকার গঠনের সম্ভাবনা থাকলেও তা অনেক বেশি শর্তসাপেক্ষ।
কেন এই গবেষণা
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক এই গবেষণার উদ্দেশ্য কী জানতে চান। জবাবে আবুল বারকাত বলেন, ‘এই গবেষণা কেউ করাননি। শতভাগ ব্যক্তিগত উদ্যোগ। ছয় মাস আগে মনে হচ্ছিল, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক কিছু হবে। আমি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি, অর্থনৈতিক সমিতির গবেষণার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু গবেষণা ফলাফল তুলে ধরার আয়োজন করেছে অর্থনীতি সমিতি।’
গবেষণায় আগের যে চারটি ‘অপেক্ষাকৃত ভালো’ নির্বাচনের ফলাফলকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ১৯৯১, ১৯৯৬–এর জুন, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচন। এসব নির্বাচনের প্রসঙ্গে আবুল বারকাত বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু না হলে তো কে কত ভোট পাবে, গবেষণারই দরকার নেই। এমন নির্বাচন খুঁজেছি, যেখানে বড় দুই দল স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এসব নির্বাচন নিয়ে পরাজিত দল রাজনৈতিক কথাবার্তা বললেও হারজিত মেনে নিয়েছে।’