নির্বাচন ঘিরে সরব সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও

:: অমিতা সিনহা ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচন ঘিরে সিলেট সিটি মহানগরী এখন বেশ প্রফুল্ল। মাইকে সুরে সুরে বেজে উঠেছে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটাভুটির হরেক রকমের স্লোগান আর গান। কান ঝাঁঝালো প্রচারণায় লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুনের চমকে কোনো প্রার্থী একে অপর থেকে কম নয়। এই সারিতে পুরুষের সাথে নারী প্রার্থীরাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।

বই, জীপ, চশমা কিংবা হেলিকপ্টার প্রতিক নিয়ে গণসংযোগ, সমাবেশ অথবা মিছিলে নির্বাচন নিয়ে মোহাবিষ্ট হয়ে আছেন তারা। এসব নারী কাউন্সিলরদের প্রচারণা এবং গণসংযোগ আলাদাভাবে যেন নজর কাড়ছে।

এবার সিলেট মহানগরীর সিসিক নির্বাচনে ৪২টি ওয়ার্ড আর ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিলেট মহানগরীর নির্বাচনে তিনটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলররা পুরুষদের সাথে একই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে শুরু থেকেই। সাধারণ মানুষের মূল্যবান ভোট দ্বারা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলররা নির্বাচিত হয়।

সবকিছুতে সমান সমান থাকলেও নারী কাউন্সিলরেদর ক্ষেত্রে কিছুটা কমতি বরাবরই থাকে। নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও জনসাধারণের কাজে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না কখনো। একজন পুরুষ কাউন্সিলর যে পরিমাণ দ্বায়িত্ব দিয়ে কাজ দেওয়া হয়। অর্থবরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই পরিমাণে কোনো কিছু দেওয়া হয়না। বলা যায় ১০ভাগের ১ ভাগও দেওয়া হয় না নারী কাউন্সিলরদের। এ কারণে সিটি কর্পোরেশনে কাজের ক্ষেত্রে নারী কাউন্সিলররা বরাবরই অবহেলিত হচ্ছে। বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

নামে শুধু কাউন্সিলর চেয়ারে বসা সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। কিন্তু কর্মে নয়। তবুও এই নারীরা কাউন্সিলর প্রত্যেকবার সিসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছে।

অনেক বিজ্ঞ নারী কাউন্সিলর রয়েছে যারা একবার নন ৫বার, ৪বার, ৩বার কিংবা দুইবার কাউন্সিলর হয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন(সিসিক) নির্বাচনে। আসছে ২১জুন নির্বাচনে এবারও এর ব্যত্তিক্রম নয়।

এবারের আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বহুবার নির্বাচিত ৯ জন নারী কাউন্সিলর ফের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীতা হয়েছে। তারা যার যার প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ প্রচার প্রচারণ চালাচ্ছে। বৈষম্য ঠেকাতে এটায় তাদের প্রত্যয় বলে জানিয়েছেন প্রতিবেদককে বিজ্ঞ নারী কাউন্সিলররা।

২ নম্বর সংরক্ষিত (৪, ৫ ও ৬ ওয়ার্ড) ওয়ার্ডের প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর এডভোকেট কুলসুমা বেগম পপি পাবলিক রিঅ্যাকশনকে বলেন, আমি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দুইবার কাউন্সিলর হয়েছি। এবার নিয়ে তিনবার সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছি একই পদে।

সাধারণ পদে কাউন্সিলর আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের কার্যক্রমে পার্থক্য সম্পর্কে তিনি বলেন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের সিটি থেকে তেমন একটা কাজ দেয়না বলা যায়। তারপরেও আমরা কাজের জন্য তাগিদ দেয়। যখন কাউন্সিলর এর দায়িত্বে ছিলাম, তখন একবার শুধু কম্বল বিতরণ করেছিলাম। এরপর আমাদের কোনো কাজ বা কাজের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আসছে ২১জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে হেলিকপ্তার প্রতীক নিয়ে প্রচার- প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এই নির্বাচনে যদি বিজয়ী হয় তবে সংরক্ষিত কাউন্সিলর হয়ে বৈষম্যের প্রতিবাদে অবশ্যই মাঠে নামবো।

৩ নম্বর সংরক্ষিত (৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ড) ওয়ার্ডের প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর রেবেকা বেগম রেনু আনারস প্রতীকের লিফলেট হাতে নিয়ে গনসংযোগ করে যাচ্ছেন। এসময় প্রতিবেদককে রেবেকা বলেন, টানা দুইবার সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হয়েছি। এবার যদি বিজয়ী হয় তবে তিনবার হবো, তখন আমি চেষ্টা করবো আমার দায়িত্বে থাকা তিনটি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষকে উন্নমানের সেবা দেওয়া। যেভাবে আগে সেবা দিয়েছি জনসাধারণ মানুষকে, ঠিক সেই ভাবেই কাজ করে যাবো।

৭নম্বর সংরক্ষিত (১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড) ওয়ার্ডে নাজনীন আক্তার কণা দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর হয়েছেন। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বর্তমান কাউন্সিলর ও একই পদে প্রার্থী হয়েছেন আসছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। এই সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কণা প্রতিবেদককে বলেন, আধুনিক নগর গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার তিনটি ওয়ার্ডের উন্নয়নশীল করতে মানুষের সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া সাধারণ মানুষের যখন আমাকে প্রয়োজন মনে করে, তখন আমি ছুটে গিয়েছি তাদের সহযোগীতায়। এজন্য আমার পরিবার সব সময় পাশে ছিল। আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন(সিসিক) নির্বাচনে যদি বিজয়ী হয় তবে, পানি নিষ্কাশনের পরিকল্পিত ড্রেনেজের কাজ, এলাকায় রাস্তায় চারিদিকে গাছলাগানো, ছড়া খনন করে সুরমার সাথে সংযুক্ত করণ, ময়লা আবর্জনা দুরীকরনসহ আধুনিক ডিজিটেল নগর গড়ে তুলতে মাস্টার প্লান্ট আছে আমার। যদি নির্বাচনে বিজয়ী হই, অবশ্যই এসব কাজ বাস্তবায়ন করবো। সাধারন কাউন্সিলর পুরুষের সাথে সিটির কাজ করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমি আমার চেষ্টায় আর সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আগামীতে আরও চেলেঞ্জিং কাজ করে যাবো।

৬ নম্বর সংরক্ষিত (১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড) ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী শাহানারা বেগম তিনটি ওয়ার্ডে বই প্রতীক নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট আর দোয়া চেয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। তিনি বর্তমানেও ৬নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এর আগে তিনি ৪ বার একই পদে নির্বাচিত কাউন্সিলর হয়েছে। ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও প্যানেল মেয়র হয়ে। এছাড়া তিনি সিলেট মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থী শাহানারা বেগম প্রতিবেদককে বলেন, ২০০৩ সালে যখন সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন সেই সময় থেকে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের হয়ে আন্দোলন করেছি। মাঠেও নেমেছিলাম। সেই সময় স্থানীয় সরকারের কাছে অভিযোগও করেছিলাম সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলরদে কাজের ক্ষেত্রে বৈষম্যের জন্য। এছাড়া আমরা জনপ্রতিনিধি হয়ে এলাকার কাজ দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছি। কিন্তু বাজেটে নাকি সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলরদের জন্য কোনো আলাদা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়না বাজেটে। তাই আমাদেরকে সর্বদা বৈষম্যের মধ্যে পরতে হয়। এলাকায় কাজ করতে চাইলেও কোনোভাবে আদায় করা যায় না। এভাবেই প্রায় ১০ বছর যাবৎ কাজ বিহীন সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হয়ে আছি। এবারের আসন্ন সিটি নির্বাচনে একই পদে প্রার্থী হয়েছি একমাত্র বৈষম্য দুরীকরণের জন্য। সিসিক নির্বাচনের পর কি হয় জানি না। তবে আওয়ামীলীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আশ্বাস দিয়েছেন তিনি নির্বাচিত হলে নারী বান্ধব সিলেট সিটি কর্পোরেশন(সিসিক) গড়ে তুলবে।

আসছে ২১ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে সংরক্ষতি ১৪টি ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছে মোট ৪৭ জন। এর মধ্যে আগেও নির্বাচিত হয়েছিলেন এমন নারী কাউন্সিলর রয়েছেন ৯ জন। তারা হলেন – এডভোকেট সালমা সুলতানা, এডভোকেট কুলসুমা বেগম পপি, রেবেকা বেগম রেনু, মাসুদা সুলতানা, রুহেনা খানম, শাহানারা শানু, শাহানারা বেগম, নাজনীন আক্তার কণা ও রেবেকা আক্তার লাকী।