পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
মহামারি করোনা সর্ম্পকে চীনের বিরুদ্ধে বরাবরই তথ্য গোপনের অভিযোগ রয়েছে। এবার জানা গেল ভয়ংকর তথ্য। করোনা বিধিনিষেধ শিথিলের ২০ দিনের মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দেশটিতে।
ফাঁস হওয়া ‘সরকারি নথির’ উদ্ধৃতি দিয়ে রেডিও ফ্রি এশিয়া এমন খবর জানিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএনআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথিটি সঠিক বলে রেডিও ফ্রি এশিয়াকে জানিয়েছেন চীনের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। তিনি জানান, জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নেওয়া কেউ এটি ফাঁস করেছেন।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের ২০ মিনিটের একটি বৈঠক থেকে ওই নথি ফাঁস হয়। নথির তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বরের প্রথম ২০ দিনে দেশটির প্রায় ২৫ কোটি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এই সংখ্যা চীনের জনসংখ্যার প্রায় ১৭.৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর একদিনেই প্রায় ৩ কোটি ৭০ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়।
করোনায় চীনে দিনে ১০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং পাঁচ হাজারের বেশি মৃত্যু হতে পারে- ব্রিটিশ স্বাস্থ্যতথ্য সংস্থা এয়ারফিনিটির এমন মন্তব্যের সময়েই ফাঁস হওয়া প্রতিবেদনটি সামনে এল। ওই নথি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
এদিকে, চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের ধারণা, বেইজিংয়ে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ফলে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিচুয়ান প্রদেশ এবং রাজধানী বেইজিংয়ের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা এখন করোনায় সংক্রমিত। তবে তারা কীভাবে এ ধারণায় এসেছে তা অস্পষ্ট। কারণ চীনের সরকার এই মাসের শুরুতে পিসিআর পরীক্ষার বুথগুলোর নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়।
চীনের সাধারণ মানুষ এখন সংক্রমণ শনাক্ত করতে ‘র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট’ করছেন। এদিকে, উপসর্গহীন রোগীর দৈনিক সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।
চীনে বর্তমানে করোনার যে ঢেউ চলছে তা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির শেষ দিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাবে বলে আভাস দিয়েছেন ডেটা কনসালটেন্সি মেট্রো ডেটাটেকের প্রধান অর্থনীতিবিদ চেন কিন। তার মতে, চীনের চলমান এই করোনার ঢেউটি প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন মানুষকে সংক্রমণের জন্য দায়ী। শেনজেন, সাংহাই এবং চংকিং শহরের মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
চীনে টিকা গ্রহণের হার ৯০ শতাংশের বেশি। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বুস্টার ডোজ নেওয়া লোকের সংখ্যা ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ হলেও ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এ হার ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত হয়ে কতজন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, এ নিয়ে কোনো তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছে নেই। এ নিয়ে সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ডব্লিউএইচওর উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, গত বুধবার চীন জানিয়েছে, করোনায় তাদের দেশে কেউ মারা যায়নি। কিন্তু এ তথ্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। গত কয়েক দিনে বেইজিং ও অন্য শহরগুলোর হাসপাতাল করোনা রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। ডব্লিউএইচওর জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. মাইকেল রিয়ান বলেন, হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ব্যস্ত। তবে চীনের সরকার এটা স্বীকার করছে না।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দ্রুতই এটি মহামারি আকারে বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৩৬ জনের। শনাক্ত ৬৬ কোটি ১৩ লাখ ৩৭ হাজার। করোনায় সর্বোচ্চ ১১ লাখ ১৫ হাজার ৯১৩ মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে। ভারতে এ ভাইরাসে মারা গেছেন ৫ লাখ ৩০ হাজার ৬৯১ জন। এ ছাড়া ফ্রান্সে ১ লাখ ৬১ হাজার ১৫২, জার্মানিতে ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৮ ও ব্রাজিলে ১ লাখ ৬১ হাজার ১৫২ জনের প্রাণ গেছে।