উত্তর কোরিয়াপন্থি কমিউনিস্ট বাহিনীর হাত থেকে দেশ রক্ষায় দক্ষিণ কোরিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।
মঙ্গলবার গভীর রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ওয়াইটিএনে দেওয়া জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
যদিও পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত চিরবৈরী প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনও হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই সামরিক আইন জারি করা হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে ভাষণে কিছু জানাননি ইউন সুক-ইওল। তবে সামরিক আইন জারির পেছনে দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদের বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
আকস্মিক সামরিক আইন জারির ঘোষণায় দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে মানুষের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেশটির ইতিহাসের গোড়ার দিকে একাধিক কর্তৃত্ববাদী নেতা এই পথে হেঁটেছিলেন। তবে ১৯৮০’র দশক থেকে গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা করে দেশটি। সম্প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ওনের মানের ব্যাপক পতন ঘটেছে; যা নিয়ে চাপের মুখে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন জারির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে হোয়াইট হাউস সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল বলেছেন, মুক্ত এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামরিক আইন জারির পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া তার আর কোনও উপায় ছিল না। তিনি বলেন, বিরোধী দলগুলো সংসদীয় প্রক্রিয়া জিম্মি করে দেশকে সংকটের মাঝে ফেলে দিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমি উত্তরের কমিউনিস্ট শক্তির হুমকি থেকে মুক্ত কোরিয়ার প্রজাতন্ত্র রক্ষা, জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠনকারী ঘৃণ্য উত্তর কোরিয়াপন্থী রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিগুলোকে নির্মূল এবং স্বাধীন সাংবিধানিক সুরক্ষার জন্য সামরিক আইন ঘোষণা করছি।’’
তবে এই বিষয়ে কী ধরনের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা ভাষণে বলেননি তিনি। দক্ষিণের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ বলেছে, পার্লামেন্ট ভবনের প্রবেশপথ আটকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
দেশটির পার্লামেন্টের বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা লি জায়ে-মিউং অনলাইনে এক লাইভস্ট্রিমে বলেছেন, ‘‘সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান এবং বন্দুক ও ছুরিসহ সৈন্যরা দেশ শাসন করবেন। কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের অর্থনীতি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে। দেশের নাগরিকরা দয়া করে জাতীয় পরিষদে আসুন।’’
দেশটির শীর্ষস্থানীয় কিছু সরকারি প্রসিকিউটরকে অভিশংসন এবং সরকারি বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি প্রস্তাব সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পেয়েছে। এই প্রস্তাবে বিরোধীদের সমর্থনের পর তাদের উত্তর কোরিয়াপন্থী হিসেবে আখ্যা দিয়ে নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল।
এর আগে, সোমবার দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রীরা সরকারের বাজেট প্রস্তাব থেকে ৪ ট্রিলিয়ন ওনেরও বেশি কাঁটছাট করতে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানান। প্রেসিডেন্ট ইউন বলেছেন, বিরোধীদের এই পদক্ষেপ সরকারি প্রশাসনের প্রয়োজনীয় কার্যাবলিকে দুর্বল করে ফেলবে।
সূত্র: রয়টার্স, এএফপি।