দ্রব্যমূল্যের সংযম ও ভারসাম্য জরুরি

::
প্রকাশ: ২ years ago

সরকারকে ধন্যবাদ, গ্যাসের দাম কমানোর জন্য। স্বল্প আয়ের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলো। তবে, নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির ফলে নাকাল সাধারণ মানুষ। বিশেষতঃ স্বল্প ও নির্ধারিত আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলাসহ নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বাড়ছে। বর্তমানে সবজির বাজারেও আগুন! নিন্ম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের বাজার।

পবিত্র রমজানে রোজাদারদের সম্মানে সারাবিশ্বে যেখানে দ্রব্যমূল্যের দাম কমে, আমাদের দেশে তার উল্টো। ধনী দিনকে দিন ধনী হচ্ছে, আর অভাবি আরও অভাবি হচ্ছে। রমজানের এক সপ্তাহ আগে যেখানে একটা কলা ৫ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেই কলার দাম দশ টাকা। এভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সবকিছুরই দাম বাড়ছে। সরকার সম্প্রতি কয়েকটি নিত্য পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তা বাস্তবে কতটা মানা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। প্রশাসনের মনিটরিং আরও বাড়ানো দরকার। দব্যমূল্যের এই ঊর্দ্ধগতি সরকারকে বিব্রত করে তুলছে সাধারণ মানুষের কাছে। এজন্য সরকার ও প্রশাসনকে আরও কঠোর হস্তে নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। সহজলভ্য করতে হবে পণ্যসামগ্রী।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

বর্তমানে দেশে খাদ্যের অভাব তেমন নেই, তবে অর্থের অভাব আছে। ধরুন একজন সাধারণ চাকুরিজীবী দু’বছর আগে ২০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। তখন বাজারে যে পণ্যটা ৫ টাকায় পাওয়া যেত, তা এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা। ওদিকে গেল দুই বছরে উক্ত চাকুরিজীবী’র বেতন বেড়েছে সর্বোচ্চ ২হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ শতাংশ। কিন্তু বাজার দর বেড়েছে একশ’ থেকে দু’শ শতাংশ পর্যন্ত। তাহলে দেখা যায়, প্রকারন্তরে বাজারের হিসেবে তার বেতন কমেছে ন্যূনতম ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। এভাবে নির্ধারিত আয়ের মানুষ ও দিনমুজুর কর্মজীবী আয় ও ব্যয়ের হিসেব মিলাতে নিত্য হিমশিম খাচ্ছেন। গরিবের নিকট এখন পূর্ণিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি! কবি সুকান্তের ভাষায়- ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। অর্থাৎ বাজারে খাদ্য আছে, কিন্তু পকেটে টাকা না থাকার ফলে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া গতি নেই নিন্মআয়ের মানুষের। বর্তমানে দেশে বহুমুখী উন্নয়ন হলেও এদেশের বহুসংখ্যক মানুষই অপর্যাপ্ত আয়ের অন্তর্ভুক্ত। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষের। এ সকল মানুষের দুর্দিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে নিত্যদিনের অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য ভারসাম্যহীনতার কারণে। এসব পণ্যের অস্থিতিশীলতা সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের কাছে বাঁধাহীন মনে হলেও নিম্নআয়ের মানুষের কাছে একেবারে বিপরীত।

সমাজে ভারসাম্য নেই, নেই শিষ্টতা। নেই সাম্য ও ইনসাফ। অশিষ্ট চেতনার মলাটে অবরুদ্ধ হয়ে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্র। সভ্যতা হারিয়ে আধুনিক বর্বর রূপে জেঁকে বসছে একশ্রেনি আরেক শ্রেণির ওপর। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির ফলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। সম্প্রতি আরেক দফা বাড়লো- তেল, পেঁয়াজ ও চিনির দাম। রমজান এসেছে, সেই উপলক্ষেই বোধহয় এরূপ দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে এই যে একটা ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা, এটা কি নিম্নআয়ের মানুষ অর্থাৎ মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য যৌক্তিক? বাজারে প্রতিদিনের দরকারি জিনিসের দাম বাড়াতে উচ্চবিত্তদের সঙ্গে হয়তো ‘ভয়াবহ’ শব্দটা খাপ খায় না, তবে বর্তমানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যে চড়া মূল্য, তা যেন গেড়ে বসেছে সাধারণ মানুষের মাথার ওপর। নিত্যপণ্যের লাগামহীন এরূপ চড়া দামের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নিম্নআয়ের মানুষের অসহায়ত্ব, আরও বাড়ছে মানসিক চাপ।

সন্তানদের পড়ালেখার ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। কাগজ-খাতা, শিক্ষা সামগ্রী ও নোট-গাইড ও গ্রামারের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কী করবে সাধারণ মানুষ? কিভাবে লেখাপড়া শিখবে আমাদের সন্তানেরা! বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রের কথা বলতে গেলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবাদে খাতা এবং বই হলো অবশ্য প্রয়োজনীয় বস্তু; কিন্তু কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাতার জোগান দিতে অক্ষম নিম্নআয়ের অভিভাবকরা। কাজেই শিক্ষার্থীরা অনিশ্চিত মনোবল নিয়ে লেখাপড়ার ধাপে এগোচ্ছে যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি মারাত্মক ক্ষতির পরিচয়। কাগজের এমন চড়া দামের খপ্পরে পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে যারা বাইরে অর্থাৎ বাড়ি ছেড়ে দেশের আনাচে-কানাচে পড়াশোনায় নিয়োজিত তাদের অবস্থাটা খুবই ভয়াবহ। খাতাপত্রের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি খাদ্যমূল্যের যে লাগামহীন অবস্থা এ নিয়ে বেশ বিভৎস রকমের বিপাকে পড়ছে এসব শিক্ষার্থীরা। আগে হাতখরচের জন্য কিছু টাকা জমা থাকত মাস শেষে। কিন্তু এখনকার সময়ে যারা হল-মেসে থাকেন, মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত তারা অভিভাবকের কাছে বাড়তি কোনো টাকা চাওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না।

এদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই গ্রামে বাস করছে, বাকি ২০ শতাংশ শহুরে জীবনযাপন করছে। দেশের সিংহভাগই নিম্নমানের জীবনযাপন করছে। কেননা, গ্রামের মানুষের আর্থিক অবস্থা শহরের তুলনায় অতিমাত্রায় অনুন্নত। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজ, গরু-ছাগল পালন, কিংবা ক্ষুদ্র ব্যাবসা করে প্রতিদিনের দুমুঠো ভাত জোগায়। এমতাবস্থায়, দ্রব্যমূল্যের যে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বৃদ্ধি তাতে এসব মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। নিত্যপণ্যের এ লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রামীণ জীবনে তিনবেলা ভাত পাওয়াটাও যেন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে এখন। আর কোনো রকমে ভাতের জোগাড় হলেও সবজি ও আমিষের (মাছ-মাংস) দেখা মেলে না।

নিত্যপণ্যের ঊর্দ্ধগতি থামাতে না পারলে এবং এ অবস্থা চলমান থাকলে দেশের সাধারণ মানুষ হতাশা আর অসহায়ত্বের সাগরে ডুবে মরবে বলে আশংঙ্কা করছেন সচেতন মহল। দ্রব্যমূল্যের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রশাসনের মনিটরিং বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও মধ্যস্থতাভোগীদেরও পরিমিত মুনাফায় সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এর বিকল্প নেই।

লেখক: বিলাল হোসেন মাহিনী, নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net