ঢাকায় এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল আজ সোমবার। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর ঢাকায় এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান. এর আগে গত ২০ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
সূত্র জানায়, ঢাকার আজকের তাপমাত্রা ৫৮ বছরের রেকর্ড প্রায় ছুঁইছুঁই করছে। এর আগে ২০২৩ সালে আগের ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সে বছরের ১৬ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে, ঢাকায় ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডটি ছিল ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবশ্য ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৯৬০ সালের এপ্রিলে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৯৪৯ সাল থেকে বাংলাদেশে তাপমাত্রার উপাত্ত রেকর্ড করা শুরু হয়। সে হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৭২ সালের ১৮ মে মাসে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশে তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড:
আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এটিই এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া আজ যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ২৬ এপ্রিল ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়।
চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, এ রকম তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে আরও কয়েকদিন। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনো নেই।
জামিনুর রহমান আরও জানান, ভৌগোলিকভাবে চুয়াডাঙ্গা জেলার অবস্থান কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি। ফলে এই গ্রীষ্মকালে পুরো সময়টায় সূর্য চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর তাপ ফেলে। এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলাগুলো সমতলভূমি। যে কারণে তাপমাত্রা সহজে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাপমাত্রার হাত থেকে রক্ষা পেতে হয় প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে জলাধার ও প্রচুর গাছপালা থাকতে হবে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা খেয়াল করছি যে চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসে সাধারণত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এপ্রিলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপমাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। এ ছাড়া এ জেলায় পর্যাপ্ত জলাধার নেই। জলাধার থেকে পানি জলীয় বাষ্প আকারে ওপরে উঠে মেঘ তৈরি হয়। সে সময়ে শীতল পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু এ জেলায় সে সম্ভাবনাও নেই।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের পর এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এতে চরম গরম অনুভূত হচ্ছে। ঘরে-বাইরে কোথাও মানুষ স্বস্তি পাচ্ছেন না। সবখানেই হাঁসফাঁস অবস্থা। কৃষি শ্রমিকসহ কর্মজীবী মানুষের অবস্থা কাহিল। রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। এতে যানবাহন চলাচলেও ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে।
তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে:
এদিকে, সোমবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস বলেছে, দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অতি তীব্র তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।
যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলাসমূহের ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলাসহ বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।