দেশের ৭০% নারীর ভিটামিন ডি’র ঘাটতি

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক: 
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নয় ও বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না এমন নারীদের মধ্যেও উদ্বেগজনক হারে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।

সংস্থাটির এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭০ শতাংশ নারীর মধ্যে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পাওয়া গেছে।

রোববার (৩০ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টিসেবা (এনএনএস) ও আইসিডিডিআর,বি যৌথভাবে দ্বিতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১৯-২০ এ এসব তথ্য পাওয়া যায়। এক সেমিনারে আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ড. আলিয়া নাহিদ এ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

৫ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশু ও ১৫-৪৯ বছর বয়সী গর্ভবতী নন অথবা যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না এরকম নারীদের (নন প্রেগন্যান্ট ও নন ল্যাকটেটিং বা এনপিএনএল) ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, জিংক, ফেরিটিন, আয়োডিন ও অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা জানার জন্য বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভে ২০১৯-২০২০ পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়াও এই নারীদের ভিটামিন বি১২ এবং ফোলেট ও পরিমাপ করা হয়। দেশের আটটি বিভাগের ২৫০টি উপজেলায় এই জরিপটি পরিচালনা করেছে আইসিডিডিআর,বি।

গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভবতী নয় অথবা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না ২০ শতাংশ নারীর ভিটামিন বি১২’র অভাব ছিল এবং শুধু সাত শতাংশ নারীর স্বল্প মাত্রায় ভিটামিন এ’র ঘাটতি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এসব মহিলাদের মধ্যে জিংকের ঘাটতির পরিমাণ ৪৩ শতাংশ, ৩০ শতাংশ আয়োডিনের, ২৯ শতাংশ ফোলেটের ও ১৪ শতাংশ আয়রনের।

গবেষণায় উঠে আসে, ২০১১ থেকে ১২ সালে পরিচালিত প্রথম মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, নারীদের মধ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতির অবস্থা তিনটি সূচকে (জিংক, আয়োডিন ও ভিটামিন এ) উন্নতি হয়েছে, দুটি সূচকে (আয়রন, ফোলেট) আরও অবনতি হয়েছে ও দুটি সূচকে (ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি১২) প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমান জরিপ অনুযায়ী, ২১ শতাংশ শিশু ও ২৯ শতাংশ নারীদের (গর্ভবতী নন এবং যারা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না) বিভিন্ন মাত্রার রক্তস্বল্পতা ছিল।

সেমিনারে ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা অনুপুষ্টিকণা হলো ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান যেগুলো আমাদের শরীরে স্বল্পমাত্রায় প্রয়োজন হয়। যদিও স্বল্পমাত্রায় প্রয়োজন হয় তবুও এ অনুপুষ্টিকণাগুলো শরীর গঠনে এবং সুস্থতার ক্ষেত্রে অপরিহার্য উপাদান। অতি ক্ষুদ্র এই ভিটামিন ও খনিজ উপাদানগুলো আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় এনজাইম, হরমোনসহ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতির কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বিভিন্ন রকমের পুষ্টির অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নন অথবা যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন না এমন নারীদের এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব রয়েছে।

এতে আরও দেখা যায়, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের খনিজ পদার্থের ঘাটতির মধ্যে জিংক ৩১ শতাংশ, আয়োডিন ২০ শতাংশ এবং আয়রন ১৫ শতাংশ। আবার ভিটামিনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুদের মধ্যে ২২ শতাংশ ভিটামিন ডি এবং ৭ শতাংশ শিশুর মাঝারি মাত্রার ভিটামিন এ এর ঘাটতি ছিল।

প্রথম জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভে ২০১১-১২ এর ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, শিশুদের তিনটি সূচকের (ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি ও জিংক) জন্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতির অবস্থা উন্নত হয়েছে। কিন্তু আয়রনের ঘাটতির মাত্রা পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জরিপে প্রথমবারের মতো ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে আয়োডিনের বিষয়টি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এতে দেখা গেছে ২০ শতাংশ শিশুদের মধ্যে আয়োডিনের ঘাটতি ছিল।

সেমিনারে জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মুস্তাফিজুর রহমান কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে জরিপটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য আইসিডিডিআরবির প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ডা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে এর ঘাটতির এই ফলাফল শিশু ও নারীদের জন্য জাতীয় পুষ্টিসেবা কর্তৃক পরিচালিত সম্পূরক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

এ গবেষণার প্রধান গবেষক ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপে আইসিডিডিআর,বিকে একটি উচ্চমানের পুষ্টি গবেষণা পরিচালনায় সহযোগিতা করে জাতীয় পুষ্টি সেবা একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছে। এই গবেষণায় নতুনভাবে বের হয়ে এসেছে বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের কোন ভিটামিন এবং খনিজগুলো গুরুতর অভাব রয়েছে। যা বাংলাদেশে আগামী পঞ্চম হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামসহ অন্যান্য পুষ্টি কর্মসূচিগুলো প্রণয়ন করার জন্য নীতি-নির্ধারকদের নতুন দিকনির্দেশনা দেবে।