দেশের পরিবর্তন চাই, জনগণের ভোট নিশ্চিত করতে চাই: রেজা কিবরিয়া

::
প্রকাশ: ১ বছর আগে
একান্ত সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া

অমিতা সিনহা:
দেশকে ভালোবাসি। দেশের পরিবর্তন চাই। জনগণের ভোট নিশ্চিত করতে চাই। তাই আমি বিদেশের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দেশে এসেছি।

এক সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রতিবেদক অমিতা সিনহা।

অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়ার জন্মস্থান হবিগঞ্জ জেলায়। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সময়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র। ২০০৫সালে হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে এক জনসভা থেকে ফিরে আসার পথে গ্রেনেড হামলায় স্বীকার হয়ে প্রাণ হারান সাবেক এই অর্থমন্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুতে দেশে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেন মাতা আসমা কিবরিয়া। কিন্তু প্রতিবাদী কর্মসূচির কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় বিদেশি সংস্থা আইএমএফের চাকরি ছেড়ে পুত্র রেজা নিজ ভূমিতে এসে মায়ের সাথে এক জোট হয়ে পিতা হত্যার প্রতিবাদে সক্রিয় হয়ে উঠেন। পরবর্তিতে ২০১৮ সালে আচমকা গণফোরামের যোগ দিয়ে এ দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হয়ে যান। এক পর্যায়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন তাকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রাখেন। কিন্তু গণফোরাম দলের নানাবিদ অসঙ্গতি ও অগ্রগতির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় তিনি দেড় বছরের মাথায় পদত্যাগ করেন এবং দেশ পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে আরেক নতুন দলের ঘোষণা দেন। এটি খুব শীঘ্রই উন্মচিত হবে বলে সিলেটে সফরকালে সাময়িক এক সাক্ষাৎকারে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে রেজা প্রতিবেদককে বলেন, গণফোরামের দল ছেড়েছি নানাবিদ কারণে। আমি যখন ওই দলে ছিলাম দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার নেতাবৃন্দদের সাথে আলাপচারিতা হয়েছিল। কিন্তু ওদের সাথে কথোকথন করে বুঝা যায়, ওদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো পরিকল্পনা নেই। ২৭ বছর রাজনীতি করে ওদের নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রক্রিয়া নেই শুনে তাতেই আমার মাথা ঘুরে যায়। বলে ওদের নির্বাচনে যাওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। ওরা শুধু মিটিং করে প্রেসে প্রেস রিলিজ ও ছবি দেয়। আর কামাল হোসেন থাকলে ওরা ক্যামেরায় মাথা ঢুকায়। কোনোভাবে কামাল হোসেনের পাশে যদি মাথা ঢুকাতে পারে, তাহলে সাংবাদিকরা ছবি তুলবে। এটেই ওরা সন্তুষ্ট। আমি যে চাকরি ছেড়ে আসছি, সেটা বিদেশের লোভনীয় চাকরি ছিলো বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চাকরি ছেড়ে এসে ছবিতে মাথা ঢুকানোর রাজনীতিতে আমি নাই। সরি, আমি এটার জন্য আমার চাকরি ছাড়িনি বলেছি ওদেরকে। আমি আসছি, দেশে কাজ করার জন্য, পরিবর্তন আনার জন্য।

‘কারা এই পরিবর্তন আনতে পারবে?’- এমন প্রশ্ন নিজেই ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, সমাজের এই যুব সমাজ। সমাজের ছেলেদের সাথে কথা বলেছি। ওদের কথাবার্তা আমার পছন্দ হয়েছে। তবে বয়সের অনেক গ্যাপ আছে। কিন্তু গ্যাপতা এতো বেশি না। আমি তো ইউনিভার্সিটিতে পড়িয়েছি।ওরা আমার ছাত্র-ছাত্রীর সমবয়সী। বয়সে আরও কম। আমার ছাত্রছাত্রীরা ডিসি, এসপি হয়েছে। এ তুলনায় তারা অনেক অনেক কম বয়সি। দেশ পরিচালনায় ক্ষেত্রে শিক্ষা কতটুকু জরুরী তা তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ রেজা জানান, একজন শিক্ষিত, অর্থনীতি, বায়োলজি, গ্রাজুয়েট এর সাথে কথা বলা আর একটা ছাত্রলীগের গুন্ডা সঙ্গে কথা বলা এই দুটো সমান না। ছাত্রলীগের ছেলেটা বড় হয়েছে চাঁদাবাজি করে, ক্লাস ফাইভ-সেভেন-এইট পাশ। তারপর ওর চাঁদাবাজিতে চলে। আর আমার ছেলেরা সে ঢাকা ইউনিভার্সিটির বায়োলজির গ্রাজুয়েট। তার সাথে কথা বলা সহজ আমার জন্য। কেননা সে শিক্ষিত মানুষ। দেশের জন্য একটা কিছু করতে পারবে এবং একটা বয়স থাকে, যখন লোভ-লালসা একটু কম থাকে। কম বয়সে মানুষের আইডলোজি বেশি। এটাই আমার আদর্শ।

তার আসন্ন নতুন দলের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য দলের মধ্যে আমি সেই ধরনের নেতৃত্ব পাইনি। ডায়নামিক প্রগতিশীল যারা দেশে পরির্তন আনতে চায়। ক্ষমতায় যেতে চায় অনেকেই। কিন্তু দেশ পরিবর্তনে আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই, দেশে পরির্তনের জন্য, কিছু করার জন্য।

রাজনৈতিক অঙ্গণে রেজা কিবরিয়ার সমালোচনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলেছেন। আব্বা মারা যাওয়ার সময় আমার কাছে শেখ হাসিনা লোক পাঠিয়েছেন সাবের হোসেনকে। তিনি আমাকে বললেন, আপনি নির্বাচন করতে চান? আমি বললাম ‘না’। আমার কোনো ইন্টাররেস্ট নাই, আপনাদের সংসদ সদস্য হওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। লোকে অনেকে অনেকভাবে সমালোচনা করে যাচ্ছে। অথচ এই সব কিছুই ছিল মিথ্যা। আব্বা যখন মারা যান তখন যদি আমি স্বতন্ত্র থেকে দাঁড়াতাম ‘গরু’ মার্কা কিংবা যে কোনো মার্কা নিয়ে, আমাকে হারানোর মতো বাংলাদেশে শেখ হাসিনাও পারতো না। খালেদা জিয়াও পারতো না। আব্বার জন্য যা অনুভূতি ছিল এলাকায়, উনার ছেলে দাঁড়িয়েছে তাতেই যথেষ্ট।

শেখ হাসিনাকে না বলে দেওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পুত্র অর্থনীতিবিদ রেজা বলেন, মানুষের অপছন্দ -পছন্দ আছে। আমি যার সাথে বসবো, এক সপ্তাহ পর যদি তাকে রিজাইন করি, এটা বোধয় বুদ্বিমানের কাজ না।

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার বাবা কিছুটা মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি। উনি যখন শেখ হাসিনার দিকে তাকাতেন, দেখতেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে। শেখ হাসিনা যে দোষ-ত্রুটি নিয়ে একজন মানুষ, একজন পারসন, তা বুঝতো না। আব্বা দেখতো বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে, বঙ্গবন্দুর ছোট মেয়ে। বেশ! এতো ভালোবাসতেন বঙ্গবন্ধুকে।’’

তিনি আরও বলেন, দুঃখ একটাই যে তের বছরেও শেখ হাসিনা বাবার হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করতে চাইলো না।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net